8 w ·Translate

আমার শ্বাশুড়ি হাসি তামাশা একটুও পছন্দ করেন না। উনি সবসময় চেয়েছিলেন উনার ছেলের বউ হবে গুরুগম্ভীর চৌধুরানী, সবসময় মু"ড নিয়ে থাকবে, ধীর স্থীর হয়ে সব সামলাবে কিন্তু উনার দোয়া আল্লাহ কবুল করেননি। প্রীতম আমাকে বিয়ের আগের থেকে প্রতিদিন বলতো, "ছোঁয়া সাবধান, মায়ের সামনে না কিন্তু।"

আমি বলতাম, "আশ্চর্য এমন করো কেনো, মায়ের সামনে তোমাকে চু"মু তো খাচ্ছিনা।" প্রীতম বলতো, "তোমার যত শয়তানি, রং তামাশা সব আমরা রুমের ভেতর করবো ঠিকাছে?" আমি ডাবল মাইন্ডেড মানুষ, সরল মনে ওকে বলতাম, "শুধু এগুলাই করবো?" ও বলতো, "শা"ট আপ।"

বিয়ে হয়ে আসার পর আজকে দিয়ে তিনদিন হলো মাত্র। আমি এই তিনদিনে একবারও ফা"ল"তু কথা বলে হাসিনি। আমি সকালে উঠি, গুরুগম্ভীর সেজে বসে থাকি সারাদিন। গত তিনদিনে আমার সেন্স অব হিউমার এর ব্যবহার না হওয়ায় জং ধরে গিয়েছে।

আজকে আমার খালা শ্বাশুড়ি এসেছেন। প্রীতম বলেছে আমাকে একদম চুপ হয়ে থাকতে। আমার এই ছেলেটাকে এখন দেখতে ইচ্ছা করেনা। ওকে বললাম "তোমাকে চেঞ্জ করার কোনো ওয়ে আছে?" ও বললো, "না, নাই। বিয়ে করে ফেলছো, তিনমাসের ভেতর ডি"ভো"র্স দিওনা। অনেক টাকা দিয়ে বিয়ে করছি, কটা-দিন যেতে দাও।"

কথাটা শুনে বের হয়ে আসলাম রুম থেকে। আসার সাথে সাথেই খালা শ্বাশুড়ি আমাকে বললেন, "বাচ্চা নিবে কবে, তোমার কোলে বাবু দেখতে চাই।" মনে মনে বললাম, আমি আপাতত আপনাদের প্রীতমের কোলে থাকতে চাই।

খালা শ্বাশুড়ির সাথে গল্প করতে করতে তিনি বললেন, "তুমি অনেক লম্বা, এত লম্বা হইছো কীভাবে? আমার লামিয়ারে দেখো, ওর মায়ের মত খাটো হবে, তাইনা?"

আমি উনার ছেলেকে দেখায়ে জিজ্ঞেস করলাম, "আপনার ছেলে লামিয়ার বাবা না?" খালা রেগে গিয়ে ধ"ম"ক দিয়ে বললেন, "ও; বাবা না, তো কে বাবা?" আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, "উনি যদি বাবা হয়ে থাকেন, তাহলে মেয়ে তার বাপের মত খাটো হলেও হতে পারে।"

খালা মুখ কা"লো করে তাকায় আছেন মায়ের দিকে। এদিকে প্রীতম আমাকে ইশারা দিচ্ছে চু"প থাকতে।

আশ্চর্য, আমি তো গুরুগম্ভীর হয়েই কথাটা বললাম। এমন করে কেনো সবাই!
প্রীতম আমাকে ভেতরে নিয়ে গেলো। গিয়ে বললো, "ছোঁয়া এসব কি বলো তুমি?" আমি বললাম, "দেখো আমি গুরুগম্ভীর ছিলাম, ফা"ল"তু মে"জা"জ দেখাবা না"। ও বললো, "আচ্ছা লক্ষ্মী শুনো আমি শিখায় দিবো তোমাকে, কিভাবে কথা বলবা। তাও উল্টাপাল্টা কিছু বলোনা, অন্তত মা যে-কদিন আছে।"

আমাকে লক্ষ্মী ডাকলে আমি গলে যাই। আমি বললাম "আচ্ছা।"
খাবার টেবিলে সবাই একসাথে।

প্রীতম বলেছে কোনো কাজ তাড়াহুড়োতে করা যাবেনা। একটু নিঃশ্বাস নিয়ে কাজ করতে হবে। কেউ কিছু বললে তার দিকে একটু তাকিয়ে তারপর অল্প করে উত্তর দিতে এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে স্থীর থাকতে, এটাতে দেখতে বুদ্ধিমতী লাগবে আর এভাবে ফানি কথা বললেও নাকি গুরুগম্ভীর লাগবে। মা নাকি এমন অনেক পছন্দ করেন।

খেতে বসলাম সবাই। হঠাৎ খালা আবারও বললেন, "তোমরা বাচ্চা নিবা কবে? ম"রা"র আগে প্রীতমের বাচ্চা দেখে যাইতে পারবোনা নাকি? বউমা, আমারে বাচ্চা দেখাইবা না?"

কথাটা শুনে রা"গ হলো! কেননা এই কথা উনি এসে অনেকবার বলে ফেলেছেন।

আমি চুপ হয়ে আছি। প্রীতম ল"জ্জা ল"জ্জা হাসি দিচ্ছে। আমি গুরুগম্ভীর হয়ে বললাম, "আপনাদের ছেলেকে বলেন। ওকে ছাড়া বাচ্চা তো দিতে পারবোনা।"

কথাটা শুনে খালার গলায় খাবার আটকে গেলো। প্রীতম টাষ্কি লেগে আছে। ভাবী মুখে হাত দিয়ে হাসছে। আমি ভাবছি রা"গে"র মাথায় এ কি বলে ফেললাম! এদিকে পানি আমার কাছে। আমি অবশ্য মোটেও বিচলিত হলাম না। আমি আস্তে-ধীরে পানি নিয়ে এগোচ্ছি।

প্রীতম এসে খপ করে পানি নিয়ে খালাকে খাওয়ালো৷ মা আমাকে বকা দিয়ে বললেন,

এসব কি বৌমা? কথাবার্তার ঠিক নাই? আর পানি নিয়ে অমন করতেছিলা কেনো? তোমাদের খালার যদি কিছু হতো?

আমি জানি অল্প করে কথা বলতে হয়, এতে ভাব অন্যরকম থাকে। আমি মায়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। এরপর গম্ভীর গলায় বললাম,
-"চিল মা, খালা তো ম''রে"নি।" 😬

কথাটা শুনে খালার গলায় পানি আটকে গেলো৷ খালার ছেলে জগ হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। ভাবী হাসে। মা কটমট করছেন। গুরুগম্ভীরও কি হতে পারবোনা এখন? কি মুসিবত!

হঠাৎ প্রীতম এসে বললো, রুমে চলো কথা আছে। আমি সরল মনে ওকে বললাম, খালি কথাই বলবা? প্রীতম ছোট্ট ধ"ম"ক দিয়ে বললো,
"শাট আপ ছোঁয়া।" 🙂

>লেখাঃ Arni Shawkat (অর্নি শওকত)