পাশের বাড়ির ভাবীর জামাই দুবাই গেছেন কিছুদিন হলো। তো সহজে কথাবার্তা বলার মাধ্যম হিসেবে ইমো ইনস্টল দিয়ে দিলাম। প্রায়ই দেখি জানালা খুলে কানে হেডফোন লাগিয়ে হেসে হেসে কথা বলেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে বেশ ভালোই চলছে যোগাযোগ।
উঠোনে বসে বাড়িসুদ্ধ লোক ভাইয়ের সাথে কথা বলে। ভাবী গোয়াল ঘরে গিয়ে গরুটাকে দেখায়। গাছে আম আসছে সেগুলো দেখায়। উঠোনের পাশের মিষ্টি কুমড়ার গাছটা দেখায়। আরও হাবিজাবি। এসব দেখে অন্য মহিলারা আবার অনেক সময় এটা সেটা বলে। হিংসা হয় তাদের।
সমস্যার সৃষ্টি হলো ইমোর বিজ্ঞাপন নিয়ে। ভাবী বলে এসব কি আজেবাজে মেয়েছেলের ছবি আসে সামনে। এগুলো কি? তোমার ভাইয়ের মোবাইলেও আসে নাকি এগুলো! আমি অনেক কষ্টে বুঝাইলাম ব্যাপারটা।
সবকিছু ঠিকঠাক চলতেছিল। সেদিন দুপুরে প্রচন্ড গরম। বাড়ির সামনে গাছতলায় বসে ছিলাম। এক পিচ্চিকে দিয়ে ভাবী যাওয়ার জন্য খবর পাঠালো। তো গিয়ে দেখি ভাবী উঠোনে রোদের মধ্যে ধান নাড়তেছেন। ঘেমেঘুমে একাকার।
আমাকে দেখে মোবাইলটা হাতে ধরিয়ে বললো সাগর আমার একটা হট ছবি তুলে দাও। আমিতো টাস্কি খেয়ে অজ্ঞান হবার পালা। তোমার ভাই দুইদিন ধরে হট ছবির জন্য মাথা খাচ্ছে।
কি করব বলো দুইদিন তো রোদই ছিল না। বৃষ্টিতে কি আর গরমের ছবি দেওয়া যায়। আমি আর কিছু বলি নাই, ভাবী ধানের মধ্যে ঘেমেঘুমে দাঁড়িয়ে আছেন আমি ছবি তুলে দিয়েছি। পরে কি হয়েছে আর জানিনা। উনি আর আমার সামনে আসেন নাই। # # #
#
"তুই জানিস, তোর বাবার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল এখানেই! সেই যে পুরুষটার মায়ায় আটকে গেলাম আর বের হতে পারলাম কই?"
"যে মানুষটা স্বার্থপরের মতো তার স্ত্রী-সন্তানকে ফেলে চলে গেছে! সে কখনোই আমার বাবা হতে পারে না আম্মু!"
নিজের কণ্ঠটা আরও একটু কঠোর করে বলল কাশিশ। তার সম্পূর্ণ মুখে লেগে রয়েছে এক তীব্র রাগ বা হয়তো অভিমান! আনিকা মির্যা আর কথা বাড়ালো না এই নিয়ে। একটা দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে বলে উঠলো...
"যে দিন তুই কাউকে নিজের সমস্তটুকু দিয়ে ভালোবাসবি, সেদিন বুঝতে পারবি আম্মুর অনুভূতি..."
কাশিশের গালে নিজ্ব হাতের স্নেহের স্পর্শ রেখে বললো আনিকা মির্যা... কিন্তু তার কথা শুনে এবার কাশিশের কপালে বক্র রেখা দেখা দিল...
"তোমার মেয়ে কখনোই কাউকে ভালোবাসবে না আম্মু! কখনো না... আমিও তোমার মতো আর কষ্ট পেতে চাই না আম্মু!"
কথাগুলো বলেই কাশিশ দ্রুত পা ফেলে চলে গেল বাসার উদ্দেশ্যে... তাদের বাসা থেকে এই পার্কটা খুব বেশি হলে পাঁচ মিনিটের দূরত্ব। কাশিসের দু’চোখে একের পর এক ভেসে আসছে ছোটবেলার কথা গুলো। কারো একজনের সেই ছোট্ট কাশিশের সঙ্গে করা জানোয়ারের মতো অত্যাচারগুলো! যে মানুষটার কথা মনে উঠলেই আজও ভয়ে তার দেহ জমে যায়!
.
.
.
নিজেদের ছোট একতলা বাড়িটার রান্নাঘরে খুব দক্ষতার সঙ্গে নাস্তা বানাচ্ছে কাশিশ। তার পরনে অফিস স্যুট, মাথায় খুবই হালকা ভাবে হিজাব পেঁচানো, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা! এক কথায় ফুল ওয়ার্কিং ওমেন গেটআপে রেডি হয়ে আছে কাশিস। ঘড়িতে এখন সময় সাতটা। প্রতিদিন সে আর আনিকা মির্যা একসঙ্গে বের হয় বাসা থেকে। আনিকা মির্যাকে তার কলেজে নামিয়ে দিয়ে সে নিজে অফিসে যায়.....
"কিরে কাশিশ মা, ব্রেকফাস্ট হয়নি? আমি আসবো হেল্প করতে?"
"No need! আম্মু তুমি চেয়ারে বসো!"
নিজের দুই হাতে দুজনের প্লেটে খাবার নিয়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে আসতে আসতে বললো কাশিশ! কাশিশের কথায় আনিকা মির্যা তাকালেন নিজের মেয়ের দিকে! অফিস গেটআপ, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, মুখে কোনো ধরণের সাজ নেই! এমনকি দুই ঠোঁটে হালকাভাবে লিপবামও দেয়নি! কাশিশের দিকে তাকিয়ে আনিকা মির্যার ভেতর থেকে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস বের হলো! তার ফুলের মতো সুন্দর, কোমল মেয়েটা কেন সবসময় নিজের সৌন্দর্য লুকিয়ে রাখে? এই যে তার দুই জোড়া হ্যাজেল চোখ! যার দিকে তাকালেই তো যে কারও হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার কথা! সেটাও কেমন কালো লেন্স দিয়ে লুকিয়ে রাখে, চোখে কোনো প্রবলেম না থাকলেও মোটা ফ্রেমে ঢেকে রাখে! তার মেয়ের জীবনে কি কেউ আসবে না? যে সেই জানোয়ারটার থেকে তার মেয়েকে রক্ষা করবে, মেয়েটার জীবনে হাসির একটুকরো কারণ হবে?
______
"দেখেছো পোশাকের কী চেহারা! ছিঃ! এমনি এমনি কি আর লোকে বলে বাজে রক্ত বাজেই হয়!"
"হ্যাঁ আফা, ঠিকই বলেছেন... আবার দেখেন না কী ঢং আর ভাব দেখলে মা-মেয়ের! বাব্বা! একটা গাড়ি কিনে তো এখন আর মাটিতে পা-ই পড়ে না। কিন্তু কেমন করে গাড়ি কিনলো আমরা বুঝি না, বুঝি!"
কথাগুলো স্পষ্টভাবে আনিকা মির্যা আর কাশিশের কানে ভেসে এল। মুহূর্তেই কাশিশের গাড়ির দরজায় রাখা হাতটা থেমে গেল! তীব্র রাগে তার সাদা মুখ লাল হয়ে উঠলো! আনিকা মির্জা তাকে থামাতে চাইলেও কাশিশ থামলো না। ধীর কিন্তু দৃঢ় ভঙ্গিতে দরজাটা বন্ধ করে এগিয়ে গেল সামনে.....
"সো, ডিয়ার কুটনৈতিক সমাবেশের আন্টিরা! আপনারা কি একটু দয়া করে বলতে পারেন আমার বা আমার আম্মুর পোশাকে ঠিক কী নষ্ট আছে?"
কথাগুলো রুক্ষ কণ্ঠে বলে কাশিশ চোখ বাকিয়ে তাকালো তাদের দিকে। মহিলাদুটোর গায়ে সস্তা কাপড় জড়ানো। যার থেকে তাদের পিঠ, পেট এমনকি শরীরের অনেকটাই দৃশ্যমান! অথচ এরাই আবার তার পোশাক নিয়ে!
"আপনাদের চোখে যেহেতু প্রবলেম! তাই আমি এক্সপ্লেইন করে দিই! ভালো করে চোখ খুলে দেখে নিন আমাকে আর আমার আম্মুকে। দু’জনের পা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত সবই আবৃত! আপনাদের মতো গলির মোড়ে আধা খোলা হয়ে বসে নেই আমরা!"
"এই মেয়ে! তোমার স্পর্ধা তো কম না... বড়দের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয় জানো না?"
"আসলে কী বলুন তো, আমি বাজে মেয়ে তো তাই, আপনাদের মতো করে ভদ্র হতে চেয়েও পারছি না... যতই হোক, আমার আম্মুর শিক্ষার একটা প্রভাব রয়েছে তো! আর কী যেন বললেন তখন? গাড়ি কীভাবে কিনেছি? আমরা... আমাদের নিজ যোগ্যতায় গাড়ি কিনেছি, কারো বাপের টাকায় নয়! আপনারাও আমার মতো ‘বাজে মেয়ে’র পিছনে নিজের ‘সুশীল’ সময় নষ্ট না করে একটু কাজ করেন... হয