ইয়ং বেঙ্গল প্রসঙ্গ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিশিষ্ট ধারা প্রবর্তনে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলেন ইয়ং বেঙ্গল সদস্যরা। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে তাঁরা ছিলেন প্রচলিত ধর্মীয় সংস্কারের বিরোধী। তাঁরা নির্বিচারে কোন কিছু গ্রহণ করতেন না। তাঁদের চিন্তা ও কর্ম তখনকার (১৮৩১-১৮৫৭) বাঙালি সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। প্যারীচাঁদ মিত্রের নাম এ ক্ষেত্রে প্রথমেই উল্লেখযোগ্য। ‘টেকচাঁদ ঠাকুর’ ছদ্মনামে রচিত তাঁর আলালের ঘরের দুলাল (১৮৫৮) বাংলা ভাষায় প্রথম উপন্যাস। এতে তিনি আরবি-ফারসি-হিন্দুস্থানি মিশ্রিত সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা ব্যবহার করেন। ভাষাগত কারণেও উপন্যাসটি সমকালে এবং পরবর্তীকালে প্রচুর খ্যাতি অর্জন করে। তাঁর অন্যান্য রচনায়ও ভাষা ব্যবহারের এই স্বাতন্ত্র্য বিদ্যমান, যে কারণে বাংলা গদ্যের প্রথম যুগে ‘আলালি গদ্য’ নামে তাঁর ভাষাকে পৃথক মর্যাদা দেওয়া হয়।
প্যারীচাঁদের অনুসরণে বাংলা ভাষাকে আরও গণমুখী করেন কালীপ্রসন্ন সিংহ (১৮৪০-১৮৭০)। কলকাতা এবং তৎসংলগ্ন এলাকার মৌখিক ভাষাকে তিনি সার্থকভাবে তাঁর রচনায় প্রয়োগ করেন। তাঁর হুতোম প্যাঁচার নকশা (১৮৬২) উপন্যাসে ব্যবহূত ভাষারীতি প্যারীচাঁদের ভাষার চেয়ে মার্জিততর। এ গ্রন্থে চলিত ভাষায় সরস ব্যঙ্গবিদ্রূপের মাধ্যমে কলকাতার সমাজজীবন চিত্রিত হয়েছে। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে তাঁর ভাষা ‘হুতোমি ভাষা’ নামে পরিচিত, যা পরবর্তী শতকের গদ্যরচনায় বিশেষ প্রভাব ফেলে।
Suraiya Soha
Удалить комментарий
Вы уверены, что хотите удалить этот комментарий?