বিকাশের যুগ এ পর্বের শ্রেষ্ঠ লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪)। তিনি বাংলা গদ্যকে সর্বপ্রকার ভাব প্রকাশের উপযোগী করে তোলেন। বঙ্কিমচন্দ্র বাংলা সাহিত্য ও বাঙালি জীবনে অসামান্য প্রভাব বিস্তার করেন। তিনি তাঁর অসাধারণ প্রতিভাগুণে পন্ডিতি ও আলালি-হুতোমি রীতির মধ্যে সামঞ্জস্য স্থাপন করে সরল ও সরস গদ্যের সৃষ্টি করেন। বঙ্গদর্শন (১৮৭২) নামক সাহিত্য-বিষয়ক মাসিক পত্রিকা সম্পাদনার মাধ্যমে তিনি সাহিত্যের ইতিহাসে এক নবযুগের সূচনা করেন। সাহিত্য-সমালোচনা, ঐতিহাসিক গবেষণা, ধর্ম ও দার্শনিক আলোচনা, রাজনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক সাহিত্য, ব্যঙ্গ-সাহিত্য এর সবই তিনি প্রবর্তন করেন। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতিভাবলে যে সাহিত্যিক গোষ্ঠী গড়ে ওঠে, তাঁরাই দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর যাবৎ বাংলা সাহিত্যে আধিপত্য করেন। বাংলায় তুলনামূলক সাহিত্যসমালোচনারও তিনিই পথিকৃৎ। তবে তাঁর প্রধান পরিচয় ঔপন্যাসিক হিসেবে এবং এজন্য তিনি ‘সাহিত্যসম্রাট’ উপাধিতে ভূষিত হন। তাঁর রচিত বিখ্যাত উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুন্ডলা, কৃষ্ণকান্তের উইল, বিষবৃক্ষ, আনন্দমঠ ইত্যাদি।
এ সময়ের অন্যান্য বিশিষ্ট লেখকের মধ্যে প্রথমেই উল্লেখযোগ্য বঙ্কিমচন্দ্রের অগ্রজ সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৪-১৮৮৯)। তাঁর সার্থক সৃষ্টি পালামৌ চমৎকার এক ভ্রমণকাহিনী। তিনি উপন্যাস রচনায়ও খ্যাতি অর্জন করেন। আরেকজন গুণী লেখক হলেন রমেশচন্দ্র দত্ত (১৮৪৮-১৯০৯)। বাংলা সাহিত্যে তাঁর পরিচয় ঐতিহাসিক উপন্যাস রচয়িতা হিসেবে। উপন্যাসে তিনি বাংলার ইতিহাস ও সমাজকে তুলে ধরেন। রবীন্দ্রনাথের অগ্রজা স্বর্ণকুমারী দেবীর (১৮৫৫-১৯৩২) ছিল বিচিত্র ধরনের সাহিত্য সৃষ্টির ক্ষমতা। কবিতা ও নাট্যরচনায় দক্ষতার পরিচয় দিলেও উপন্যাস রচনায়ই তাঁর সর্বাধিক কৃতিত্ব। সমকালীন সমাজ-জীবনের আদর্শ-সংঘাতের ছায়া স্বর্ণকুমারীর সামাজিক উপন্যাসে গভীরভাবে পড়েছে। তাঁর সম্পাদিত ভারতী পত্রিকা সমকালে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে। ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৪৭-১৯১৯) ছোট-বড় সকলের অবসর বিনোদনের জন্য বিচিত্র কাহিনী সৃষ্টি করেন। তিনি চারটি উপন্যাস ও চারটি গল্পগ্রন্থ রচনা করেন; তবে উপন্যাসের তুলনায় গল্প রচনায় তাঁর সফলতা বেশি। তাঁর সমসাময়িক ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৪৯-১৯২২) ব্যঙ্গাত্মক নকশা ও উপন্যাস রচনায় সমকালীন কথাসাহিত্যে হাস্যরসের ধারা প্রবর্তন করেন। এ সময়ের আরও কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত গদ্যলেখক হচ্ছেন প্রতাপচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৫-১৯২১), শিবনাথ শাস্ত্রী (১৮৪৭-১৯১৯), চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায় (১৮৪৯-১৯১১), হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৮৫৩-১৯৩১), দামোদর মুখোপাধ্যায় (১৮৫৩-১৯০৭), শ্রীশচন্দ্র মজুমদার (১৮৬০-১৯০৮), নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত (১৮৬১-১৯৪০) প্রমুখ।
Suraiya Soha
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?