ত্বাগূত-এর পরিচয় : الطاغوت (তাগূত) শব্দটি আরবী الطغيان (তুগইয়ান) শব্দ থেকে নির্গত। যার অর্থ সীমালংঘন করা।
.
পারিভাষিক অর্থ বর্ণনায় যুজাজ (রহঃ) বলেন, كُلُّ مَا عُبِدَ مِنْ دُوْنِ اللهِ ‘আল্লাহ ব্যতীত যারই ইবাদত করা হয়, তাই ত্বাগূত’।[তাজুল আরূস মিন জাওয়াহিরিল কামূস ৩৮/৪৯৬ পৃঃ।]
.
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,الطاغوت كل ما تجاوز به العبد حده من معبود أو متبوع أو مُطَاعٍ ‘ত্বাগূত্ব হ’ল, বান্দার ঐ সকল সীমালংঘন, যা সে মা‘বূদ, অনুসরণীয় ব্যক্তি এবং আনুগত্যের অধিকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে করে থাকে’।[ ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুওয়াক্কি‘ঈন ১/৯২ পৃঃ।]
.
অর্থাৎ বান্দা যখন এক আল্লাহর ইবাদত না করে মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়, তখন সে ত্বাগূত্বের ইবাদত করে। আর বান্দা যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ বাদ দিয়ে বিভিন্ন গণক, যাদুকর, পীরপূজা, কবরপূজা এবং নির্দিষ্টভাবে কোন ব্যক্তির তাক্বলীদ বা অন্ধ অনুসরণে লিপ্ত হয়, তখন সে ত্বাগূত্বের অনুসরণ করে।
আর বান্দা যখন আল্লাহর আনুগত্য প্রত্যাখ্যানকারী নেতা-নেত্রীর ইসলাম বিরোধী আইন প্রণয়নে সন্তুষ্ট হয়, তখন সে ত্বাগূতের আনুগত্য করে। আল্লাহ তা‘আলা এই ত্বাগূতকে বর্জন করার জন্যই কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। প্রকৃত মুসলিম হ’তে হ’লে অবশ্যই ত্বাগূতকে বর্জন করতে হবে।
আগাছা দমন না করে জমিতে চারা রোপণ করা যেমন, ত্বাগূত বর্জন না করে আল্লাহর ইবাদত করাও তেমন। অনেক মূল্যবান খাদ্যে বিষ মিশিয়ে দিলে সেটা যেমন খাদ্য থাকে না, আল্লাহর ইবাদতের সাথে ত্বাগূতের ইবাদত মিশ্রিত হ’লে সেটাও ইবাদত থাকে না; বরং বাতিল হয়ে যায়। তাই যে কোন মূল্যে ত্বাগূতকে বর্জন করে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। আল্লাহ বলেন,
.
لَا إِكْرَاهَ فِيْ الدِّيْنِ قَدْ تَبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ بِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا انْفِصَامَ لَهَا وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ-
.
‘দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। নিশ্চয়ই হিদায়াত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে। অতএব যে ব্যক্তি ত্বাগূতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মযবূত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’ (বাক্বারাহ ২/২৫৬)। তিনি অন্যত্র বলেন, وَالَّذِيْنَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوْتَ أَنْ يَعْبُدُوْهَا وَأَنَابُوْا إِلَى اللهِ لَهُمُ الْبُشْرَى فَبَشِّرْ عِبَادِ- ‘আর যারা ত্বাগূতের উপাসনা পরিহার করে এবং আল্লাহ অভিমুখী হয় তাদের জন্য আছে সুসংবাদ। অতএব আমার বান্দাদেরকে সুসংবাদ দাও’ (যুমার ৩৯/১৭)।
.
- মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।
প্রধান দা‘ঈ, বাংলা বিভাগ,
আল-ফুরক্বান সেন্টার, হূরা, বাহরাইন।