15 میں ·ترجمہ کریں۔

একটা প্রেম চাই

১. গহীন অরণ্যের ভেতর থেকে ডাক

রাত গভীর। জানালার ফাঁক দিয়ে হাওয়া আসছে। শহরের কোলাহল থেমে গেছে অনেক আগেই, কিন্তু রায়হানের বুকের ভেতর একটা অদ্ভুত অস্থিরতা। মনে হচ্ছে, তার ভেতরে একটা গহীন অরণ্য আছে—অন্ধকার, নিঃসঙ্গ, অজস্র গোপন ব্যথা লুকানো। সে অরণ্যে পথ খুঁজে পাওয়া যায় না, শুধু শূন্যতা আর নীরবতা।

রায়হান তার ডায়েরিতে লিখল—
"মানুষ সবকিছু পায়, সাফল্য, অর্থ, পরিচিতি… কিন্তু আমি আজও খুঁজছি একটা প্রেম। একটা প্রেম চাই, যা সত্যিকারের হবে, যা আমার নিঃসঙ্গতার অরণ্য আলোকিত করবে।"

২. অতীতের ছায়া

রায়হান একসময় খুব হাসিখুশি ছেলে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই তাকে প্রাণবন্ত মনে করত। আড্ডায়, খেলাধুলায়, গানে—সব জায়গায় সে উপস্থিত থাকত।

সেই সময় তার জীবনে এসেছিল নীলাঞ্জনা। মেয়েটি শান্ত, মিষ্টি হাসি আর নির্ভরতার প্রতীক। একসাথে ক্লাস, লাইব্রেরি, ক্যাম্পাসের দীর্ঘ হাঁটা—সবই যেন এক অদ্ভুত সুখের ভেতর ডুবিয়ে রাখত রায়হানকে।

কিন্তু একদিন নীলাঞ্জনা বলল—
—"রায়হান, আমি দেশ ছেড়ে যাচ্ছি। পরিবার চায় আমি বিদেশে পড়াশোনা করি। হয়তো ফিরে আসব না।"

শাহসী রায়হান কিছু বলতে পারল না। শুধু চুপ করে তাকিয়ে থাকল। আর সেই দিনই তার হৃদয়ের অরণ্যে এক অদ্ভুত অন্ধকার নেমে এলো।

৩. হারানোর পর

নীলাঞ্জনার চলে যাওয়ার পর রায়হান আর আগের মতো নেই। চাকরি পেয়েছে, শহরে পরিচিতি তৈরি করেছে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে ভীষণ একা।

বন্ধুরা বলে—
—"তুই তো সফল মানুষ। এত কিছু পেয়েছিস।"

কিন্তু রায়হানের ভেতরে একটা প্রশ্ন জ্বলে—"যদি পাশে কেউ না থাকে, তবে সাফল্যের মানে কী?"

তার বুকের ভেতরের অরণ্যে প্রতিদিন প্রতিধ্বনি ওঠে—"একটা প্রেম চাই। শুধু একটা প্রেম চাই।"

৪. অরণ্যের ভেতরে এক আলো

একদিন অফিস শেষে বৃষ্টির রাতে এক ক্যাফেতে ঢুকে পড়ল রায়হান। জানালার বাইরে ঝরে পড়ছে বৃষ্টি। হঠাৎ দেখল এক মেয়ে ভিজে কাপড়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। সে ভেতরে ঢুকতেই চারপাশ যেন হঠাৎ নরম আলোয় ভরে গেল।

মেয়েটির নাম অনন্যা। ক্যাফের এক কোনায় বসে গরম কফি খেতে খেতে হেসে বলল—
—"বৃষ্টি আমাকে সবসময় ডাকে। মনে হয়, ভেতরের সব দুঃখ ধুয়ে ফেলতে পারে।"

রায়হান তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল—"হয়তো এই মেয়েটিই আমার অরণ্যের আলো।"

৫. ধীরে ধীরে

কিছুদিন পর থেকেই অনন্যার সাথে যোগাযোগ বাড়ল। অফিস শেষে কফি, বইয়ের দোকানে ঘোরাঘুরি, পার্কে বসে গল্প। অনন্যা যেন সহজ-সরল অথচ গভীর মানুষ।

রায়হান ধীরে ধীরে বুঝতে পারল—সে আবার নতুন করে বাঁচতে চাইছে। অনন্যার হাসি তার বুকের ভেতর অরণ্যের অন্ধকার ভেদ করছে।

কিন্তু ভেতরের ভয়ও থেকে গেল। নীলাঞ্জনার চলে যাওয়া তাকে ভেতরে ভেতরে দুর্বল করে দিয়েছে। সে ভাবল—
"যদি আবার হারিয়ে যায়? যদি আবার আমি একা হয়ে যাই?"

৬. সত্যের মুহূর্ত

এক সন্ধ্যায় নদীর ধারে বসে অনন্যা হঠাৎ বলল—
—"তুমি কি কখনো কাউকে খুব কাছে পেয়েছ? এমন কেউ, যার জন্য ভেতরের সব অন্ধকার দূর হয়ে গেছে?"

রায়হান চুপ করে ছিল। চোখে পানি জমল। তারপর ধীরে বলল—
—"পেয়েছিলাম। কিন্তু হারিয়েছি। আজও খুঁজছি একটা প্রেম, যেটা সত্যি হবে, যেটা আমাকে ছেড়ে যাবে না।"

অনন্যা তার হাতটা ধরে নরম স্বরে বলল—
—"তাহলে খোঁজ বন্ধ করো। কারণ হয়তো তোমার সেই খোঁজ এখানেই শেষ হয়েছে।"

৭. অরণ্য আলোকিত

সেদিনের পর রায়হানের বুকের ভেতরের অরণ্যে অদ্ভুত আলো নেমে এল। তার নিঃসঙ্গতা ভেঙে গেল। প্রতিদিন অনন্যা তার সাথে নতুন স্বপ্ন বুনল, নতুন আশার কথা বলল।

রায়হান ডায়েরিতে লিখল—
"আজ আর শুধু তোমাকে খুঁজছি না, আজ তোমাকে পেয়েছি। আমার গহীন অরণ্য আজ আলোয় ভরে গেছে। কারণ আমি পেয়েছি একটা প্রেম।"

৮. সমাপ্তি নাকি শুরু?

প্রেম হয়তো সবকিছুর সমাধান নয়। তবুও প্রেমই মানুষকে বাঁচার শক্তি দেয়। রায়হানের ভেতরের অরণ্য আর অন্ধকারে ডুবে নেই। সেখানে এখন গান বাজে, আলো ঝরে।

সে এখন বুঝতে পারে—
"একটা প্রেম চাই" মানে শুধু কাউকে পাওয়া নয়, বরং কাউকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা। আর সেই প্রেম যখন সত্যি হয়, তখন অরণ্যের ভেতরের সব পথ একসাথে আলোয় ভরে ওঠে।