31 که در ·ترجمه کردن
চন্দ্র বিজয়:

২০ জুলাই চাঁদের বুকে নীল আর্মস্ট্রং নামলেও তারা পৃথিবী থেকে যাত্রা শুরু করেন ১৬ জুলাই ১৯৬৯ অ্যাপোলো-১১ নামের রকেটে চেপে। এই অভিযানে কমান্ডার নীল আর্মস্ট্রংয়ের সহযাত্রী ছিলেন মাইকেল কলিন্স ও এডউইন অলড্রিন। অ্যাপোলো-১১ এর দু’টি অংশ ছিলো-একটি কমান্ড মডিউল, যার নাম রাখা হয়েছিলো কলাম্বিয়া। এই নামটি জুলভার্নের বিখ্যাত কল্পকাহিনী ‘ফ্রম দি আর্থ টু দি মুন’ থেকে নেয়া হয়েছিলো। অন্যদিকে লুনার মডিউল, যার নাম ছিলো ঈগল। কমান্ড মডিউল কলাম্বিয়ার পাইলট ছিলেন মাইকেল কলিন্স এবং লুনার মডিউল ঈগলের পাইলট ছিলেন এডউইন অলড্রিন। ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই কমান্ডার নীল আর্মস্ট্রংয়ের নেতৃত্বে লুনার মডিউল পাইলট এডউইন অলড্রিন এবং কমান্ড মডিউল পাইলট মাইকেল কলিন্স যখন চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন, ঠিক তখন স্থানীয় সময় সকাল ৯টা বেজে ৩২ মিনিট। অভিযানের নাম রাখা হয় অ্যাপোলো-১১।নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের চারপাশে তখন হাজার হাজার উৎসাহী মানুষের ভিড়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রকেট পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছে গেল। ততক্ষণে কেটেছে মাত্র বার মিনিট। এর পরই শুরু হলো মূল অভিযান, চাঁদের অভিমুখে যাত্রা। চারদিকে নিকষ কালো অন্ধকার ভেদ কর রকেট ছুটে চললো চাঁদের দিকে। বাইরে তখন বিশাল শূন্যতা। দীর্ঘযাত্রা শেষে ১৯ জুলাই অ্যাপোলো-১১ চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করলো। আগেই ঠিক করা ছিল চন্দ্রযানের প্রথম অংশ কমান্ড মডিউল চাঁদের কক্ষপথে থাকবে কিন্তু চাঁদের মাটিতে নামবে না। অপর অংশ লুনার মডিউল নামবে চাঁদের মাটিতে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পাখির নাম ঈগল। চাঁদের বুকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পাখি অবতরণ করছে, অনেকটা এমন ধারণা থেকেই লুনার মডিউলের নাম ঈগল রাখা হয়। ২০ জুলাই লুনার মডিউল ঈগল কলাম্বিয়া থেকে পৃথক হয়ে নীল আর্মস্ট্রং এবং এডউইন অলড্রিনকে নিয়ে চাঁদের দিকে রওনা করে। কমান্ড মডিউল কলাম্বিয়ায় থেকে যান মাইকেল কলিন্স। ঈগলের নেভিগেশন ও গাইডের কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঈগলকে চাঁদে অবতরণ করানোর দায়িত্বে ছিল।আমেরিকার স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে ঈগল থেকে প্রথমে চাঁদের বুকে পা রাখেন মিশন অধিনায়ক নীল আর্মস্ট্রং। বিভিন্ন রকম শিলা সংগ্রহ করলেন, অসংখ্য ছবি তুললেন নীল আর্মস্ট্রং। চাঁদে নামার সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর অলড্রিনও নেমে আসেন। তিনিও ছবি তোলা, শিলা সংগ্রহ ইত্যাদি করে আড়াই ঘণ্টা পার করার পর এলো ফিরে যাবার সময়। অলড্রিনই প্রথম ঈগলে প্রবেশ করেন, তাকে অনুসরণ করেন আর্মস্ট্রং। তবে ঈগলে ওঠার আগে দু’জনেই দুই ব্যাগে করে নিয়ে নেন সাড়ে একুশ কেজি ধুলো-বালি, পাথর ইত্যাদি। চাঁদের অতিথিরা চাঁদ থেকে শুধু নিয়েই আসেননি, দিয়েও এসেছেন। তার মধ্যে রয়েছে কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, আমেরিকার পতাকা, পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের মানচিত্র, একটি সিলিকন মেসেজ ডিস্ক যার মধ্যে রেকর্ড করা আছে পৃথিবীর ৭৩টি দেশের প্রধানসহ আমেরিকার কয়েক প্রেসিডেন্টের বাণী। ২৪ জুলাই ১৯৬৯, চন্দ্র বিজয়ীরা পৃথিবীতে ফিরে আসেন। ওয়েক দ্বীপ থেকে প্রায় ২৬৬০ কিলোমিটার পূর্বে সাগরে অবতরণ করেন তারা। উদ্ধারকারী জাহাজ মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস হর্নেট তাদের অবতরণ স্থল থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে ছিলো। হেলিকপ্টারের সাহায্যে তাদের ইউএসএস হর্নেটে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্য দিয়েই শেষ হয় মানুষের প্রথম চন্দ্র অভিযান। সেই বিশেষ মুহূর্ত সম্পর্কে নীল আর্মস্ট্রং স্বয়ং বলেছিলেন, ‘এটা (চাঁদে পা রাখা) একজন মানুষের জন্য ছোট্ট একটা পদক্ষেপ হলেও মানবসভ্যতার জন্য অনেক বড় একটা পদক্ষেপ।’