পেত্নীর পানসি
পুকুরটা গ্রামের এক কোণায়, ঝোপঝাড়ে ঢাকা। দিনের বেলায় দেখতে নিরীহ, কিন্তু রাত নামলেই কেমন একটা গা ছমছমে ভাব। লোকে বলে, মধ্যরাতে পুকুরে একটা ছোট পানসি নৌকা দেখা যায়, যাতে বসে থাকে সাদা শাড়ি পরা এক নারী। সে নাকি চুপচাপ পানসির দড়ি টেনে ঘোরে, কারো চোখে তাকালে নাকি মানুষ অচেতন হয়ে পড়ে। কেউ কাছে গেলে হঠাৎ করে সে মিলিয়ে যায় জলের গভীরে।
এই গল্প গ্রামে বহু বছর ধরে চলে আসছে, কিন্তু কেউ সত্যিই দেখেছে কি না, সেটা কেউ জানে না। কিন্তু হরি, গ্রামের এক যুবক, এসব কথায় বিশ্বাস করতো না। তার যুক্তির যুক্তি—“ভূত-প্রেত বলে কিছু নেই, এসব লোকের কল্পনা।”
এক রাতে সে ঠিক করলো, সে নিজেই প্রমাণ করবে এটা মিথ্যে। পিঠে একটা টর্চ নিয়ে গেলো পুকুর পাড়ে। সময় তখন রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই। পুকুরের চারপাশ নিস্তব্ধ, কেবল মাঝে মাঝে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। হঠাৎ করেই জলের উপর ভেসে উঠলো একটা পানসি। ছোট, কাঠের নৌকা। তাতে সত্যিই বসে আছে এক সাদা শাড়ি পরা নারী! মাথা নিচু, চুল খোলা, চুপচাপ বসে আছে। পানসিটা আপনাআপনি ঘুরছে।
হরির শরীরের লোম খাড়া হয়ে গেলো, তবুও সাহস করে ডাকলো, “কে ওখানে?” সাড়া নেই। আরেকবার ডাকলো, এবার পানসি থেমে গেলো। সেই নারী ধীরে ধীরে মাথা তুললো।
হরি চিৎকার দিয়ে পেছনে ছুটে পালালো, কিন্তু পা পিছলে পড়ে গেলো। শেষবারের মতো যখন তাকালো, দেখলো সেই নারীর চোখ জ্বলছে লাল রঙে—অস্বাভাবিক, আগুনের মতো জ্বলে ওঠা চোখ।
পরদিন সকালে লোকজন দেখতে পেলো, হরি পুকুর পাড়ে পড়ে আছে—চোখ দুটো স্থির, ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসি, যেন পাগলের মতো। বারবার একই কথা বলছে—“ওর চোখ ছিলো লাল… আগুনের মতো… ও হাসছিল…”
গ্রামের বয়স্ক লোকেরা বললো, আবার ফিরে এসেছে সে—পেত্নী, যে নিজের দুঃখে পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছিলো বহু বছর আগে। তার আত্মা এখন পানসিতে ঘোরে… অপেক্ষায়, কে যেন ফিরবে আবার।
#sifat10