দ্বিতীয় পর্ব : দ্য মিউল

মিউল–গ্যালাকটিক ইতিহাসের সমপর্যায়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের তুলনায় মিউল সম্বন্ধে বেশি কিছু

মিউল–গ্যালাকটিক ইতিহাসের সমপর্যায়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের তুলনায় মিউল সম্বন্ধে বেশি কিছু জানা যায়নি। যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তার বেশিরভাগই পাওয়া গেছে মিউলের প্রতিপক্ষের কাছ থেকে এবং বিশেষ করে সেই নববিবাহিত তরুণী–

 

এনসাইক্লোপেডিয়া গ্যালাকটিকা

 

১১. বর কনে

 

প্রথম দর্শনেই হেভেন পছন্দ হল না বেইটার। তার স্বামী দেখিয়ে দিল-গ্যালাক্সির প্রান্তে অসীম শূন্যে হারিয়ে যাওয়া একটা নিপ্রভ নক্ষত্র। পাতলাভাবে ছড়িয়ে থাকা নক্ষত্রের শেষ আঁক থেকে অনেক দূরে, যেখানে নিঃসঙ্গ অবস্থায় অনিয়মিত আলো বিকিরণ করছে। সব মিলিয়ে কেমন যেন হতচ্ছাড়া আর অনাকর্ষক।

 

টোরান ভালোভাবেই জানে যে এই রেড ডোয়ার্ফএ নববিবাহিত জীবন শুরু করাটা চিত্তাকর্ষক হবে না। এটা ভেবেই ঠোঁট বাঁকা করল। “আমি জানি, যে-এখানে তোমার ভালো লাগবে না। মানে ফাউণ্ডেশন থেকে এখানে এসে।”

 

“জঘন্য, টোরান। তোমাকে আমার বিয়ে করা উচিত হয়নি।”

 

এই কথায় তার স্বামীপ্রবর আঘাত পেল এবং সেটা গোপন করার আগেই তার সেই বিশেষ উষ্ণ গলায় বলল, “এবার ঠোঁট ফুলিয়ে তীর বেঁধা পাখির মতো কাতর দৃষ্টিতে তাকাও-আমার কাঁধে মাথা রাখার আগে যেভাবে তাকাতে, আর আমি তোমার চুলে হাত বুলিয়ে দেই। তুমি অন্য কিছু শুনতে চেয়েছিলে, তাই না? আশা করেছিলে আমি বলব, তুমি আমাকে যেখানে নিয়ে যাবে আমি সেখানেই সুখী হব, টোরান!’ অথবা তুমি পাশে থাকলে ইন্টারস্টেলার গহ্বরে গিয়েও ঘর বাঁধতে পারি! স্বীকার করে নাও।”

 

স্বামীর দিকে একটা আঙুল তুলল সে এবং টোরান কামড় দেওয়ার আগেই ঝট করে সরিয়ে আনল।

 

“যদি আমি হার মেনে নেই, স্বীকার করি তোমার কথাই ঠিক, তা হলে তুমি ডিনার তৈরি করবে?” বলল টোরান।

 

রাজি হয়ে মাথা নাড়ল বেইটা আর সে শুধু হাসি মুখে তাকিয়ে রইল।

 

এমনকি দ্বিতীয়বার তাকিয়েও বেইটাকে গড়পড়তা মেয়েদের মতো সুন্দরী বলা যাবে না-এটা টোরানকে স্বীকার করতেই হবে। মসৃণ চৰ্চকে কালো চুল। মুখ কিছুটা প্রশস্ত। কিন্তু মেহগনি রঙের চোখদুটো হাসছে সবসময়, ঘন ভুরু সে দুটোকে আলাদা করে রেখেছে ফর্সা মসৃণ কপাল থেকে।

 

তার জীবনবোধ দৃঢ় এবং কঠোর বাস্তবমুখী, তারপরেও হৃদয়ের এক কোণায় ধারণ করে রেখেছে ভালবাসার উষ্ণ প্রস্রবণ, খোঁচা মেরে যা কখনো বের করে আনা যাবে না। শুধু জানতে হবে সেই প্রস্রবণে পৌঁছানোর সঠিক উপায়।

 

অপ্রয়োজনেই কিছুক্ষণ কন্ট্রোলগুলো নাড়ল টোরান, তারপর বসল আয়েশ করে। আর মাত্র একটা ইন্টারস্টেলার জাম্প এবং বহু মিলিমাইক্রো পারসেক সোজা পথে এগোনোর পর ম্যানুয়ালি চালাতে হবে। চেয়ারের পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে মাথা হেলিয়ে স্টোররুমের দিকে তাকাল সে, বেইটা সেখানে অভ্যস্ত হাতে ডিনারের ব্যবস্থা করছে।

 

বেইটার প্রতি তার আচরণ অনেকটা যুদ্ধজয়ী সৈনিকের মতো-কারণ,তিন বছরের সীমাহীন হীনম্মন্যতা থেকে সে বেরিয়ে আসতে পেরেছে বিজয়ীর মতো।

 

সে একজন প্রভিন্সিয়াল-শুধু তাই নয় একজন দলত্যাগী বণিকের সন্তান। আর বেইটা খোদ ফাউণ্ডেশন-এর নাগরিক-শুধু তাই নয় হোবার ম্যালোর বংশধর।

 

এসব কারণেই অস্বস্তি বোধ করছে। হেভেনের মতো একটা পাথুরে বিশ্ব যার শহরগুলো সব পাহাড়ের গুহার ভেতর-যেগুলোকে বলা হয় কেভ সিটি-সেখানে নিয়ে আসা যথেষ্ট খারাপ। ফাউণ্ডেশন-এর প্রতি বণিকদের আক্রোস-অত্যাধুনিক নগরবাসীদের প্রতি তাদের চরম ঘৃণার মুখোমুখি তাকে দাঁড় করানোটা হচ্ছে জঘন্য।

 

কিন্তু কিছু করার নেই-সাপারের পরেই, শেষ জাম্প।

 

হেভেনকে মনে হচ্ছে টকটকে লাল আগুনের গোলা, এবং দ্বিতীয় গ্রহটার অর্ধেক মনে হচ্ছে জোড়াতালি দেওয়া আলোর বৃত্ত, কিনারা দিয়ে বায়ুমণ্ডলের আভা বেরিয়ে আসছে, বাকি অর্ধেক অন্ধকার। সামনে ঝুঁকে ভিউটেবলের দিকে তাকাল বেইটা, সেখানে মাকড়সার জালের মতো অনেক রৈখার মাঝখানে হেভেন দুই এর চমৎকার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।

 

“প্রথমে তোমার বাবার সাথে দেখা করতে চাই,” গম্ভীর গলায় বলল সে। “যদি তিনি আমাকে পছন্দ না করেন—”

 

“তা হলে,” নিরাসক্ত গলায় বলল টোরান, “তুমিই হবে প্রথম সুন্দরী মহিলা যে তার মনে এই ধারণা তৈরি করবে। একটা হাত খোয়ানোর আগে এবং গ্যালাক্সি চষে বেড়ানো থামানোর আগে বাবা-নিজেই জিজ্ঞেস করো, কানের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। এক সময় আমি মনে করতাম সব বানিয়ে বলছে। কারণ একই গল্প কখনো দ্বিতীয়বার বলার সময় ঠিক আগের মতো করে বলত না।”

 

হেভেন দুই দ্রুত তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। নিচে ভূমি বেষ্টিত সাগর মনে হচ্ছে ভারী ফিতার মতে, নিচের ধূসর বর্ণ হালকা হতে হতে একসময় হারিয়ে গেল দৃষ্টির আড়ালে, ছেঁড়াখোঁড়া মেঘের ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে চোখে পড়ছে উপকূলবর্তী পাহাড়ের চূড়া।

 

আরো কাছে এগিয়ে যাওয়াতে সাগরের ঢেউ পরিষ্কার হল, শেষ মাথায় বিলীন হয়ে গেছে দিগন্তের ওপারে, বাঁক নেওয়ার সময় ভূমি আঁকড়ে থাকা বরফের মাঠ দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল।

 

তীব্র গতি ধীরে ধীরে কমে আসার ফলে প্রবল ঝাঁকুনি সহ্য করতে হচ্ছে যাত্রীদের। দাঁতে দাঁত


Rx Munna

446 بلاگ پوسٹس

تبصرے

📲 Download our app for a better experience!