বিশ্বের ইতিহাসে দুটি ভয়াবহ বিশ্বযুদ্ধ আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যুদ্ধের পরিণতি কত ভয়ংকর হতে পারে। এই ভয়াবহতা থেকে শিক্ষা নিয়েই ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ (United Nations)—একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যার মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকারের রক্ষা, এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
---
১. শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা
জাতিসংঘের প্রধান ভূমিকা হলো বিশ্বে শান্তি বজায় রাখা।
নিরাপত্তা পরিষদ (UN Security Council) এর মাধ্যমে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানো হয়।
যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করে জাতিসংঘ।
সিরিয়া, দক্ষিণ সুদান, কঙ্গোসহ বহু দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন।
---
২. মানবাধিকার রক্ষা
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল (UNHRC) বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে গবেষণা, প্রতিবেদন ও নিন্দা জ্ঞাপন করে।
শিশু শ্রম, নারী নির্যাতন, জাতিগত নিপীড়ন—এ ধরনের সমস্যাগুলো মোকাবেলায় জাতিসংঘ ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
---
৩. দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণ
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP), UNDP, UNICEF ইত্যাদি অঙ্গসংস্থার মাধ্যমে জাতিসংঘ দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
আফ্রিকার বিভিন্ন দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চলে খাদ্য সহায়তা
শিশুদের জন্য শিক্ষা ও পুষ্টি কার্যক্রম চালু করা
এসবই জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রমের অংশ।
---
৪. পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন
IPCC, UNEP-এর মতো সংস্থার মাধ্যমে জাতিসংঘ বিশ্বকে জলবায়ু সংকট নিয়ে সচেতন করছে।
কার্বন নিঃসরণ হ্রাস
টেকসই জ্বালানি
জলবায়ু সম্মেলন (COP) আয়োজন
এসব উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছে জাতিসংঘ।
---
৫. টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs)
২০১৫ সালে গৃহীত ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) হচ্ছে জাতিসংঘের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এর লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে:
দারিদ্র্য দূরীকরণ
মানসম্মত শিক্ষা
নারী-পুরুষ সমতা
পরিচ্ছন্ন পানি ও স্যানিটেশন
এসব নিশ্চিত করা।
---
উপসংহার
জাতিসংঘ নিঃসন্দেহে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থা। যদিও কখনো কখনো সমালোচিত হয়, তবে এর অবদান মানবজাতির জন্য অপরিসীম। একবিংশ শতাব্দীতে শান্তি, মানবতা ও পরিবেশ রক্ষায় জাতিসংঘের ভূমিকা আরও জোরদার করা প্রয়োজন।