বিয়ে

বিয়ে হলো একটি মানুষের জিনিস। যা একটি পরিবারের পরিণত হয়।

শোভাদির ঘরের মেঝে ছেড়ে এই প্রথম সে নিরালির ঘরের মেঝেতে জায়গা পেয়েছে। এইঘর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, গুছিয়ে রাখার কাজ সে করেছে এতদিন কিন্তু কোনদিন এইঘরে থাকার অধিকার পায়নি। রাতারাতি তার অবস্থান উন্নত হয়ে গিয়েছে।

 

সকাল সকাল আঁখি স্নান সেরে আয়নার সামনে বসে আছে। নিরালির ঘরে। তার জন্য একটা লেহেঙ্গা আনা হয়েছে। বেশ দামী। আঁখি কোনদিন এত দামী পোশাক পরবে ভাবেনি।

'রাজবীর তোকে আরো দামী পোশাক দেবে।'

নিরালি আঁখির চুল বাঁধতে বাঁধতে বলল।

'দি, কোনো গন্ডগোল হবে না তো ?'

'আরে না। গন্ডগোল হবে কেন ? রাজবীর তোকে নিজে বিয়ে করতে চেয়েছে। রাজবীর যা বলবে সব মেনে নিবি। দেখবি সব ঠিক থাকবে।'

তারপরেও আঁখির বুক কাঁপছে। একবারও কথা না বলে তাকে বিয়ে করে নিচ্ছে। সেই মানুষ কেমন হবে কে জানে ! সবকিছু কি এতটাই সরল !

 

‘ দি , উনি আমাকে কীভাবে দেখলেন ?’

 

নিরালির হাত থেমে গেল। এটা তো সেও জানেনা। গত দুই বছর ধরে কম্পানির অবস্থা খুব খারাপ চলছে। ছমাস হলো কম্পানিতে তালা লাগিয়ে দিতে হয়েছে। ব্যাংকের কাছে পাঁচশ কোটির ঋণ। কি যে করেছে কম্পানি নিয়ে তার বাবা , নিরালি জানেও না।

 

এখন যখন রাজবীর দেবদূতের মতো সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে এসেছে, নিরালিও আগু পিছু বেশি ভাবেনি। আঁখির প্রশ্নের কী জবাব দেবে বুঝতে পারছে না।

 

‘ দেখেছে কোথাও। না হলে তোকে কেন বিয়ে করতে চাইবে ।’  

 

‘ তাও তো ঠিক ’ আঁখি মনে মনে চিন্তা করল।

 

নিরালি হাতে গলায় কানে গয়না পরিয়ে দিতে দিতে বলল- 'এগুলো তো আমার। পরে একদিন ফেরত দিয়ে যাস। তাড়াতাড়ি তোর জন্য তো কেনা যাচ্ছে না। আর ব্যবসার অবস্থা তো জানিসই। এখন কেনাও সম্ভব নয়। খালি হাতে গলায় পাঠালে রাজবীর কী মনে করবে।'

 

 

একেবারে সেজে আঁখি আম্মাজির ছবির সামনে দাঁড়াল। আজ আম্মাজির জন্যই সে এখানে এসে পৌঁছেছে। সেদিন যদি আম্মাজি তাকে রাস্তা থেকে তুলে না আনত সে হয়ত বাঁচতোই না। হাত জোড় করে আম্মাজিকে প্রণাম করল আঁখি।

বাপুজি এসে ডেকে নীচে নিয়ে গেল আঁখিকে। নিরালি সাথে যাচ্ছিল। সতীশ মিশ্রা বারণ করল নিরালিকে।

 

‘তোকে নীচে নামতে হবে না। ‘

 

 

নীচে কালো স্যুট পরে পাঁচ ছয়জন দাঁড়িয়ে আছে। একজন সোফায় বসে আছে।

আঁখি একবার সবাইকে দেখলো। এর ভিতরে রাজবীর নেই।

আঁখি রাজবীরকে মুখোমুখি দেখেনি। কিন্তু এদের কাউকেই রাজবীর মনে হচ্ছে না। তার বিয়ে হচ্ছে রেজিস্ট্রি করে। রাজবীর না এলে কী করে হবে ! আঁখি অবাক না হয়ে পারলো না।

বাপুজি তাকে সোফায় বসিয়ে দিল। বসতেই সোফায় বসা ভদ্রলোক একগুচ্ছ পেপার এগিয়ে দিল তার দিকে।  

'এই এই জায়গায় সই করে দিন।'

আঁখি বুঝলো ইনি রেজিস্ট্রার। সই করতে গিয়ে দেখলো আগেই রাজবীর সাইন করে পাঠিয়েছে। রাজবীরের না আসার রহস্য বুঝতে পারলো আঁখি। কিন্তু সেই বিষয়ে আগন্তুকরা কেউ কিছু বলল না। যেন রাজবীরের আসা না আসায় আঁখিদের মতামতের কোন গুরুত্ব নেই। আঁখির মনে হলো রাজবীর কারো মতামতের অপেক্ষা করে না। এমন একজন মানুষের সাথে তাকে সারাজীবন থাকতে হবে!

 

--------------------

 

চলবে

 

সম্পূর্ণ কাল্পনিক কাহিনি 


Tanvir Tanvir Farhan

86 Blog Postagens

Comentários