নেইমার: এক ফুটবল জাদুকরের গল্প.......
সূর্য তখনও ওঠেনি। ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরের এক কোণায় ছোট্ট একটি ঘরে জেগে উঠেছিল এক শিশু। নাম তার নেইমার। খুব বেশি কিছু ছিল না তাদের পরিবারে—ছিল না বিলাসিতা, ছিল না খ্যাতি, এমনকি ছিল না একটি পূর্ণ পেটের নিশ্চয়তা। কিন্তু ছিল একটা অদম্য স্বপ্ন—পায়ে বল নিয়ে ছুটে চলা, মাঠে নাচানো প্রতিপক্ষকে, আর একদিন ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বমঞ্চে জয়ী হওয়া।
ছোটবেলা থেকেই নেইমারের জীবন ছিল সংগ্রামে ভরা। তাঁর বাবা, নেইমার সিনিয়র নিজেও একজন ফুটবলার ছিলেন, তবে জীবনে খুব বেশি সাফল্য পাননি। কিন্তু তিনি জানতেন—ছেলেটার পায়ে জাদু আছে। তাই প্রতিদিন সকালবেলা তাকে মাঠে নিয়ে যেতেন, প্রশিক্ষণ দিতেন এবং শেখাতেন কীভাবে প্রতিকূলতা জয় করতে হয়।
স্কুল শেষ করে নেইমার ছুটে যেত ফুটবল একাডেমিতে। ছেঁড়া জুতো, গালভরা স্বপ্ন আর দুই চোখে একটাই লক্ষ্য—একদিন সে সবার প্রিয় "নেইমার" হয়ে উঠবে।
উঠে আসার শুরু.......
১১ বছর বয়সে নেইমার সান্তোস ফুটবল ক্লাব-এর নজরে পড়ে। শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়। সেখানে নেইমারের প্রতিভা অল্প দিনেই চমকে দেয় কোচদের। তাঁর ড্রিবলিং, গতি আর বলের উপর নিয়ন্ত্রণ ছিল অবিশ্বাস্য। কিশোর বয়সেই তাঁর খেলা দেখে অনেকে বলেছিল, "এ ছেলেটা একদিন পেলের উত্তরসূরি হবে।"
১৬ বছর বয়সেই নেইমার সান্তোসের সিনিয়র দলে জায়গা পেয়ে যান। ২০১০ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি ব্রাজিলিয়ান লিগে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। তখন থেকেই ইউরোপের বড় ক্লাবগুলো তাঁর পেছনে ছুটতে শুরু করে।
স্বপ্নপূরণ: বার্সেলোনায়.......
২০১৩ সালে নেইমার যোগ দেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্লাব এফসি বার্সেলোনা-তে। লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজের সাথে গড়ে তোলেন ঐতিহাসিক ‘MSN’ ত্রয়ী। সেই সময়টায় বার্সার আক্রমণভাগ ছিল যেন এক কবিতা—মেসির নিখুঁত পাস, নেইমারের জাদুকরী ড্রিবলিং আর সুয়ারেজের তীক্ষ্ণ ফিনিশিং।
২০১৫ সালে তারা একসাথে বার্সেলোনাকে এনে দেন ট্রেবল—লা লিগা, কোপা দেল রে এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। সেই মৌসুমে নেইমার যেন বার্সেলোনার হৃদয় হয়ে উঠেছিলেন।
আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু: প্যারিস.....
২০১৭ সালে একটি খবর পৃথিবীকে নাড়িয়ে দেয়। নেইমার ২২২ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফিতে বার্সেলোনা ছেড়ে যোগ দেন প্যারিস সাঁ জার্মেইন (PSG)-এ। এটি ছিল ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্রান্সফার।
অনেকে বলেছিলেন, "পেছনে টাকা, সামনে অহংকার—নেইমার ভুল করছে।" কিন্তু নেইমারের ভিন্ন লক্ষ্য ছিল। সে চেয়েছিল নিজেকে প্রমাণ করতে, একা একটি দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে।
PSG-তে গিয়ে নেইমার নিজের জাত আবারো চিনিয়ে দেন। ফরাসি লিগের শিরোপা জেতেন, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালেও পৌঁছান। তবে ট্রফি অধরা থেকে যায়।
আঘাত, কষ্ট....
নেইমারের জীবন কেবল আলোয় ভরা ছিল না। বহুবার চোটে পড়েছেন, মাঠের বাইরে ছিলেন দীর্ঘদিন। ২০১8 ও 2022 বিশ্বকাপে চোটের কারণে তাঁর খেলা সীমিত হয়ে পড়ে। সমালোচকরা বলতেন, "সে কাচের মতো ভঙ্গুর", কেউ বলত, "তার মধ্যে নেতৃত্বের অভাব"।
কিন্তু নেইমার কখনো থেমে থাকেননি। প্রতিবারই ফিরে এসেছেন আরও দৃঢ় হয়ে, আরও ক্ষুধার্ত হয়ে। মাঠে নেমে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি শুধু একজন তারকা নন—একজন যোদ্ধাও।
ব্রাজিলের হৃদয়.....
জাতীয় দলে নেইমারের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ব্রাজিলের ইতিহাসে অন্যতম সর্বোচ্চ গোলদাতা। ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে ব্রাজিলকে এনে দেন বহু কাঙ্ক্ষিত স্বর্ণপদক। সেই মুহূর্তে নেইমার কাঁদছিলেন—কাঁদছিলেন আনন্দে, তৃপ্তিতে, ভালোবাসায়।
তার খেলা যেমন মানুষকে মুগ্ধ করে, তেমনি মাঠের বাইরের হাসি, কৌতুক, নাচ আর জীবনভর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও তাকে করেছে আলাদা।
অন্য নেইমার
অনেকে নেইমারকে শুধু একজন ফুটবলার হিসেবে চেনে, কিন্তু তিনি তার থেকেও বেশি। তিনি একজন দানবীর, সামাজিক কার্যক্রমে জড়িত, এবং শিশুদের সাহায্য করার জন্য নিজ নামে ফাউন্ডেশন চালান।
তিনি বলেন, “আমি যেখান থেকে এসেছি, সেখানে অনেকে স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে। আমি শুধু ফুটবল খেলি না, আমি স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখি।”
শেষ কথা
নেইমার একজন পরিপূর্ণ তারকা নন—তিনি মানুষ, ভুল করেন, চোট পান, আবার ফিরে আসেন। তাঁর জীবনে আছে আলো আর অন্ধকার দুটোই। কিন্তু তাঁর যাত্রা আমাদের শিখিয়ে দেয়—স্বপ্ন দেখো, হাল ছেড়ো না, কষ্ট করো, আর প্রমাণ করো, তুমি পারো।
জুতো ছেঁড়া ছেলেটি আজ কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। সে ব্রাজিলের মাঠ থেকে বিশ্বমঞ্চে উঠে এসেছে শুধুমাত্র প্রতিভা আর অধ্যবসায়ের জোরে।
নেইমারের গল্প তাই কেবল ফুটবল প্রেমীদের জন্য নয়, সব স্বপ্ন দেখাদের জন্য, যারা সীমাবদ্ধতাকে হার মানাতে চায়।
#বাস্তবতা
কফিন বার্থ অত্যন্ত বিরল ঘটনা। কোনো নারী গর্ভবতী অবস্থায় মারা গেলে মৃত্যুর প্রায় ৪৮-৭২ ঘন্টার মধ্যে তার দেহে পচন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় গর্ভস্থ সন্তান জরায়ু থেকে বেরিয়ে আসে। জার্মান চিকিৎসকরা এর নাম দেন কফিন বার্থ। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘পোস্টমর্টেম ফিটাল এক্সট্রুশান’ বলে। ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝের সময়ের কিছু সমাধি খুঁড়ে কফিন বার্থের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
কফিন বার্থের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক জন্মদান প্রক্রিয়ার মতোই শিশু মায়ের গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে। কিন্তু জীবিত গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে যেমন জরায়ু ক্রমাগত সংকোচনের ফলে বাচ্চা প্রসব হয়, কফিন বার্থের ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব নয়। কারণ মৃত্যুর পর শরীরের সব অঙ্গের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং জরায়ুর সংকোচনের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনও নিঃসরণ হয়না। তাই, কফিন বার্থকে পচনক্রিয়ার ফলাফল হিসেবে ধরা যায়। সাইন্স বী
গর্ভবতী নারীর মৃত্যুর সময় যদি গর্ভের শিশুর মাথা জরায়ুর নিচের দিকে থাকে তবে কফিন বার্থের সম্ভাবনা বেশি। মানুষ মারা যাওয়ার পরই শুরু হয় পচন প্রাক্রিয়া, এই সময় মানুষের পাকস্থলী ও অন্ত্রের মধ্যে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া গ্যাস উৎপাদন করে। এই গ্যাসের জন্য মৃতদেহ ফুলে যায় এবং পেটে গ্যাসের চাপ বাড়ে। এই গ্যাস এক সময় জরায়ুতে চাপ দেয়, তখন মৃত মায়ের দেহ থেকে শিশু বেরিয়ে আসে। সাইন্স বী
এক্ষেত্রে সমাধি খনন করার পর শিশুর কঙ্কালটি মায়ের কঙ্কালের দুই পায়ের মাঝে, মাথা নিচের দিকে ও পা ওপরের শ্রোণীর হাড়ের দিকে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়।