উত্তরের সীমান্তের পাহাড়ি ঘাঁটিতে নিঃস্তব্ধ এক শীতের রাত। তুষার পড়ছে টুপটাপ, বাতাসে কেবল হিম আর নিঃসঙ্গতা। সৈনিক আরিফ একা পাহারা দিচ্ছিল। হঠাৎ কোথা থেকে একটা ক্ষীণ “মিঁউ” শব্দ ভেসে এল। সে টর্চ জ্বালিয়ে দেখে—একটা ছোট্ট বিড়াল, সাদা-কালো লোমে ঢাকা, ঠান্ডায় কাঁপছে।
আরিফ বিড়ালটিকে তুলে নিজের জ্যাকেটের ভেতর রাখল। একটু উষ্ণতা পেয়ে বিড়ালটি চোখ বুজে ঘুমিয়ে গেল। সেদিন থেকেই তার নাম রাখা হলো “মেঘু”—কারণ তার শরীরের দাগগুলো মেঘের মতোই ছিল।
মেঘু দ্রুতই সবার প্রিয় হয়ে উঠল। কঠিন পাহারার ফাঁকে সৈনিকরা যখন চা খেত, মেঘু এসে তাদের হাঁটুর ওপর গুটিসুটি মেরে বসত। ও যেন ঘাঁটির ছোট্ট সুখের প্রতীক হয়ে উঠল।
একদিন ভোরে হঠাৎ সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ। সৈনিকরা ছুটে গেল অবস্থানে। আরিফও দৌড়ে গেল, কিন্তু ঠিক তখনই সে দেখল মেঘু বারুদের গন্ধে ভয় পেয়ে খোলা মাঠে দৌড়াচ্ছে। আরিফ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে কোলে তুলে আশ্রয়ে নিয়ে এল। পর মুহূর্তেই এক বিস্ফোরণ—যেখানে মেঘু ছিল, সেখানে এখন ধোঁয়া।
যুদ্ধ শেষে সবাই বেঁচে গেলেও আরিফের চোখে তখন কেবল মেঘুর মুখ। পরে কমান্ডার জানালেন, “তুমি কেবল একটি বিড়াল নয়, একজন সঙ্গীকে বাঁচিয়েছ।”
ছুটিতে বাড়ি ফেরার সময় আরিফ মেঘুকে সঙ্গে নিয়ে গেল। গ্রামের শিশুরা প্রতিদিন এসে মেঘুর সঙ্গে খেলত। আরিফ মাঝে মাঝে মৃদু হেসে বলত, “এই ছোট্ট প্রাণটা আমাকে যুদ্ধের মাঝেও মানুষ থাকতে শিখিয়েছে।”
সেই থেকে মেঘু শুধু এক সৈনিকের পোষা প্রাণী নয়—সে এক নীরব সহযোদ্ধা, যে যুদ্ধের অন্ধকারে আনেছিল ভালোবাসার আলো।