প্রথম অধ্যায়
"আমার চিনি মা কেন কঁদছে দেখিতো !!!" নিজের চারবছরের ছোট্ট সোনাটা একনাগাড়ে কেঁদে চলেছে দেখে তার বাবা তো বিচলিত হবেই ৷ তাইতো ভদ্রলোক দাড়ি কামানোর মাঝে এসেও মেয়েকে কোলে তুলে নিলেন ৷
ভদ্রলোকের নাম প্রকাশ সেন৷ প্রকাশবাবু একজন রাজ্যসরকারি করণিক (ক্লারিকাল) কর্মচারী ৷ উনি দুর্গাপুর সদর অফিসে কর্মরত ৷ ওনার কোলে ক্রন্দনরত মেয়েটা হলো ওনার আদরের সুকন্যা কিরণ সেন, ওরফে চিনি ৷
"দিদিভাই এইভাবে কাঁদতে নেই সোনা ৷ সকাল সকাল এত কাঁদলে তোমার মিষ্টি মিষ্টি চোখের জলগুলো তো সব বেরিয়ে যাবে ৷" সুনয়না দেবী মানে প্রকাশ বাবুর মা নাতনিকে আদর করে চুপ করাতে চাইছেন ৷ সকাল সকাল একমাত্র আদরের নাতনির চোখের জল ওনার যে সহ্য হচ্ছে না ৷
" কিন্তু ঠাম্মি আমার চোখের জল তো নুন নুন, মিষ্টি তো নয় ৷ একদিন আমার ঠোঁটে এসে চোখের জলটা পড়েছিল, জিভ দিয়ে চেটে দেখেছি তো নুন জলের মতো খেতে ৷" বাচ্চা মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে আদো আদো স্বরে নিজের কথার ব্যাখ্যা দিল ৷
বাচ্চা মেয়ের উত্তর শুনে সুনয়না দেবী মুখ বেজার করে নিলেন৷ এরপর কি বলবেন বুঝতে পারছেন না৷ এদিকে প্রকাশ বাবু মেয়ের উত্তরে ঠোঁট চেপে হাসছেন৷
"তুমি আর হেসো না তো ৷ তোমার জন্যই মেয়েটা এতো আদুরে হয়ে উঠেছে ৷মা তুমিও ওকে এত আস্কারা দিও না ৷ এক বছর আগেই তো ওর স্কুলে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল ৷ নেহাত এই লকডাউনের চক্করে এক বছর পিছিয়ে ভর্তি করতে হলো ৷ তাও যে এল কেজিতে ডাইরেক্ট ভর্তি করা গেল এই অনেক ৷ "একটা মহিলা কণ্ঠস্বর শুনে বাচ্চা মেয়েটার কান্না আরো বেড়ে গেল ৷ এই ভদ্রমহিলা হলেন প্রকাশ বাবুর স্ত্রী মন্দিরা সেন ৷ ইনি গৃহকর্মে সুনিপুণা সুদক্ষ গৃহবধূ ৷ আমাদের ছোট্ট কিরণের মায়ের ওপর খুব অভিমান হয়েছে ৷ ওর ধারণা মা ওকে জোর করে স্কুলে পাঠাচ্ছে ৷ যদিও আজ কিরণ দ্বিতীয় দিন স্কুলে যাচ্ছে ৷ তবে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার পর আজ আর সে স্কুলে যেতে নারাজ৷ তাইতো মা সকালে স্কুলের ড্রেস পরিয়ে দিতেই কান্নার সুর তুলেছে৷
"আহ্ চিনি এবার কিন্তু বোকবো আমি ৷ চুপ কর না সোনা ৷ " মন্দিরা দেবী মেয়েকে কোলে নিতে গেলে সে মুখ ঘুরিয়ে বাবার গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরল ৷
বড়লোক বাপের উচ্ছন্নে যাওয়া মেয়ে নিরুপমা। প্রচন্ড জেদি, বদমেজাজি সাথে আগুন ঝরা সুন্দরী। বি বি এ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। এটাও বলা যায় যে সেই তার ভার্সিটি সেরা সুন্দরীর খেতাব পেয়েছে।কিন্তু দিন দিন সে উচ্ছন্নে চলে যাচ্ছে দেখে তার বাবা মায়ের চিন্তার শেষ নেই।সারাদিন হই হুল্লোর আর আড্ডা মেরে পার করে।আর কথায় কথায় বাজি করে সবার সাথে আর বাজিটা জিতবেই জিতবে। তার মা বাবা অনেক চেষ্টা করেও তাকে বসে আনতে পারে নি।কারন তাদের একটাই মাত্র সন্তান।তাই আদর পেয়ে পেয়ে অনেক টা বেয়ারা হয়ে গেছে। আর এখন সেটা এতই বেশি যে তাদের পক্ষে তাকে কন্ট্রোল করা অসম্ভব হয়ে গেছে। তাই তার মা বাবা ঠিক করলো মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিবে।কিন্তু এই মেয়ের সম্পর্কে জানার পর কেউই তাকে বাড়ির বউ বানাতে চাইবে না।
..
সে এক গভীর চিন্তায় পড়লো তারা। শেষে নিরুপমার মা সাহেদা বেগম এর মনে হল তার গ্রামের বান্ধবীর কথা। ওরা গ্রামেই থাকে, তার তো একটা ছেলে আছে।আর তাকে এই অবস্থায় একমাত্র তার এই বান্ধবীই উদ্ধার করতে পারে। সাহেদা বেগম তার বান্ধবীর সাথে কথা বলে জানতে পারলো তার ছেলের লেখাপড়া প্রায় শেষ। তাইবিয়ে দিতে আপত্তি নেই তার।আর তার ছেলেও সে কথা দিলে সেটা ফেলবে না। আর ওনার নিরুপমা কে বেশ পছন্দ। তাই তিনি সাহেদা বেগম কে পাকা কথা দিলেন।
..
সাহেদা বেগম গ্রামে গিয়ে তার বান্ধবীকে সব বুঝাই বললো সাথে তার বান্ধবীর ছেলে কেও দেখে আসলো। ছেলে মাশাল্লাহ সুন্দর। সবদিক থেকেই পারফেক্ট কিন্তু সমস্যা ছেলে গ্রামেই লেখাপড়া করেছে তাই নিরুপমার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে না হয়তো। ছেলে কে সব বলে নিরুপমার নাম্বার দিয়ে চলে আসে। তারা বাড়িতে ফিরে নিরুপমা কে বিয়ের কথা বলে ভার্সিটি যাওয়া অফ করতে বলে কিছুদিন। নিরুপমা তো রেগে আগুন।
Famim Islam
মন্তব্য মুছুন
আপনি কি এই মন্তব্যটি মুছে ফেলার বিষয়ে নিশ্চিত?
Ashik Khan
মন্তব্য মুছুন
আপনি কি এই মন্তব্যটি মুছে ফেলার বিষয়ে নিশ্চিত?