“তাসের ঘর”
রিয়াদ ছিল একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র সন্তান। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছে। স্বপ্ন ছিল বড় চাকরি, ভালো সংসার আর বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানো। তবে হঠাৎ একদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় শুনল "অনলাইন ক্যাসিনো" নামে এক জগৎ, যেখানে সামান্য বিনিয়োগেই লাখপতি হওয়া যায়!
প্রথমে কৌতূহল, পরে মজা, আর তারপর শুরু হলো আসক্তি। প্রথমবার সে মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে খেলল, জিতে গেল ৫ হাজার! রিয়াদ ভাবল, “এতো সহজ টাকা! এটাই আমার ভাগ্য বদলের পথ।”
দিন যেতে লাগল, আর তার অ্যাকাউন্টে টাকা কমতে থাকল। প্রথমে নিজের জমানো টাকা, পরে বন্ধুর কাছ থেকে ধার, এরপর মায়ের গহনা বিক্রি করে…। একদিন সে পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে পড়ল।
বন্ধুরা দূরে সরে গেল, পরিবার জানল যখন, তখন অনেক দেরি। বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন, মা লোকলজ্জায় ঘর থেকে বের হতেন না। রিয়াদ নিজেকে ঘৃণা করতে লাগল। মাঝেমধ্যে আত্মহত্যার চিন্তাও মাথায় আসত।
একদিন রাত তিনটায় সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখে চোখ রাখল। ভিতর থেকে একটা কান্নার শব্দ শুনল, যেন তার আত্মাই আর চায় না এই জীবন। সেদিনই সে স্থির করল—বাঁচতে হলে পাল্টাতে হবে।
পরদিন সকালে রিয়াদ এক রিহ্যাব সেন্টারে গেল। আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার লড়াই শুরু করল। সময় লেগেছে দুই বছর, কিন্তু সে এখন একটি এনজিও-তে কাজ করে—অনলাইন জুয়া থেকে যুবকদের রক্ষা করার জন্য।
রিয়াদের জীবন এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়, কিন্তু সে জানে, সে চেষ্টা করলে নিজের তাসের ঘরটাকে আবার ইট-পাথরের ঘরে রূপান্তর করতে পারবে।
গল্পের শিক্ষা:
অন্যায়ভাবে সহজে টাকা আয় করার লোভ কখনো সুখ এনে দেয় না। জীবন জুয়া নয়, চেষ্টা আর সততার মাধ্যমেই গড়ে ওঠে।