১৯৮০’র দশকে হুমায়ূন আহমেদের সবল উপস্থিতি অনুভূত হওয়ার আগে বাংলা উপন্যাসের অধিক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের কথাসাহিত্যিকদের অবদান ছিল সংকীর্ণ । এ সময়কার কয়েকজন প্রধান লেখক হলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, রমাপদ চৌধুরী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। তবে সত্তর দশক পর্যন্ত অজ্ঞাত ছিল বাংলাদেশের ঔপন্যাসিক কবি জীবনানন্দ দাশের অনন্যসাধারণ উপন্যাসসমূহের অস্তিত্বের খবর। তিনি ১৯৩০ ও ১৯৪০-এর দশকে ২২টি উপন্যাস রচনা করেছিলেন।
বাংলা উপন্যাস নতুন মাত্রা লাভ করে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জগদীশ গুপ্ত ও কমলকুমার মজুমদারের হাতে। এদের হাতে উপন্যাস বড় মাপের পরিবর্তে মানবিক অস্তিত্বের নানা দিকের ওপর আলোকপাত করে বিকশিত হয়। বস্তুত রবীন্দ্রপরবর্তী যুগে মানিক বন্দ্যেপাধ্যায় সম্ভবত সবচেয়ে কুশলী উপন্যাস শিল্পী। তারই পদাঙ্কানুসরণে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিকশিত হতে দেখা যায়। এরা উপন্যাসকে ব্যবহার করেছেন মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক জটিলতার ওপর নিবিড় আলোকপাতের উদ্দেশ্যে। তাদের হাতে উপন্যাসে শিল্পশৈলীতে সঞ্চারিত হয়েছে দৃঢ় গদ্যের সক্ষমতা। মানবীয় ও সামাজিক বিষয়ের বিচিত্র বিবেচনা উপন্যাসকে সাধারণ পাঠকের কাছাকাছি নিয়ে গেছেন এবং একই সঙ্গে উপন্যাসের
বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বাংলা উপন্যাসে সম্পূর্ণ নতুন করণকৌশল নিয়ে আবির্ভূত হলেন বাংলাদেশের হুমায়ূন আহমেদ। তিনি বাংলা উপন্যাসকে নতুন খাতে প্রবাহিত করলেন। বাঙলা উপন্যাস দীর্ঘকাল পশ্চিমবঙ্গের কথাসাহিত্যিকদের হাতে পরিপুষ্ট হয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদ একাই শত বর্ষের খামতি পূরণ করে দিলেন। তার উপন্যাসের অবয়ব হলো সবজান্তা লেখকের বর্ণনার পরিবর্তে পাত্র-পাত্রীদের মিথস্ক্রিয়া অর্থাৎ সংলাপকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি ছোট এবং স্বল্প পরিসরে অনেক কথা বলার পদ্ধতি প্রবর্তন করলেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদ দেখালেন যে ইউরোপীয় আদলের বাইরেও সফল, রসময় এবং শিল্পোত্তীর্ণ উপন্যাস লেখা সম্ভব।
একবিংশ শতাব্দী শুরু হয়েছে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগের উত্তরাধিকার বহন করে। এ সময় কিছু কিছু নিরীক্ষাধর্মী উপন্যাসের স্বাক্ষর রেখেছেন কতিপয় লেখক। উত্তরআধুনিক ধ্যানধারণা অবলম্বন করেও লিখেছেন কেউ কেউ। তবে নতুন কোন ধারা প্রবল বেগে ধাবিত করার মতো নতুন কারো আবির্ভাব এখনো হয় নি। তবে বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে আবু ইসহাক, শওকত ওসমান, সৈয়দ শামসুল হক, জহির রায়হান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আহমদ ছফা, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, নাসরিন জাহান, আনিসুল হক, হুমায়ুন আজাদ, শহিদুল জহির প্রমুখ শক্তিশালী ঔপন্যাসিকের সবল উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছে। পশ্চিমবঙ্গেও অনকে নতুন নতুন ঔপন্যাসিকের আবির্ভাব লক্ষ করা গেছে যদিও প্রচলিত রীতির বাইরে যাওয়ার শক্তিশালী হাতের দেখা পাওয়া যায় না। এ সময় দেবেশ রায় এবং হাসান আজিজুল হক উপন্যাসে যোগ করেছেন নতুন মাত্রা।
ferdoshasan
দেবদাস
বিচ্ছেদধর্মী উপন্যাস বা গল্পের শেষে ট্র্যাজেডির নাম বলতেই বাঙালির প্রথমেই যে উপন্যাসের নাম মনে আসে, তা হলো দেবদাস। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এই অমর সৃষ্টি যেন যুগে যুগে বিয়োগাত্মক প্রেমগাঁথার এক নাম। দেবদাস কালজয়ী এই ঔপন্যাসিকের শুরুর দিকের উপন্যাস।
তাতে দেখা যায়, দেবদাস পার্বতী বাল্যকালের বন্ধু। একসময় দুজনই প্রাপ্ত বয়স্ক হয়, সঙ্গে বন্ধুত্ব রূপ নেয় প্রণয়ে। কিন্তু দেবদাসের পরিবার পার্বতীর পরিবারের সম্বন্ধ করতে চায় না বিধায় ভেঙ্গে যায় সম্পর্ক। পার্বতীর বিয়ে হয়ে যায় অন্যত্র। পার্বতীর অন্যের চলে যাওয়ার কষ্টে মুষড়ে পড়ে দেবদাস। প্রেমিকার স্মৃতি ভুলতে মদের বোতলই হয় তার একমাত্র আশ্রয়। একসময় জীবনে আসে বাইজী 'চন্দ্রমুখী' কিন্তু সে-ও পার্বতীর দুঃখ ভোলাতে পারে না। উপন্যাসের শেষে পার্বতীর স্বামীর ঘরের দরজার সামনে মৃত্যু ঘটে অসুস্থ দেবদাসের।
Read More
Ta bort kommentar
Är du säker på att du vill ta bort den här kommentaren?