মূলপাতা
সকল সংখ্যা
বিভাগ
লেখকবৃন্দ
আপনার জিজ্ঞাসা
পরিচিতি
যোগাযোগ
বর্ষ: ০৮, সংখ্যা: ০২
রবিউল আওয়াল-১৪৩৩ || ফেব্রুয়ারি-২০১২
দুরূদ ও সালাম : ফায়েদা ও ফযীলত
মাওলানা মুহাম্মাদ ইমদাদুল্লাহ
আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার আখেরী রাসূল। তিনি গোটা মানবজাতির জন্য আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ দূত। তাই তাঁর প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য ছাড়া আল্লাহতে বিশ্বাস ও আল্লাহর আনুগত্যের দাবি অর্থহীন। কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়টি ঘোষিত হয়েছে।
আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ খাতামুন্নাবিয়ীন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ। তাই তাঁর জন্য হৃদয়ের গভীরে মহববত ও ভালবাসা পোষণ করা এবং তাঁর জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে দুআ করা প্রত্যেক উম্মতির ঈমানী কর্তব্য।
কুরআন মজীদে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য দরূদ পাঠের তথা আল্লাহর দরবারে তাঁর জন্য দুআ করার আদেশ করেছেন। এটা একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে তাঁর রাসূলের মর্যাদার প্রমাণ অন্যদিকে মুমিন বান্দার রহমত ও বরকত লাভের অন্যতম উপায়।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর উপর রহমত নাযিল করেন এবং ফেরেশতারা তাঁর জন্য রহমতের দুআ করেন। সুতরাং হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ পড় এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও। (সূরা আহযাব : ৫৬)
এখানে কিছু ফযীলত উল্লেখ করা হল। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই সহজ ও মূল্যবান আমলটি বেশি বেশি করার তাওফীক দিন।
১. রহমত, মাগফিরাত ও দরজা বুলন্দির আমল
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-
من صلى علي صلاة صلى الله عليه بها عشراً
যে আমার উপর একবার দরূদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন।-সহীহ মুসলিম ১/১৬৬; জামে তিরমিযী ১/১০১
অন্য হাদীসে আছে, হযরত আনাস রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
من صلى علي صلاة واحدة صلى الله عليه عشر صلوات، وحطت عنه عشر خطيئات، ورفعت له عشر درجات.
যে আমার উপর একবার দরূদ পড়বে আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি দরজা বুলন্দ হবে।-সুনানে নাসায়ী ১/১৪৫; মুসনাদে আহমদ ৩/১০২; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২/৪৩
অন্য বর্ণনায়, আবু বুরদা রা. থেকে বর্ণিত আছে, তার আমলনামায় দশটি নেকী লেখা হবে।-আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ২২/৫১৩
আবু হুরায়রা রা. থেকেও দরূদের এই ফযীলত বর্ণিত হয়েছে।-মুসনাদে আহমদ ২/২৬২, হাদীস : ৭৫৬১
২. ফেরেশতারা মাগফিরাতের দুআ করেন
হযরত আমের ইবনে রবীআহ রা. বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুতবার মধ্যে বলতে শুনেছি-
من صلى علي صلاة، لم تزل الملائكة تصلي عليه ما صلى علي، فليقل عبد من ذلك أو ليكثر. (قال السخاوي في القول البديع، ص : 25 : حسّن شيخنا هذا الحديث. وقال الشيخ شعيب الأرناؤوط : حديث حسن. اه)
আমার উপর দরূদ পাঠকারী যতক্ষণ দরূদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দুআ করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরূদ বেশি পড়বে না কম।-মুসনাদে আহমদ ৩/৪৪৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৪০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৯০৭
৩. দরূদ পাঠকারীর জন্য শাফাআত অবধারিত
রুওয়াইফি ইবনে ছাবিত আলআনসারী রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এ দরূদ পাঠ করবে তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে যাবে।
اللهم صل على محمد وأنزله المقعد المقرب عندك يوم القيامة. (قال الهيثمي في مجمع الزوائد : رواه البزار والطبراني في الأوسط والكبير، وأسانيدهم حسنة. اه)
-আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ৫/৪৪৮১; মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/২৫৪
৪. কিয়ামতের দিন নবীজীর সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে
আবদুললাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أولى الناس بي يوم القيامة أكثرهم علي صلاة
কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার উপর সবচেয়ে বেশি দরূদ পড়েছে।
(رواه الترمذي وقال : هذا حديث حسن غريب)
-জামে তিরমিযী ১/১১০
১৪৮.
وَلِكُلِّ وِجۡهِةٍۢ مَّوَٟلِيهَاۚ فَٱسۡتَبِقُوا۟ ٱلۡخَيۡرَٰتِۚ ۚۖ أَيۡنَ مَا تُوَلُّوا۟ فَثَمَّ وَجۡهُ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ وَٰسِعٌۭ عَلِيمٌۭ
“প্রত্যেক দিকের জন্যে (ইবাদতের) পদ্ধতি রয়েছে; সুতরাং তোমরা সৎকর্মে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করো—যেখানে যেখানেই তাকাও, সেখানেই আল্লাহর মুখ রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাসহিষ্ণু, জ্ঞানশীল।”
১৪৯.
وَمِنۢ أَيِّ شَىۡءٍۢ تَفَرَّقُوا۟ فَۦٓاخِذُوهُ مَتَـبَيِّنًۭا وَٱسۡتَغۡفِرُوا۟ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌ
“এবং যদি তোমরা কোনো বিষয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ো, তবে তা পরিশুদ্ধভাবে গ্রহণ করো এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়াবান।”
১৫০.
وَلَا تَكُونُوا۟ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُوا۟ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلۡبَيِّنَـٰتُۚ ۖ وَلَهُمۡ عَذَابٌۭ عَظِيمٌۭ
“আর তোমরা যেন তাদের মতো না হও যারা স্পষ্ট নিদর্শন আসার পরেও বিভক্ত হয়ে পড়েছে; তাদের জন্য কঠিন আযাব রয়েছে।”
-- সুরা আল-বাকারা (আয়াত১৪৮-১৫০ )
১৪৪.
وَيَسۡتَفۡتُونَكَ فِى ٱلۡقَمَرِۚ قُلِ ٱلۡهُدَى ٱللَّهِ هُوَ يَهۡدِى لِلسَّبِيلِۚ وَلَـٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ
“তারা তোমার কাছে চাঁদের বিষয়ে আদালাভাবে জিজ্ঞাসা করে। বল, ‘নিশ্চয়ই পথনির্দেশ আল্লাহরই; তিনি পথ দেখান।’ তবে অধিকাংশ মানুষ জানে না।”
-- সুরা আল-বাকারা (আয়াত ১৪৪)
১৪৩.
وَمِنَ ٱلۡأَنۡعَـٰمِ أُحِلَّ لَكُمۡ أَن تَأۡكُلُوا۟ مِمَّا فِىۤ أَرۡبَـٰعَةِ أَنفُسِہِۦ وَأَنتُمْ حُرُمٌۭۚ وَءَاتُوا۟ حَقَّهُۥ يَوۡمَ حَصَادِهِۦۚ وَلَا تُسۡرِفُوٓا۟ٓ ۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلْمُسۡرِفِينَ
“পশুদের শরীরের চারভাগ থেকে যা ব্যবহার না করলে যাবে না—তোমাদের জন্য তা হালাল হয়েছে, যখন তুমি ihram অবস্থায়। যখন তাদের থেকে হাপা নেও, তাদেরও অংশ দাও। অপব্যয় করো না; তিনি অপব্যয়ভোগীদের ভালোবাসেন না।”
-- সুরা আল-বাকারা (আয়াত ১৪৩)
১৪০.
وَلَقَدۡ كَتَبۡنَا فِى ٱلۡزَّبُورِ مِنۡ بَعۡدِ ٱلذِّكۡرِ أَنَّ ٱلۡأَرۡضَ يَرِثُهَا عِبَادِىَ ٱلصَّـٰلِحُونَ
“নিশ্চই আমরা জাবুর (জবুরে দাউদ) এ লিখেছি: ‘মৃত্যুর পরে এই পৃথিবীর উত্তরাধিকার লাভ করবে আমার সৎকর্মী বান্দারা।’”
১৪১.
هُوَ ٱلَّذِىٓ أَنشَأَ جَنّـٰتٍۢ مَّعۡرُوشَٰتٍۢ وَغَيۡرَ مَّعۡرُوشَٰتٍۢ وَٱلنَّخِيلَ وَٱلزَّرۡعَ مُخۡتَلِفًا أُكُلُهُۥ وَٱلزَّيۡتُونَ وَٱلرُّمَّانَ مُتَشَـٰبِهًا وَغَيۡرَ مُتَشَـٰبِهٍۢ ۚ كُلُوا۟ مِنۢ ثَمَرِهِۦٓ إِذَآ أَثۡمَرَ وَءَاتُوا۟ حَقَّهُۥ يَوۡمَ حَصَادِهِۦۚ وَلَا تُسۡرِفُوٓا۟ ۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلْمُسۡرِفِينَ
“তিনি সেই যা সৃষ্টি করেছেন—পাল্লাধারি ও অনুপাল্লাধারি বাগানগুলো, খেজুর, মতানৈক্যপূর্ণ শস্য, জলপাই ও অনান্য রকম বিভিন্ন রকম ফলদে গাছ। তুমি যখন ফল খাস, তবে তার পরিশ্রমের যোগ্য ভাগ বের কর (যেমন যাকাত), ক্ষয়-ক্ষতি করো না; নিশ্চয় তিনি অপব্যয়কারীদের ভালোবাসেন না।”
-- সুরা আল-বাকারা (আয়াত ১৪০-১৪১)