হাশরের ময়দান কোথায় হবে? শামে হাশরের ময়দান হবে মর্মে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। আর তৎকালীন শাম বর্তমানে সিরিয়া, জর্দান, লেবানন, ফিলিস্তিন ও ইসরাঈলের পুরো ভূখন্ড এবং ইরাক, তুরস্ক, মিসর ও সঊদী আরবের কিছু অংশকে শামিল করে (উইকিপিডিয়া) । আবু যর গিফারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল স. বলেন, ‘শাম হ’ল একত্রিত হওয়ার ও পুনরুত্থিত হওয়ার স্থান’ (সহীহুল জামে‘ হা/৩৭২৬) । অন্য বর্ণনায় তিনি হাশরের স্থান হিসাবে শামের দিকে ইশারা করেছেন (আহমাদ হা/২০০৪৩, সহীহুল জামে‘ হা/২৩০২) । মনে রাখতে হবে যে, ক্বিয়ামতের দিন বর্তমান পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবীতে পরিণত হবে (ইবরাহীম ৪৮) এবং পাহাড়-পর্বত সব একাকার হয়ে সমতল হয়ে যাবে (ত্বোয়াহা ২০/১০৬) । যেটা মানুষের কল্পনার বাইরে।
ভয়াবহ হাশরের ময়দানরে চিত্র : হাশরের মাঠের চিত্র হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। সেদিন পৃথিবী সৃষ্টি থেকে শুরু করে ধ্বংস হওয়ার পর্যন্ত সমস্ত মানুষকে জমায়েত করা হবে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- ‘সেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আসমান সমূহকে এবং লোকেরা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে হাজির হবে। (সুরা ইবরাহিম : ৪৮)। রাসুল সা. বলেন- ‘কিয়ামতের দিন সাদা ময়দার রুটির মতো চকচকে একটি মাঠের উপর সমস্ত মানুষকে একত্রিত করা হবে। সেখানে কারও কোনো নিশানা থাকবে না। (বুখারি : কিতাবুত রিকাক)
হাশরের ময়দানে আপনজনদের ভুলে যাবে : হাশরের ময়দানে মানুষ তার আপনজনদের ভুলে যাবে। সবাই নিজের চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত থাকবে। হজরত রাসুল সা. বললেন- ‘তিনটি স্থানে কেউ কারও কথা স্মরণ রাখবে না। ১. মিযানের নিকট। সেখানে প্রত্যেকেই চরম উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইবে যে, তার নেকির পাল্লা হালকা হয়, নাকি ভারী হয়! ২. আমলনামা প্রদানের সময়, যখন প্রত্যেককে বলা হবে- ‘তোমাদের নিজ নিজ আমলনামা পাঠ কর।’ তখন প্রত্যেকেই ভীষণভাবে অধীর হয়ে জানতে চাইবে যে, তার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে নাকি পেছন দিক দিয়ে বাম হাতে দেওয়া হবে। ৩. পুলসিরাতের নিকট, যখন তা জাহান্নামের উভয় পাড় ঘেঁষে ওপরে বসানো হবে (এবং তার ওপর দিয়ে অতিক্রমের নির্দেশ দেওয়া হবে)। এই তিনটি স্থানে কেউ কাউকে স্মরণ রাখবে না।’ (আবু দাউদ)
কাফেররা অন্ধ ও চেহারার উপর ভর করে হাশরের ময়দানে উপস্থিত হবে : আল্লাহ তাআলা বলেন:
আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন? তিনি বলবেন, এমনিভাবেই তোমার নিকট আমার নিদর্শনাবলী এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল। (সূরা ত্বা-হা- ১২৪-১২৬) তিনি আরো বলেন:
আর আমি কিয়ামতের দিনে তাদেরকে একত্র করব উপুড় করে, অন্ধ, মূক ও বধির অবস্থায়। তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম; যখনই তা নিস্তেজ হবে তখনই আমি তাদের জন্য আগুন বাড়িয়ে দেব। (সূরা বানী ইসরাইল- ৯৭) হাদীসে এসেছে:
আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিয়ামতের দিন কাফেরদের কিভাবে চেহারার উপর উপুর করে উঠানো হবে? তিনি বললেন: যে মহান সত্ত¡া দুনিয়াতে দু পা দিয়ে চলাচল করিয়েছেন, তিনি কি কিয়ামতের দিন মুখ-মন্ডল দিয়ে চলাচল করাতে পারবেন না? কাতাদা বললেন : অবশ্যই তিনি পারবেন, মহান রবের সম্মানের কসম করে বলছি। (বুখারী ও মুসলিম)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন: কেয়ামতের দিন মানুষ ঘর্মক্ত হবে। এমনকি যমীনের সত্তর হাত ঘামে ডুবে যাবে। তাদের ঘামে তারা কান পর্যন্ত ডুবে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
হাশরের ময়দানে সূর্যের দূরত্ব ও প্রখরতা:
মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ স. কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন: কিয়ামত দিবসে সূর্য মানুষের খুব নিকটবর্তী হবে। এমনকি এর দুরত্ব এক মাইল পরিমাণ হবে। এ সম্পর্কে সুলাইম ইবনে আমের বলেন, আল্লাহর শপথ! মাইল বলতে এখানে কোন মাইল তিনি বুঝিয়েছেন আমি তা জানি না। জমির দূরত্ব পরিমাপের মাইল বুঝিয়েছেন, না সুরমা দানির মাইল (শলাকা) বুঝিয়েছেন? মানুষ তার আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে থাকবে। কারো ঘাম হবে পায়ের গিরা বরাবর। কারো ঘামের পরিমাণ হবে হাটু বরাবর। কারো ঘামের পরিমাণ হবে কোমর বরাবর। আবার কারো ঘামের পরিমাণ হবে তার মুখ বরাবর। (সহীহ মুসলিম ২১৯৬)
হযরত উকবা ইবনে আমের (রাঃ)বলেন, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামত দিবসে সূর্য্য যমীনের নিকটবর্তী হবে ; ফলে মানুষ ঘর্মাক্ত হতে থাকবে । কারো ঘাম গোড়ালী পর্যন্ত, কারো অর্ধহাটু , কারো উরু, কারো কোমর , কারো মুখ পর্যন্ত পৈাছবে। কারো মাথা পর্যন্ত ঘামের মধ্যে ডুবে যাবে ।
হযরত ইবনে উমর (রাঃ) বলেন,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যেদিন মানুষ রাব্বূল আলামিনের সম্মুখে হিসাবের জন্য দন্ডায়মান হবে , সেদিন অনেকেই নিজের ঘামে কান পর্যন্ত ডুবে যাবে। আর এক হাদিসে এসেছে, মানুষ দন্ডায়মান অবস্থায় চল্লিশ বছর পর্যন্ত আসমানের দিকে তাকিয়ে থাকবে এবং সীমাহীন কস্টের দরুণ ঘাম ঝরে ঝরে গলা পর্যন্ত পৈাছবে।
sabit4567
Hapus Komentar
Apakah Anda yakin ingin menghapus komentar ini?