#জের জন্য ডাকলো না সূচক। নাহলে ঘাড় ধরে উঠিয়ে নামাজ পড়াতো।
জায়নামাজ গুটিয়ে ছাঁদের উদ্দেশ্য রওনা হয় সূচক।
নয়টায় ঘুম ভেঙে যায় তানহার। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। সূচককে রুমে না দেখতে পেয়ে মন খারাপ হয়ে যায়। লোকটা কি চলে গেলো?
একবার বলে গেলে কি হতো?
মুখ ভার করে বিছানা থেকে নেমে পড়ে তানহা। এলোমেলো চুল গুলো খোঁপা করতে করতে রুম থেকে বের হয়।
সাথে সাথে চোখ পড়ে টেবিলের দিকে। সবাই খাচ্ছে। সূচকও খাচ্ছে।
তানহাকে দেখে সবাই কেমন করে যেনো তাকায়। একটু বিব্রত হয়ে যায় তানহা। সূচক ছাড়া বাকি সবাই তাকিয়ে আছে।
বৃষ্টিকে না দেখতে পেয়ে একটু খানি খুশি হয় তানহা। যাক আপদ বিদেয় হয়েছে।
"ঘুম ভাঙলো তাহলে???
সুর টেনে বলে ইরা। সাদিয়া বেগম চোখ পাকিয়ে তাকায় ইরার দিকে। ভাগ্যিস তমাল আগেই খেয়ে বেরিয়েছে। নাহলে লজ্জায় ম*রেই যেতো তানহা। ইভা মাথা নিচু করে খাচ্ছে। তোহা মিটমিট করে হাসছে।
" গাঁধার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? যা গোছল সেরে আয়।
সূচক তানহার দিকে তাকিয়ে একটা ধমক দিয়ে বলে। ব্যাস হয়ে গেলো। এখন সবাই কি ভাববে? গোছল করার কথা না বললে চলছিলো না?
সাদিয়া বেগম নিঃশব্দে কেটে পড়ে। তোহা আর ইরা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে।
তানহা চোখ মুখ খিঁচে এক দৌড়ে রুমে চলে যায়।
এই লোকটা আস্ত একটা বদের হাড্ডি।
🥀
আজকে তানহা বায়না ধরেছে সূচকের কোচিং দেখতে যাবে। স্কুল টাইম হওয়ার অনেক আগেই বেরিয়েছে তানহা আর তোহা। পায়ে হেঁটেই চলে যাবে। তোহা একটুখানি ভয় পাচ্ছে। সূচক যদি কিছু বলে? তানহা বারবার স্বান্তনা দিচ্ছে।
স্কুলের পূর্ব পাশে কলেজের সামনে সূচকের কোচিং সেন্টার। বেশ বড়সর একটা টিনের ঘর। ঘরের দরজার সামনে হলুদ রংয়ের একটা সাইন বোর্ড টাঙানো। তাতে সাদা কালি দিয়ে লেখা "SA কোচিং সেন্টার"
তানহা দুর থেকেই সূচকের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটছে। চোখে চশমা পড়েছে লোকটা। সাদা শার্টের সাদা কালো জিন্স। শার্টের হাতা গুটিয়ে কনুই পর্যন্ত উঠিয়েছে। দুই হাত নারিয়ে স্টুডেন্টদের পড়া বোঝাচ্ছে। তার ফাঁকে ফাঁকে লম্বা চুল গুলো হাত দিয়ে পেছনে ঠেলছে।
এতো কিউট কেনো লোকটা?
সূচককে দেখতে দেখতে একদম কোচিং এর দরজার সামনে এসে পড়ে ওরা। দুই পাশে অনেক গুলো জানালা। সব গুলো জানালাই খোলা।
মেয়ো গুলো হা করে সূচকের দিকে তাকিয়ে আছে। পড়া গিলছে না সূচককে গিলছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। ছেলের সংখ্যা খুব কম৷। ইমন এক কোনায় বসে ফোন দেখছে।
হঠাৎ করে সূচকের চোখ পড়ে দরজার দিকে তানহা আর তোহার দিকে। তানহা হা করে তাকিয়ে আছে আর তোহা কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পড়া থামিয়ে দেয় সূচক। সবার নজর এখন ওদের দিকে। ইমন এক লাফে উঠে দাঁড়ায়।
তানহা এবার সবার দৃষ্টি বুঝতে পেরে বিব্রত হয়ে যায়।
"কি চাই?
সূচক বুকের কাছে দুই হাত গুঁজে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে শান্তি গলায় জিজ্ঞেস করে।
" ভাইয়া আমি আসতে চাই নি। তানহা জোর করে নিয়ে এসেছে।
তোহা আরও একটু কাচুমাচু হয়ে বলে। তানহা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। ওদের দেখে তো লোকটার খুশি হওয়ার কথা ছিলো।
"আমি টিচার। এটা আমার কাজের জায়গা। এখানে আমি শুধুমাত্র একজন টিচার। অন্য কিছু না।
এবারও সূচকের ঠান্ডা গলা। অপমানে গা রিরি করে ওঠে তানহার। তোহা সরি বলে হাঁটা শুরু করে দিয়েছে। তানহা কটমট চোখে তাকিয়ে আছে সূচকের দিকে।
" আপনাকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে হবে?
তানহার চোখে চোখ রেখে বলে সূচক। চোখে পানি টলমল করে ওঠে তানহার।
"আই জাস্ট হেইট ইউ
দাঁতে দাঁত চেপে বলে তানহা উল্টো রাস্তায় দৌড়ে চলে যায়। তোহা স্কুলের দিকে গেছে। আর তানহা অন্য দিকে। সূচক ইমনের দিকে তাকায়। ইমন পড়েছে দোটানায়।
এখন ও কোন দিকে যাবে?
সূচককের চাহনি বুঝে মনে মনে সূচককে বকতে বকতে বেরিয়ে যায় ইমন।
সূচক আবার পড়ানো শুরু করে।
তানহার কান্না থামছেই না। এভাবে কেনো বললো উনি? ভালোবাসা শেষ?
দৌড়ে যাচ্ছে আর বা হাতে চোখ মুছছে। এই রাস্তায়ই তানহার মামা বাড়ি। আজকে ও মামা বাড়ি যাবে। ওই বাড়িতে ফিরবে না। সূচকের মুখোমুখি তো একদমই হবে না। এই অপমান মেনে নেবে না একদম।
🥀
তোহা স্কুলের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। অপমানটা মেনে নিতে পারছে না। এভাবে কেনো বললো ভাইয়া?
" এই মেয়ে তোমার ভাবি কই?
ইমন দুই হাঁটুতে হাত দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে। তোহা ইমনের দিকে তাকায়।
"আজিব
কাঁদছো কেনো? তোমাদের বোঝা উচিৎ ছিলো। ওটা ওর কাজের জায়গা। সেখানে ভাই বোন বই সবই একই। আলাদা করে দেখার জায়গা না।
ইমন বিরক্ত হয়ে বলে। তোহা কোনো কথা না বলে চোখের পানি মুছতে মুছতে ভেতরে ঢুকে যায়।
ইমন সরু চোখে তাকিয়ে থাকে। এটলিস্ট বলে তো যেতে পারতো। তানহা কই?
বা নাম্বারটা তো দিতে পারতো। এখন কোথায় খুঁজবে ইমন?
তানহার মা সবে বের হচ্ছিলো বাড়ি যাওয়ার জন্য। তখনই হুরমুর করে বাড়িতে ঢুকে পড়ে তানহা। তাহার মা