১
আমি একা নই আর—
আমার কণ্ঠে দশ হাজার কণ্ঠ,
আমার চোখে পৃথিবীর সমস্ত কান্না
একসঙ্গে পুঞ্জীভূত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
২
আমি সেই শিশু, যে ভাত চেয়ে চেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে
তপ্ত রেলস্টেশনের বালিতে।
আমি সেই যুবক, যে ইন্টারভিউর দিন
শেষ বাসটি মিস করে হেঁটে হেঁটে ফিরে যায়।
৩
আমি সেই নারী, যে রাতজাগা কারখানায়
আলোর নিচে গুনে চলে সূতো,
তার চোখে নেই প্রেম—
তবু প্রতিটি ছোঁয়ায় বসে থাকে স্বপ্নের স্নেহ।
৪
আমি সেই বৃদ্ধ, যে যুদ্ধ দেখেছে,
বোমা ও লাশের গন্ধ শুঁকে বড় হয়েছে।
তার গল্প বলে না কেউ এখন,
তবু সে জানে—“আমিই ইতিহাসের প্রাচীন রক্তধারা।”
৫
আমি সেই ছাত্র, যার বই ধার করা,
যার ছাতা ছিঁড়ে গেছে বৃষ্টির ভেতর।
তবু তার খাতায় যে লেখা
তা একদিন পৃথিবীকে পাল্টে দিতে পারে।
...
১৫
আমি সেই প্রেমিক,
যার চিঠি পৌঁছায়নি সময়মতো,
আর সেই প্রেমিকা,
যে অপেক্ষার আঙিনায় ঘুমিয়ে পড়েছে যুগের পর যুগ।
...
২২
আমি সেই সৈনিক, যার বুটে লেগে আছে
অপরিচিত দেশের রক্ত।
আমি সেই জেলখানার কক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা
একজন নিরপরাধ মানুষের দীর্ঘশ্বাস।
...
৩১
আমি একটি গিটার—
যে এখন আর বাজে না,
তবু একদিন তার ছয় তারে কাঁদত একটি মেয়ের ভাঙা কবিতা।
...
৪৭
আমি সেই কৃষক,
যে নিজের মাটিতেই ভাত জোটাতে পারে না,
আর সেই কবি,
যার কলম কেবল বাতাসে ভাসে, পাতায় নয়।
...
৬২
আমি সেই রোহিঙ্গা, সেই ফিলিস্তিনি, সেই আদিবাসী,
যাদের গৃহ মানেই অনিশ্চয়তা,
তবু তাদের বুকেই লুকানো থাকে
পৃথিবীর সবচেয়ে সাহসী গান।
...
৭৫
আমি গানের সেই লাইন,
যা মাঝপথে ভুলে গেছে গায়ক,
তবু শ্রোতার হৃদয়ে রয়ে গেছে
অভিমানের মতো জেগে।
...
৯০
আমি সেই পিতা, যে চাকরি হারিয়ে
রাতের বালিশে চোখ লুকিয়ে কাঁদে,
আর সেই শিশু,
যে জানে না তার পেছনে কত বিসর্জন জ্বলছে।
...
১০০
আমি সেই “মানবপুঞ্জ”—
যা কোনো এক কবির কলমে শুরু হয়েছিল,
কিন্তু এখন ছড়িয়ে গেছে
প্রতিটি মানুষের নশ্বর হৃদয়ে।