---
🏰 গল্প: “নবাবের সিন্দুক”
(এক বিস্মৃত দুর্গ, এক রহস্যময় ধনসম্পদ, আর এক নারীর অটল সাহস)
---
১.
১৭৫৭ সাল।
পলাশীর যুদ্ধের পরে বাংলার নবাবি ছিন্নভিন্ন।
মুর্শিদাবাদের প্রাচীন দুর্গগুলো কেবল স্মৃতি,
আর ব্রিটিশরা তখন একে একে দখল করে নিচ্ছে সেগুলো।
কিন্তু এক দুর্গ—দৌলতদ্বার—এখনো কারো নাগালের বাইরে।
লোকমুখে শোনা যায়,
নবাব সিরাজের গুপ্ত ধন লুকিয়ে আছে সেই দুর্গে,
এক তামার সিন্দুকে—যেটা খোলা যাবে কেবল
এক বিশেষ রক্তের মানুষ দ্বারা।
---
২.
দুই শতাব্দী পর, ১৯৪৭ সাল।
দেশ ভাগ হচ্ছে। আগুন ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামেগঞ্জে।
তখন কলকাতার এক কিশোরী, মেহজাবিন, তার পরিবার হারিয়ে আশ্রয় নেয় এক ধ্বংসপ্রায় গ্রামে—দৌলতদ্বারের পাশে।
মেহজাবিন ছিল ইতিহাসপিপাসু।
সে দুর্গটিকে কেন্দ্র করে পড়তে থাকে পুরোনো দলিল, কাহিনি, কবিতা।
এক রাতে সে দুর্গের এক খোলা ঘরের নিচে খুঁজে পায়
একটা রক্ত-রাঙা মুদ্রা আর একটা খণ্ডিত কবিতা:
> “লোহিত নদীর কন্যা
অগ্নির রাতে আসিবে—
তাহার স্পর্শে খুলিবে ধন,
নাহি জানে কেহ কবে।”
---
৩.
মেহজাবিন বুঝে গেল—এটা কোনো সাধারণ ধন নয়।
সে শুরু করল অনুসন্ধান—
দুর্গের প্রাচীন গেট, জলাধার, গুপ্ত গুহা।
তার সাহস ও কৌতূহল দেখে গ্রামের মানুষ প্রথমে ভয় পেলেও
পরে তার পাশে দাঁড়াল।
এক রাতে, প্রবল ঝড়ে বিদ্যুৎ চলে যায়,
মেহজাবিন একা ঢোকে দুর্গের নিচতলায়।
এক পুরোনো দরজার গায়ে সে হাত রাখতেই
এক তীব্র শব্দে খুলে যায় এক সিন্দুক।
ভেতরে আছে:
সোনার মুদ্রা,
নবাবের ব্যক্তিগত চিঠিপত্র,
আর একটি চিরকুট:
> “যদি তুমি এই ধন পেয়ে থাকো,
জানো—তুমি আমার উত্তরসূরি।
এই ধন হোক বাংলার মানুষের।
ইংরেজ নয়, কোনো লোভ নয়—
কেবল মাটির সন্তানের হাতে হোক এর ভবিষ্যৎ।
—সিরাজ”
---
৪.
মেহজাবিন সিদ্ধান্ত নেয়—এই ধন থাকবে সবার জন্য।
সে গোপনে চিঠিগুলো ও দলিল নিয়ে যায় কলকাতার এক স্বাধীনতাকামী দলনেতার কাছে।
তাদের অর্থে গড়ে ওঠে:
একটি স্কুল,
একটি হাসপাতাল,
আর গ্রামের মানুষের নামে জমি।
দৌলতদ্বার এখন কেবল প্রাচীন দুর্গ নয়—
এটা প্রতিরোধ আর প্রজ্ঞার প্রতীক।
---
৫.
অনেক বছর পর, একজন বৃদ্ধা মেহজাবিন গ্রামে ফিরে আসেন—
গ্রামের ছোট্ট শিশুরা তখনো শুনে
“নবাবের কন্যা”র গল্প।
কেউ জানে না তার নাম।
তবে জানে—সে একদিন অন্ধকারে আলো জ্বেলেছিল।
---
🖋️ শেষ বাক্য
> “সব সিন্দুক সোনা রাখে না—
কিছু কিছু সিন্দুক জন্ম দেয় ইতিহাসে আলো।”
---
শেষ।
---