গল্প: “হেমলক লাইব্রেরির গোপন দরজা”
১
রাজধানীর ঠিক বাইরে এক ছোট শহর—নাম নরোডা।
শহরটি ছোট, নিরিবিলি, মানুষজন শান্ত।
কিন্তু শহরের এক প্রান্তে আছে এক রহস্যময় লাইব্রেরি—হেমলক লাইব্রেরি।
কেউ জানে না কে এটি তৈরি করেছিল,
তবে সবাই জানে, সেখানে কেউই বেশিক্ষণ থাকতে চায় না।
কারণ?
প্রতিটি বইয়ের পাতায় একটা অদ্ভুত গন্ধ,
আর লাইব্রেরির ঠিক মাঝখানে থাকা একটা লালচে কাঠের আলমারি,
যার দরজা কেউ কোনোদিন খোলেনি।
২
গল্পের নায়ক—নিরানব্বই নম্বর রোডের কিশোর রায়ান।
বইয়ের প্রতি অদ্ভুত ভালোবাসা তার।
স্কুল শেষে সে প্রায়ই ছুটে যেত হেমলক লাইব্রেরিতে,
তবে কেউ বুঝতে পারত না কেন সে সেখানে এত ঘন্টার পর ঘন্টা কাটায়।
একদিন সে আলমারির ওপর একটা পুরনো বই খুঁজে পেল—"The Door That Speaks"।
বইয়ের প্রথম পাতায় লেখা ছিল—
> “যদি তুমি শব্দ শুনতে পাও পাতার নিচে,
জানো, তুমি এখন আর পাঠক নও—
তুমি পথিক।”
৩
রায়ান প্রতিদিন বইটি পড়তে লাগল।
দিন কয়েক পর সে দেখতে পেল, বইয়ের পাতায় আঁকা মানচিত্রগুলো নড়াচড়া করছে!
একেকটা মানচিত্রে একেকটা গোপন পথ,
আর শেষ পাতায় ছিল এক বাক্য:
> “পাঠাগারের মাঝের আলমারিতে চাপ দাও সাত নম্বর তাকের ওপর—
জানালা খুলে যাবে।”
৪
রায়ান সাহস করে সেটা করল।
দেখল সত্যিই একটা গোপন দরজা খুলে গেল।
ভেতরে সিঁড়ি—নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে,
আর প্রতিটি ধাপে জ্বলছে হালকা সবুজ আলো।
সে নিচে নামল…
সেখানে এক বিশাল গুহার মতো জায়গা—
ছোট ছোট ঘর, প্রতিটি ঘরে একেকটি বই,
আর বইগুলোর মধ্যে বসবাস করছে স্মৃতি।
সে শুনতে পেল—একজন কিশোরের কান্না,
এক নারীর গলা—"ফিরে এসো",
এক বৃদ্ধ বলছেন—"আমি এখনো ক্ষমা চাইতে চাই"…৫
তবে হঠাৎ একটি বই হাত ছুঁতেই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল—
রায়ান দেখল সে ঢুকে গেছে বইয়ের ভিতরে!
সে এখন এক যুদ্ধক্ষেত্রে,
মধ্যযুগীয় সৈন্যের রূপে,
কাঁধে তলোয়ার, সামনে শত্রু।
৬
বুঝল—এই লাইব্রেরি আসলে একটা "স্মৃতির জাদুঘর"।
যারা ভুলে গেছে, যারা চাপা দিয়েছে, যারা হারিয়ে গেছে—
তাদের জীবনের এক টুকরো এখানে ধরা থাকে।
কিন্তু কে তৈরি করেছে এই জায়গা?
৭
তাদের দেখাশোনা করে এক প্রাচীন রোবট-মতো সত্তা—নাম ইয়ান।
ইয়ান বলে,
“তুমি প্রথম যে নিজের ইচ্ছায় এ জায়গায় এসেছে।
তুমি চাইলে অন্যদের ভুলে যাওয়া সত্য ফিরিয়ে দিতে পারো।”
রায়ান প্রশ্ন করল, “কিন্তু আমি তো শুধু বই ভালোবাসি!”
ইয়ান বলল,
“সত্যি ভালোবাসলে, বই তোমাকে নিয়ে যাবে এমন জায়গায়,
যেখানে তুমি নিজের গল্পটাই নতুন করে লিখতে পারো।”
---
শেষাংশ
রায়ান এখন হেমলক লাইব্রেরির একজন "সংরক্ষক"।
সে বাইরের জগতে ফিরেছে ঠিকই,
কিন্তু প্রতি সপ্তাহে সে গোপনে নতুন একেকটা স্মৃতির বই উদ্ধার করে,
আর হারানো সত্যের গল্প ফেরত দেয় মানুষকে।
আর লাইব্রেরির লাল দরজাটা এখন আর কেউ ভয় পায় না—
কারণ এখন সেটা একটা প্রবেশপথ—
ভবিষ্যতের দিকে।
---
শেষ।
---