নূহ (আঃ) এর সময়কাল চলছে। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আযাব আসার প্রাথমিক আলামতও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আল্লাহ তায়া’লা নূহ (আঃ) কে নির্দেশ দিলেন সমস্ত মুমিনদেরকে সাথে নিয়ে নৌকায় আরোহন করতে। নুহ (আঃ) তাই করলেন।
অপরদিকে আযাবের আলামত দেখে কাফিরদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেলো। যারা এতদিন তাকে নৌকা তৈরি করতে দেখে ঠাট্টা বিদ্রূপ ও উপহাস করেছিলো তাদের চক্ষু এখন ছানাবড়া। বন্যার পানি ক্রমেই বাড়ছে দেখে কাফিরদের সবার মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়ে গেলো। যে যেদিকে পারছে পানি থেকে বাঁচার জন্য পৃথিবীর উঁচু উঁচু জায়গাসমুহে আশ্রয় নিচ্ছে।
নূহ (আঃ) তার সাথী ঈমানদারদেরকে নিয়ে নৌকায় আরোহন করেছেন। উঁচু উঁচু ঢেউয়ের মধ্যে নৌকা ছুটে চলেছে আপন গতিতে। কুরআনের ভাষায় বলতে গেলে- ‘পাহাড়সম ঢেউয়ের মধ্যে নৌকা চলছে’।
নূহ (আঃ) দূরে দেখতে পেলেন তার কাফির সন্তান কিনানকে। তার মনে পিতৃত্বসুলভ দয়ার উদ্রেক হলো। সন্তানের প্রতি দয়ামায়ার বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ সন্তানকে ডেকে বললেন- ‘হে আমার কলিজার টুকরা সন্তান! ইসলাম গ্রহণ করে আমাদের সাথে নৌকায় আরোহণ করো; কাফিরদের সাথে আর থেকো না’। সে জবাবে বললো- ‘আমি পাহাড়ের চুড়ায় আরোহণ করব। পাহাড় আমাকে পানি থেকে বাঁচাবে’।
নূহ (আঃ) বললেন- ‘আজকে আল্লাহ তায়ালার এ আযাব থেকে কেউ নিস্তার পাবে না। তবে, আল্লাহ তায়ালা কারও উপর যদি দয়া করেন তাহলে তার কথা আলাদা’।
এমতাবস্থায় বিশাল একটা ঢেউ এসে তাদের উভয়ের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিলো এবং নূহ (আঃ) এর চোখ থেকে ছেলেকে আড়াল করে ডুবিয়ে দিল। পিতার চোখের সামনে ছেলেকে ডুবিয়ে না দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বিশাল ঢেউ দিয়ে আড়াল করে দিয়ে তাকে ধ্বংস করে দিলেন।
নূহ (আঃ) এর সময়কার এ আযাবে নারী, যুবক, বৃদ্ধ সকল কাফির ডুবে মারা গেলো।
এমনি একজন কাফির মহিলার কোলে ছিলো দুগ্ধপোষ্য শিশু। মায়ের দুধ খেয়ে তার কোলে লালিত পালিত হচ্ছে। মা তার সন্তানটিকে খুবই ভালোবাসে।
নূহ (আঃ) এর কওমের উপর আযাব আসায় সে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো। নিজের জীবন চলে গেলেও তার সন্তান যেন ভালো থাকে। পানি বাড়তে থাকায় সে সন্তানকে নিয়ে চলে গেল পাহাড়ের চুড়ায়। কিছুট স্বস্তি পেলো। মনটাকে প্রবোধ দিল এই ভেবে যে, সন্তানটির জীবন আর বিপন্ন হবে না। পানি এতদুর পর্যন্ত আসবে না।
কিন্তু পাহাড়ের চুড়ায়ও যখন পানি পৌছে গেলো, তখন সে সন্তানকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখলো। পানি বুক পর্যন্ত উঠে গেলে সন্তানকে নিজের কাধে তুলে নিলো। আস্তে আস্তে সন্তানকে উপরের দিকে তুলে রাখছে যেন সন্তানটি মারা না যায়।
পানি গলা পর্যন্ত উঠে গেলে সন্তানটিকে দুইহাতে মাথার উপরে তুলে ধরল। পানি আরও বেড়ে গেলে সে নিজে মারা গেল এবং তার সন্তানটিও মারা গেলো। ভেসে গেলো দূর থেকে দূরে।
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন যখন কোন কওমের পাপের জন্য তাদের উপর শাস্তি দেন, তখন সেখানে থাকা সবাই তা ভোগ করে। ভালো-মন্দ যেই আছে তাদের কেউ ই সেই শাস্তির আওতার বাইরে থাকেনা। এজন্যেই অন্যায় হতে দেখলে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) হাত দ্বারা তার প্রতিবাদ করতে বলেছেন। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে মুখ দ্বারা তার বিরুদ্ধে বলার কথা বলেছেন। আর তাও সম্ভব না হলে অন্তত মন থেকে তা ঘৃণা করতে বলেছেন। আর এটাই হলো ইমানের সর্বনিম্ন স্তর। এর নীচে ইমানের কোন স্তর নেই।
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে তার আযাব এবং গজব থেকে রক্ষা করুন, আমীন।