একসময়ের দুঃসাহসী ডাকাত ছিলেন তিনি, রাহাজানি, ছিনতাই ছিলো তার নিত্যদিনের পেশা। কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া হেদায়েত তাঁকেও নিয়ে আসে ইসলামের পথে, একত্ববাদের পথে।
বলছিলাম ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী চতুর্থ সাহাবী হযরত আবু জর গিফারী (রা কথা। যার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘটনা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে। তিঁনি ছিলেন গিফার গোত্রের অধিবাসী।
মক্কার সাথে বাইরের জগতের সংযোগ ঘটিয়েছে যে ‘অদ্দান’ উপত্যকাটি, সেখানেই ছিল এই গোত্রের বসবাস।
তাদের অন্যতম পেশা ছিলো ডাকাতি। পুরো গোত্র ডুবে ছিলো অজ্ঞতা আর কুসংস্কারের কালো আঁধারে, করতো মূর্তি পূজা। ছোট বেলা থেকে অসীম সাহসী ও প্রখর বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন আবু জর (রা ডাকাতি করলেও চারিদিকে মানুষের মূর্তি পূজা তাকে চিন্তিত করতো।
তখন থেকেই নিজের মেধা ও দূরদর্শিতাকে কাজে লাগিয়ে তিঁনি ভাবতে থাকেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়ে। আল্লাহ তাঁর ভাবনা চিন্তাকে সহজ করে দিলে, খুঁজে পান একক ও অদ্বিতীয় সত্ত্বাকে।
তখন নিজের ভুল পেশা ছেড়ে দেন এবং নবী (সা থেকে ইসলাম গ্রহণেরও তিন বছর আগে থেকে নামাজ পড়তেন নিজের মত করে।
তখনো রাসুল (সা.) নবুয়তপ্রাপ্ত হননি। তাই বলা হয়ে থাকে, আবু জর জাহিলি যুগেই একত্ববাদী ছিলেন। পরবর্তী সময়ে রাসুল (সা.)-এর সংবাদ পেয়ে ছুটে যান তাঁর কাছে এবং গ্রহণ করেন ইসলাম। ফিরে আসেন অন্ধকার থেকে চিরস্থায়ী আলোর পথে। [ আসহাবে রাসুলের জীবনকথা ]
আগে থেকে এক আল্লাতে বিশ্বাসি আবু জর (রা একদিন জানতে পারেন, মক্কাতেও এমন একজন নবী এসেছেন যিনি এক আল্লাহকে বিশ্বাস করেন। এই সংবাদ পেয়ে প্রথমে তিনি তাঁর ভাই উনাইসকে মক্কায় পাঠিয়ে নতুন নবী সম্পর্কে জানতে বললেন। কিন্তু উনার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে তিনি সন্তুষ্ট হলেন না।
পরে নিজেই যৎসামান্য খাবার ও পানীয় নিয়ে রওনা হলেন মক্কার উদ্দেশে। সেখানে গিয়েও পরিস্থিতি কতটা অনুকূলে সেটা বুঝতেই সারাদিন কাটিয়ে দিলেন।
শত্রুদের আশঙ্কায় কাউকে নবী (সা এর সম্পর্কে জিজ্ঞেসও করতে পারছিলেন না। দিন শেষে রাত এলে তিনি ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়লেন মসজিদে হারামের এক কোণে। আলী (রা.) তাঁকে দেখে পরদেশি মুসাফির ভেবে নিয়ে গেলেন নিজ বাড়িতে। উত্তম থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। তবে উভয়ের মধ্যে নিজেদের পরিচয় নিয়ে কোন কথায় হলো না।
এভাবে দুই দিন কেটে গেলো। তৃতীয় দিন তিনি সাহস করে কথা বললেন। আলী (রা.) তাঁকে সাহায্য করবেন এই শর্তে তিঁনি তার যাত্রার উদ্দেশ্য তাঁকে বললেন। জানতে চাইলেন রাসূল (সা এর সত্যতার কথা।
তাঁর বক্তব্য শুনে আলী (রা.)-এর মুখমণ্ডল খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে গেল। তিঁনি বললেন, আল্লাহর কসম! তিঁনি তো নিশ্চিত সত্য নবী। তারপর নবীজি সম্পর্কে তিঁনি আবু জর (রা কে বললেন। আর, সকালেই নবীজি (সা এর কাছে নিয়ে যাওয়ার ওয়াদা করলেন।
পরের দিন আবু জর (রা.) রাসুল (সা.)-এর বাড়িতে গেলেন। সাক্ষাৎকালে তিনি রাসুল (সা.)-কে ইসলামী কায়দায় সালাম দিলেন। রাসুল (সা.) তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। এবং কয়েকটি আয়াত পড়ে শোনালেন।
আবু জর (রা.) সেখানেই তাওহিদের কলেমা পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করলেন। ইসলাম গ্রহণের পর রাসুল (সা.) তাঁকে বললেন, তুমি আপাতত নিজ এলাকায় ফিরে যাও। সেখানকার লোকজনকে ইসলামের দাওয়াত দাও। আমার খোঁজখবর রাখবে। সে মোতাবেক ভবিষ্যতে যা করার করবে।