#
—তাও তুমি তোমার মতামত দাও।
—হুম করতে পারো। দাদু ভাইদের বিয়ে হয়েছে, অনেকেই বিয়েতে আসতে পারে নি আবার জাহান দাদু ভাইয়ের বিয়ে সম্পর্কে অনেকই জানে না। তাই রিসিপশনটা তাড়াতাড়ি করে ফেলাই ভালো হবে।
—আচ্ছা। মাম্মা (রোজি বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে জাভিয়ান) তুমি কি বলো এবিষয়ে?
রোজি বেগমকে তখন খাইয়ে দিচ্ছিল আদিবা। দুই নাতিবউ ভীষণ ভালোবাসে ছোট দাদীকে। তার শরীরের অবস্থা এতটাই নাজুক যে নিজ হাতে খেতে পর্যন্ত কষ্ট হয়। তাই তাকে হানিয়া বা মেহরিমা-আদিবা খাইয়ে দেয়। কাজটা তারা বেশ ভালোবাসার সহিত করে।
রোজি বেগমের খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছে ততক্ষণে। আদিবা তার মুখ ধুয়ে আলতো হাতে মুছে দেয়। রোজি বেগম কাঁপা কাঁপা গলায় বলে–
—ভাইয়ার সাথে একমত আমি বাবা।
—আচ্ছা। খারাপ লাগছে তোমার? তুমি কি এখানে থাকবে নাকি শুয়ে দিবে আসবে তোমাকে?
—না খারাপ লাগছে না। এখানেই থাকি। খাওয়া ছেড়ে উঠতে হবে না কাউকে।
আদিবা বসে পড়ে ব্রেকফাস্ট করতে। এতক্ষণ তারা সকলেই চুপচাপ জাভিয়ানদের কথা শুনছিল। জাভিয়ান এবার ছেলেদের দিকে ফিরে। তাদের উদ্দেশ্য করে বলে–
—তোমাদের কি মতামত বয়েজ? কবে রাখলে তোমাদের সুবিধা হয়?
জায়িন বলে–
—আমার অফিসে আপাতত কোন প্রেশার নেই। আমি এইমাসটা ফ্রীই আছি। সামনে মাসের সেকেন্ড উইকে একটা নতুন ডিল সাইন করবো, তারপর থেকে হয়ত আবার বিজি হয়ে যাবো।
জাভিয়ান জাহানকে উদ্দেশ্য করে বলে–
—জাহান তুমি ফ্রী আছো এই মাসে? নাকি তোমার কোন ক্যাম্প বা সার্জারি আছে?
—তেমন কোন প্ল্যান নেই বাবা। সার্জারি একটা আছে কিন্তু সেটা এই সপ্তাহতেই হয়ে যাবে। তারপর ইমার্জেন্সি কোন কেস না আসলে আমি ফ্রী আছি।
জাভিয়ান মেহরিমা-আদিবা ও হানিয়ার কাছ থেকেও মতামত নেয়। তাদেরও কোন সমস্যা নেই দেখে ঠিক করা হয় সামনের সপ্তাহের শেষের দিকে জাহান-মেহরিমা ও জায়িন-আদিবার রিসিপশন। হানিয়াকে জাভিয়ান বলে মির্জা বাড়িতেও যাতে খবরটা পৌঁছে দেয়। এবং ঐ বাড়ির সবাই যাতে এই সপ্তাহেই এই বাড়িতে এসে পড়ে।
_____________________________
হাায়া-আশিয়ান, মেহরিমা-জাহান ও আদিবা-জায়িন আজ প্রথম বারের মতো সকলে বাহিরে বের হয়েছে সময় কাটানোর জন্য। তাদের তিন জুটিরই বিয়ের পর একের পর এক ঝামেলায় ঘোরাঘুরি মন মানসিকতা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আজ আশিয়ানই প্রস্তাব দেয় একটু আলাদা, নিভৃতে কিছু সুন্দর মুহূর্ত কাটানোর জন্য।
আশিয়ান এখন মোটামুটি ভালোই সুস্থ। মাথার ইয়া বড় ব্যান্ডেজটা খুলে ছোট্ট একটা ওয়ান টাইম লাগানো রয়েছে বর্তমানে। তারা সকলে একটা রিসোর্টে এসেছে ঘুরতে। শহর থেকে একটু বাহিরের সাইডে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা সেই রিসোর্টের নাম
❝পুষ্পের নীরব নিকুঞ্জ❞ রিসোর্টের মালিক ভদ্রলোক নিজের ও তার প্রিয়তমার নামের সাথে মিলিয়ে রিসোর্টির নাম রাখেন। রিসোর্ট টি দেশি-বিদেশি নানান ধরণের ফুল দিয়ে সুরভীত হয়ে আছে।
আশিয়ানদের প্ল্যান আজকের দিন ও রাতটা তারা এখানে কাটিয়ে কাল সকালের ব্রেকফাস্ট সেড়ে বাসায় রওনা হবে। এসেই তারা সকলে ফ্রেশ হতে চলে যায়। আধা ঘণ্টার মাঝে ফ্রেশ হয়ে সকলে বের হয় আশেপাশে ঘুরতে।
আশিয়ান-হায়া, জায়িন-আদিবা বেশ ইনজয় করছে শর্টটাইমের এই অঘোষিত ট্রিপটা। শুধু ব্যতিক্রম অবস্থানে আছে জাহান-মেহরিমা। অন্য দুটো জুটি যেখানে হাতে হাত রেখে কাঁধে মাথা রেখে হাঁটছে সেখানে জাহান এই মুল্লুকে মেহরিমা আরেক মুল্লুকে। মেহরিমা আগে আগে হাঁটছে আর জাহান তার থেকে কিছুটা পেছনে পকেটে দুই হাত গুঁজে তাকে পাহারা দিতে দিতে যাচ্ছে।
মেহরিমা শুরুতে জাহানের পাশে হাঁটতে থাকে, কিন্তু জাহান মেহরিমার দিকে খেয়াল না করেই ফোন টিপতে ব্যস্ত। আসলে সে মেহরিমার পরীক্ষা নিচ্ছে।
হ্যাঁ, পরীক্ষা। জাহান দেখতে চাইছে তার রাগ ভাঙানোর জন্য মেহরিমা ঠিক কি কি করতে পারে। অনেক তো হলো সে নিজেকে প্রকাশ করেছে, মেহরিমা এখন নিজের দায়িত্ব নিজে বুঝে নিক। বর রাগ করেছে, সে রাগ ভাঙাবে। এখন কিভাবে ভাঙাবে সেটা মেহরিমার বিষয়।
মেহরিমা মন খারাপ করে আনমনে এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে হাটছিল হঠাৎ শাড়ির সাথে বেঝে মুখ থুবড়ে পরে যেতে নিলে জাহান ঝড়ের গতিতে পেছন থেকে হেঁটে এসে মেহরিমার কোমড় আকড়ে ধরে তাকে নিজের বাহুডোরে বন্দি করে নেয়। মেহরিমা বেঁচে যায় নিচে পড়া থেকে।
মেহরিমার মাথা গিয়ে ঠায় পায় জাহানের প্রসস্থ বুকে। জাহানের হার্টবিট এতটাই জোরে বিট করছে যে, সে হয়ত নিজের হার্টবিট