# তোমাকে সাহায্য করবে ইশান। ইশান বাবাকে সরাসরি নেতিবাচক কিছু না বললেও ইশান নিজের চারপাশের লোকজন কে ঠিকই খুঁজে নিয়েছে। ইশান পেপারওয়েট ঘোরাতে ঘোরাতে বলল,
"দর্শনা তুমি কী বুঝতে পারছ তোমার কাজ কী?"
"জি স্যার। "
"কী বুঝেছ?"
"আপনার সমস্ত কাজের আপডেট আমাকে দেখতে হবে। "
ইশানের ঠোঁটে সূক্ষ্ম হাসি দেখা গেল। বলল,
"তুমি কিন্তু আমার পার্সোনাল সেক্রেটারি নও। তোমাকে ম্যানেজার পদ টা দেয়া হয়েছে। "
"থ্যাংক ইউ স্যার। "
ইশান ভ্রু নাচিয়ে কৌতুক স্বরে বলল,
"এই পদের ভার টা কিন্তু একটু বেশী। "
দর্শনাকে আরও একটু বেশী আত্মবিশ্বাসী দেখা গেল। ইশান সামনের দিকে ওর অ্যাপেল ব্র্যান্ডের ট্যাব টা এগিয়ে দিয়ে বলল,
"বিশেষ করে তোমাকে এই দায়িত্ব টা আরও একটু বেশী পালন করতে হবে। "
দর্শনা বড় স্ক্রিনের ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইলো। রুপবতী বিয়ের সাজে দেখা মেয়েটি তার অচেনা নয়। জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে রইলো ইশানের দিকে। ইশান একটু গম্ভীর গলায় বলল,
"ধরে নাও এটা একটা সিক্রেট প্রোজেক্ট। একটু কেয়ারফুলি হ্যান্ডেল করতে হবে। গট ইট। "
দর্শনা মাথা নাড়লো অনেক কিছু না বুঝেই। একদিনে এতোকিছু বুঝতে চাইলে ইশান চৌধুরী বিরক্ত হবে। তারচেয়ে ইশান ও'কে বুঝিয়ে দিক, আর ও আস্তেধীরে সব টা বুঝে নিক।
***
দর্শনাকে চৌধুরী প্যালেসে দেখে অনেকেই বিস্মিত হলো। ইশানের ম্যানেজার হিসেবে পুরুষ কাউকে আশা করেছিল। এমন মেয়েরা সাধারণত পার্সোনাল সেক্রেটারি হিসেবে ভালো মানায়। চৌধুরী প্যালেসের একটা দিক স্টাফদের জন্য বরাদ্ধ। সেখানে সব থেকে সুন্দর আর চমৎকার ঘরটা দর্শনা পেল।
তবে শিরিন একটু রোমাঞ্চিত বোধ করলেন। ইশানের মেয়েঘটিত স্ক্যান্ডাল নেই যেমন তেমনি কখনো সে সিঙ্গেলও থাকে না। পার্টিতে তাকে বেশীরভাগ সময় গার্লফ্রেন্ডদের সাথেই দেখা যায়। দর্শনাকে সম্ভবত সেরকম কিছুই ভাবলেন। শিরিন কাজরীর সঙ্গে আরও একটু বেশী নরম হবেন এখন থেকে। গরমে যে পোষ মানে না সে ঠান্ডাতে ঠিকই পোষ মানবে।
দর্শনাকে আর দশ জন স্টাফের মতোই দেখলো কাজরী। বাড়তি টেনশন হিসেবে নিলো না। তবে ওর মনে সন্দেহের বীজ বপনের দায়িত্বটুকু শিরিন অতি যত্নের সাথে করলো। কাজরীর ঘরে সে তেমন একটা যায় না। যদি প্রয়োজন হয় তবে নিজের ঘরে ডেকে নেয়। এই বিষয়টায় আলাদা একটা আনন্দ আছে। আজ এলেন। কাজরী পছন্দের সিরিজ দেখছিল। শিরিন কে দেখে টিভি অফ করে দিলো। শিরিন বললেন,
"তোমাকে বিরক্ত করলাম নাকি?"
কাজরী স্মিত হেসে বলল,
"আপনার আগমনে আমি বিরক্ত হবো! একদম নয়। "
শিরিনও স্মিত হাসলেন। দুজনেই জানে যে এই হাসিটুকু মোটেও আন্তরিকতা থেকে নয়। সহজ ভাবে কথা চালিয়ে যাবার ভান শুধু।
"বিয়ের এতোদিন হলো অথচ হানিমুন প্ল্যান করছ না তোমরা?"
কাজরীর ভ্রু কুঞ্চিত হলো। শিরিন সেটা খেয়াল করলেন না। তার হাতে একটা জুয়েলারির বক্স। সেটা ড্রেসিং টেবিলে রেখে বললেন,
"ইশান নতুন দায়িত্ব পেয়ে তো সব ভুলে গেল! তুমি তো একটু মনে করিয়ে দিতে পারতে।"
কাজরী চুপ করে রইলো। এই বিষয় টা নিয়ে ও ভেবেছে, তবে সেটা অন্যভাবে। ব্যাপার টা কিভাবে এড়ানো যায় সেটা নিয়ে ভেবেছিল। এতোদিনেও কেউ মনে করে নি দেখে স্বস্তি পেয়েছিল।
"তোমাদের হানিমুন ট্রিপ টা আমি স্পন্সর করলাম। আরও অনেকে করতে চেয়েছিল তবে আমি রাজি হইনি। চেয়েছি এই সুইট জেশ্চার টুকু আমি ইশানকে দেই। "
কাজরীর সামনে একটা এনভেলাপ এগিয়ে দিলো। অনিচ্ছ্বাস্বত্তেও কাজরীকে সেটা নিতে হলো সেই সঙ্গে ঠোঁটে ঝুলিয়ে রাখতে হলো সৌজন্য হাসি। শিরিন আবারও বললেন,
"সুইজারল্যান্ড ইশানের পছন্দের জায়গা। ঘুরেফিরে আনন্দ করে আসো। চৌধুরী সাহেব ছেলেটাকে দায়িত্বের চাপে এখনই ফেললেন! অন্তত একটা বছর যেত বিয়ের! এখন তোমাদের আনন্দ করার সময়...
"আমি ইশান কে বলব আন্টি। যদিও ইশান রাজি হয় কী না!"
শিরিন অতি বিস্ময়ের ভান করে বললেন,
"ইশান রাজী হবে না? তোমাদের মধ্যে সব ঠিকঠাক আছে তো কাজরী? এখন তো তোমাদের গোল্ডেন পিরিয়ড চলছে। প্রতিটি মুহুর্ত একজন আরেকজনের সঙ্গে স্পেন্ড করার জন্য পাগল থাকার কথা! "
কাজরী শাশুড়ীর এই কথায় লজ্জা পাবার বদলে খানিকটা বিরক্ত হলো বটে। উনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন ওদের মধ্যে তেমন অন্তরঙ্গ মুহুর্ত তৈরী হয় নি। সেটা বুঝেই এই বিষয়ে কথা বাড়াচ্ছেন।
"তোমার চুপ থাকা, ইশানের ব্যস্ততা আমাকে কিন্তু খুব চিন্তায় ফেলছে কাজরী। এভ্রিথিং ইজ ওকে?"
কাজরী হাসলো। এই হাসিটা লাজুক হাসি ছিলো। শিরিন মনে মনে একটা বিশ্রী গালি দিলেন। তিনি জানেন যে এদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত কিছু হয় নি। এটা জানার জন্য তাকে ঘরে আড়ি পাততে হয় নি। বিবাহিত দম্পত্তিদের দেখলেই বোঝা যায়। ইশান এই মেয়েটাকে বিয়ে করেছে চৌধুরী গ্রুপের কলকাঠি নাড়ানোর জন্য। ঠিক যেমন বিজনেস ডিল পেতে হলে ক্লায়েন্ট রিকোয়েরমেন্ট ফুলফিল করতে হয় তেমনই চৌধুরী সাহেব ফাঁসিয়েছে ব্যাপারটায়। আর চৌধুরী সাহেব এর হিসাবও ক্লিয়ার। আসন্ন নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ বেশ শক্ত। আখতারউজ্জামান এর সাথে সখ্যতা থাকলে এই নির্বাচনে তার জেতা কেউ আটকাতে পারবে না। শিরিন সব বুঝতে পেরেছেন। এখন শুধু সার্কাস দেখবে। এই বেপরোয়া ঘোড়াকে কিভাবে লাগাম দিয়ে আটকানো হয় সেটাও দেখবেন।
"আপনি কী আমাকে নিয়ে কিছু ভাবছেন? "
শিরিনের ধ্যান ভাঙলো হঠাৎ। কাজরীর কৌতুহলী দৃষ্টিতে অপ্রস্তুত হলেন যেন একটু।
"হ্যাঁ... তোমাদের নিয়েই ভাবছি। সম্পর্কের সুতোটা আলগা রেখো না কাজরী। শক্ত হয়ে বাঁধো। চৌধুরীদের রক্তে কিন্তু অনেক ইতিহাস আছে। "
Mdemran11
Slet kommentar
Er du sikker på, at du vil slette denne kommentar?