# করে কিল বসালো। হঠাৎ আঘাতে ব্যথায় চোখমুখ কুচকে ফেলল সে। চমকে তাকালো শাকিলের দিকে। শাকিল একটা চেয়ার টেনে বসে তার সামনে। তার রাগত মুখটার দিকে চেয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে,
-’ কি হে নিহাদ ব্রো! কি ভাবো এতো? তোমার আবার..
শাকিল আর কিছু বলতে পারল না। তার আগেই তার মুখ চেপে ধরল অপর পাশের মানুষটি৷ তার কন্ঠে হুশিয়ারি, –‘ চুপ! একদম চুপ! বলেছি না এই নামে ডাকবি না আমায়। তাও বারবার এই নামে ডাকিস কেন? ’
শাকিল হাত ছাড়িয়ে নিল। তার হুশিয়ারি নিয়ে তার মধ্যে কোনো হেলদোল দেখা গেল। সে আগের ন্যায় বলল, -‘ কি মাম্মা! নিহাদ বলি বা নিষাদ সেই তো এক-ই হলো। আর তুমি তো নিষাদ নও, তুনি নিহাদ৷ আমার বন্ধু নিহাদ। তাই আমি তোমাকে এই নামেই ডাকব। ’
-‘ এভাবে পাব্লিক প্লেসে না।’
-‘ পাব্লিক কি শুনতে আসছে আমি তোমায় কি বলে ডাকছি? না তো। তাই এই নাম নিয়ে আর তর্ক করিস না ভাই আমার সাথে৷ আচ্ছা বল এতো ভাবনা কিসের? ওয়াইনের বোতলও এখনো সেভাবেই
আছে। ’
নিহাদ অবহেলায় ফেলে রাখা বোতলের দিকে তাকালো, ফের ভাবুক হতে দেখা গেল। শাকিল তার দিকে চেয়ে থেকে সন্দেহ কন্ঠে শুধালো,
-‘ ওই মেয়েটার কথা ভাবছোস? কি যেন নাম মেয়েটার, ওহ মনে পড়েনা কেন? মুন্নি না মনি কি যেন? ’
-‘ মৌনি। ’
-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ, ওর কথা ভাবছোস তাই না? ওই মেয়ের কথা এতো ভাবছোস ক্যান মাম্মা? ’
-’ তুই বুঝতে পারছিস না শাকিল, মেয়েটার ভাবনা আমার মাথা থেকে যাচ্ছেই না। শুধু মনে হচ্ছে দেয়ার ইজ সামথিং রং। মেয়েটার মধ্যে কিছু একটা গলদ তো আছেই। ’
-’ সাধারণ একটা মেয়ে, তুই ওরে নিয়ে এতো ভাবছোস বলেই এমন মনে হচ্ছে। ’
-’ উহু, সাধারণ নয় ইয়ার, সাধারণ নয়। কিছু তো একটা আছে এই মেয়ের মধ্যে। যে জন্য কল্প চৌধুরী, অভ্রনীল আনসারী দুজনের নেক নজরে আছে এই মেয়ে। দুজনেই এই মেয়েকে প্রটেক্ট করা চেষ্টা করছে। বিশেষ করে এই কল্প। ’
-‘ অভ্রনীল তোদের ভার্সিটির ওই হ্যান্ডসাম মাষ্টারটা না? লম্বা করে শ্যামলা? ’
নিহাদ মাথা নাড়ল। শাকিল বিস্ময় নিয়ে শুধালো,
-‘ বলিস কি ভাই? কল্পরটা নাহয় মানলাম কিন্তু এই অভ্রনীলের নজরে এই মেয়ে পড়লো কীভাবে? ’
-’ সেটাই তো আমিও ভাবছি। এই তিন বছরে আমরা অভ্রনীলকে ভেজিটেরিয়ান বলেই চিনতাম। এতো মেয়ে ওর সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করেছে কারো সাথে তেমন কথাই বলেনি। কথা বলবে কি, ফিরে তাকায়ও নি। রুবাবের ফ্রেন্ড সাবা, আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলেই আছে। এই সাবাও ওর সাথে লাইন মারার ট্রাই করেছে, পেয়েছে ঘোড়ার ডিম। ঘোড়ার ডিমের সাথে অপমান ফ্রি। সেই অভ্রনীল মৌনির মতো লো ক্লাস একটা মেয়ের সাথে যেচে কথা বলতে যাচ্ছে, তাকে গাড়িতে লিফট দিচ্ছে, ব্যাপারটা ঠিক সুবিধার লাগছে না। ’
-’ দেখ হয়তো প্রেমে-ট্রেমে পড়ে গেছে। ভেজিটেরিয়ান থেকে নন-ভেজিটেরিয়ান হয়ে গেছে। ’
কথাটা বলে খিকখিক করে হাসলো শাকিল। নিহাদ বিরক্তবোধ করল।
-’ স্টপ লাফিং৷ এই মৌনিকে যেমন অদ্ভুত লাগে আমার কাছে তেমনি এর সাথে জড়িত সকল কিছুই অদ্ভুত লাগছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা হচ্ছে, সেটা আমি টের পাচ্ছিনা। ’
-’ তুই একটু বেশি ভাবছিস ভাই, এখানে কি আবার হবে? বিষয় তো সিম্পল। মেইবি এই স্যার, কল্প দুজনেই মৌনির প্রেমে পড়েছে..
-’ উহু। আমার সেটা মনে হচ্ছে না। ইউ নো হোয়াট, স্যারের একটা ছেলে আছে। এই স্যার যে বিবাহিত সেটা আমরা কেউই জানতাম না। হুট করেই এই স্যার তার তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে একদিন ভার্সিটিতে হাজির হলেন। সেই ছেলেকে নিয়ে সোজা মৌনির কাছে গেলেন, মৌনির আবার সেই ছেলেকে নিয়ে কতো আদিখ্যেতা। এই বিষয়টা আমার কাছে খটকা লাগছে। মানলাম সে বিবাহিত, তার একটা বাচ্চা আছে কিন্তু যদি সে নতুন করে কোনো সম্পর্ক শুরু করতে চায় অবিয়েসলি সে নিজের অতীতকে লুকিয়ে রাখবে। কিন্তু তিনি সেটা না করে নিজের বাচ্চা সমেত হাজির হচ্ছেন মৌনির সামনে। এদিকে আর একজন আছে কল্প চৌধুরী, ভার্সিটির প্লে বয় নামে খ্যাত কল্প চৌধুরী। যে কল্প চৌধুরী সারাদিনে চৌদ্দটা মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করে বেড়ায়, সেই কল্প চৌধুরী মৌনির মতো একটা মেয়ের পিছে পড়ে আছে। অনলি মৌনি! ওর গার্লফ্রেন্ড লিস্টে বোধহয় এর থেকে সুন্দর সুন্দর মেয়েরা আছে, কিন্তু ও কখনোই ওর সেইসব সুন্দরী গার্লফ্রেন্ডদের সিরিয়াস না। কার কি হলো, কে মরলো নাকি বাঁচলো সেসব সে কখনোই দেখে না। অথচ মৌনির মতো সামান্য একটা মেয়েকে আমরা বুলি করার জন্য কীভাবে থ্রেট দিল! ’
-’ থ্রেট দিয়েছিল! ’
-‘ ঠিক থ্রেট নয় ইয়ার, বলেছে ওর কাজিন হয় মৌনি,, ওর থেকে যেন দূরে থাকি। তারপর আবার আমার পরিচয় নিয়ে সূক্ষ্ম খোটা৷ এই কল্প চৌধুরী বারবার আমার দূর্বল জায়গাতেই আঘাত করছে। আমার দূর্বলতা আমার পরিচয়,এই নিষাদ নামক পরিচয়। ও সেটা নিয়েই বারবার আমাকে খোচাচ্ছে। আমার ভয় হচ্ছে যে ও আমার পরিচয় নিয়ে কিছু সন্দেহ করছে না তো? কিছু জানতে পারেনি তো? আজকাল বিলু ওর সাথে বেশ টাইম স্পেন্ড করে। বিলু কিছু বলে দেয়নি তো! ’
-‘ বিলুর সাথে তোর সম্পর্ক কেমন? ’
-‘ জানিসই তো। আমায় দেখতে পারেনা। দেখলেই তেলে বেগুনে জ্ব/লে। আমি যে ওর ভাই হই এটাও মানে না কখনো। ’
-’ আই এম সিউর, তোর বোন ওকে সবকিছু বলে দিয়েছে, যে তুই নিষাদ নয়, নিষাদ রুপী নিহাদ। সেজন্য ও তোর পরিচয়ের পিছনে পড়েছে। ’
-‘ আমারও তাই মনে হয়। ’
ভাবনায় ডুবতে দেখা গেল নিহাদকে৷ সে ভাবুক কন্ঠে বলে, -’ আমার পরিচয় যদি জেনেও যায় তাহলে এখনো চুপ আছে কেন এই ছেলে? চুপ থাকার তো কথা নয়। তবুও চুপ আছে। হোয়াই? ’
শাকিল কি যেন ভাবল। অতঃপর বলল,
-‘ তোর বোনের তোর উপর রাগ আছে, কল্পর তোদের পরিবারের উপর৷ অন্যদিকে নিষাদ কোমলের কেচ লড়ছিল, কোমলের কেচ লড়তে লড়তেই সে মারা যায়। সেদিক থেকে নিষাদ