#মেলে তাকানোর চেষ্টা করেও লাভ হলো না।সবকিছু ঝাপসা। সে কোথায় আছে, কীভাবে এখানে এল, এমনকি সে শুয়ে আছে না বসে, সেটাও বোঝার মতো ক্ষমতা নেই তার।
অবচেতন মন শুধু এটুকুই জানে জোসেফ এখানেই তার আশেপাশে আছে। সারারাত ছিল। তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল সারা রাতভর। কতক্ষণ ধরে সে ঘুমিয়ে ছিল সে তাও জানেনা। কিন্তু তার শরীরের প্রতিটি শিরায়, ঘাড়ের পাশে, আঙুলের ফাঁকে এখনো জোসেফের স্পর্শ লেগে আছে সেটা অনুভব করতে পেরেছে সে।
_____________
"তুমি ওকে খুঁজলেও পাবেনা জোসেফ। আর্য কল্পকে নিয়ে যেতই। আমি তোমাকে অনেকবার বলেছি। কিন্তু তুমি শুনতে চাওনি। তুমিও দেওয়ান পরিবারের সদস্যদের মতো বিষয়টা আমলে নাওনি।"
জোসেফ মায়ের দিকে ফিরে তাকালো। চোখজোড়া টকটকে লাল। জাহানারা বেগম থামলেন না। বললেন,
"হতেও পারে কল্পও সেটা বুঝতো। তার পক্ষ থেকেও কিছু ছিল। তাই তো জেসিকে সে বারণ করে দিয়েছিল..
জোসেফ মাকে থামিয়ে বলল,"এরকম কিছুই ছিল না মা। আমি কল্পকে চিনি। ও আর্যাব খানকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে। ওই নামটা অব্দি সে নিতে চাইতো না। ওরকম একটা ঘৃণ্য পুরুষ মানুষের সাথে সে স্বেচ্ছায় যাবে সেটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলো না। ড্রাগস দেয়া হয়েছে ওকে। ভয়ংকর ড্রাগস। এতকিছু শোনারও পরও তুমি কি করে কল্পর উপর আঙুল তুলছো আমি জানিনা।"
জাহানারা বেগম বললেন,"আর কোথায় খুঁজবে তুমি কল্পকে? সারারাত খুঁজলে, পেলে না। আর কিছুক্ষণ পর ভোর হবে।"
জোসেফ সবেমাত্র ক্লাবে এসে বসেছে। সারারাত ছোটাছুটির উপর ছিল। আবার কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে যাবে। কাবির দেওয়ানের ওয়াইফকে খুঁজে পেতে হবে আগে। তাহলে আর্যাব খানের খোঁজ পাওয়া যাবে। পুলিশ আর্যাব খানের নাগালও পাচ্ছে না। সন্দেহ করা হচ্ছে সে কোনো গুপ্ত জায়গায় গা ঢাকা দিয়েছে।
জোসেফ মায়ের সাথে আর তর্কে না গিয়ে চুপ করে বসে রইলো। দরদর করে ঘামছে তার কপাল।
কল্পনার শেষ মেসেজটা বারবার মনে পড়ছে,
"আমি ছবি পাঠাচ্ছি না। সামনাসামনি বউয়ের সাজে দেখবেন।"
কিন্তু দেখা আর হলো না। কিচ্ছু হলো না। এক রাতেই সব শেষ। সব স্বপ্ন, সব পরিকল্পনা, সব অপেক্ষা শেষ। এমন একটা জায়গায় গিয়ে শেষ হয়েছে যেখানে দাঁড়িয়ে জোসেফ বুঝে উঠতে পারছেনা তার কি করা দরকার এই মুহূর্তে।
আর্যাব খানের নামটা মনে হতেই তার চোয়াল শক্ত হয়ে এল। নিজের বোনকে ঠকানোর অপরাধে যে ছেলে একটা মানুষকে মৃত্যু দিতে পারে সেই ছেলে কি কখনো অন্য একজনের বোনের ইজ্জত নিতে পারে?
নাকি তাদের বেলায় সব নিয়ম উল্টো? শুধু অন্যদের বেলায় শাস্তি প্রযোজ্য, আর তাদের বেলায় সব খুন মাফ?
র্যাবের চৌকস অফিসাররা বিষয়টা শুরুতেই পারিবারিক বিবাদ বলে পাশ কাটাতে চাইছিল। জোসেফ বুঝে গেছে আর্যাব খানের বিরুদ্ধে কেউ সহজে মুখ খুলবে না। উপরে যারা বসে আছে, তারা জানে আর্যাব খান কে? তার হাত কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে সেই হিসেব ভালো করেই রাখে তারা।
আর্যাব খান যদি এখনই ফিরে আসে তবুও আমিন খান তাকে আইনের গণ্ডির বাইরে রাখবে। এমন সাক্ষী দাঁড় করাবে যেগুলো চোখের সামনে সত্য থাকা সত্ত্বেও মিথ্যে প্রমাণ করে ফেলবে সব।
জোসেফের মুঠো শক্ত হয়ে উঠলো। রক্তচাপা রাগ তার আঙুলের ফাঁক গলে পড়তে চাইছে। আর্যাব খান যদি কল্পনার কোনো ক্ষতি করে, যদি এক চুল স্পর্শও করে তাকে… তাহলে সেই জানোয়ারকে সে গুলি করবে নিজের হাতে। দরকার হলে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজে জেলে যাবে। কিন্তু মারবেই।
___________
ইথিকার ফোন নম্বরের শেষ ট্রেস পাওয়া গিয়েছিল। সেই স্থানেই পৌঁছেছে সবাই। সারারাত নির্ঘুম, অনাহারে আছে কাবির, কাদিন, কাসেদ, জোসেফ সবাই। তারা যে জায়গায় এসেছে তা ভয়ানক নির্জন, অন্ধকারে ডুবে থাকা একটি পরিত্যক্ত এলাকা। চারপাশে কোথাও কোনো জনবসতি নেই।
একটি সরু, অগোছালো রাস্তা চলে গিয়েছে ভেতরে। জায়গাটা ভীষণ নির্জন। এখানে ইথিকা কি করছিল তা সম্পর্কে ধারণাও করতে পারছে না কাবির।
চার-পাঁচজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা উপস্থিত সেখানে। তাদের মধ্যে একজন মহিলা জিন্নাত সিদ্দিকী। তিনি একজন দক্ষ সাইবার স্পেশালিস্ট। তিনি স্পষ্ট বললেন,
"আনঝিল খানম সেসময় এখানেই ছিলেন। হয়তো আশেপাশে আছে এখনো।"
জোসেফ বলল,"তাহলে আমাদের খুঁজে দেখতে হবে। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই।"
কাবির বলল,"আপনি নিশ্চিত?"
জিন্নাত সিদ্দিকী বললেন,"ইয়েস মিস্টার দেওয়ান। আমাদের এই সূত্র ধরেই এগোতে হবে।"
কাদিন জানতে চাইল,"এই পথটা কোথায় গিয়ে থেমেছে?"
কাবির বলল,"তুমি দেখতে পাচ্ছ না এদিকে মানুষজনের হাঁটাচলা নেই?"
কাদিন তার কথার জবাবে বলল,"তাহলে ওরা এদিকেই গিয়েছে সেটা নিশ্চিত কিভাবে হলেন?"
কাবির পথটার দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর ভেবে বলল,
"আমাদের শেষ অব্ধি দেখতে হবে। তাহলে কিছু একটা আন্দাজ করা যাবে। আর কিছু করার নেই।"
জোসেফ তাড়া দিল। সে একটুও সময় নষ্ট করতে চাইছেনা। সে নিশ্চিত আনঝিল খানম যেখানে উপস্থিত সেখানে আর্যাব খানও আছে। এমনকি কল্পনাও।
__________
কল্পনা নিঃশব্দে ঘুমিয়ে আছে বিছানায়। জানালাটা টেনে বন্ধ করে দেওয়া। বাইরের হাওয়া কিংবা শব্দ যেন তার স্বপ্নে ব্যাঘাত না ঘটায় তার জন্য। এরূপ নিস্তব্ধতায় হঠাৎ নিঃশব্দে ঘরে প্রবেশ করে একজোড়া পা। সাদা মার্বেলের মতো মসৃণ ত্বক, নখে হালকা রঙের পালিশ। সেই পায়ের ছায়া পড়ে বিছানার পাশে। ধীরে ধীরে দেখা মেলে পুরো অবয়বের এক নারী। অলঙ্ঘনীয় সৌন্দর্যে মোড়া সে। মাথার