দীর্ঘ ১৫ বছর পর আমেরিকা থেকে দেশে ফিরছেন খান বাড়ির বড় ছেলে শেহরাজ খান আকাশ। রাজনৈতিক সহিংসতার জেরে অল্প বয়সেই দেশের মাটি ছাড়তে হয়।
আজ এতো বছর পর আবার দেশে ফিরতে পারছে এতেই আত্মহারা হয়ে পরেছেন শেহরাজ খান আকাশ।
দুপুর ২ টার ফ্লাইট। নিউইয়র্কের বাসা থেকে বিদায় নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় আকাশ। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যায় এয়ারপোর্টে।
এই ফ্লাইটের বিশেষ ব্যক্তি হচ্ছে শেহরাজ খান তাই ওনার খেদমতে কোনো কমতি রাখছে না কর্তৃপক্ষ।
বিমান দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিলো। আকাশ জানালার পাশে বসে পুরোনো সোনালী অতীত মনে করছে। চলুন এই ফাকে আমরা সবার পরিচয় জেনে আসি,,,,
শেহরাজ খান আকাশের বাবা বিরাট বড় রাজনীতিবিদ + ব্যবসায়ী। দেশের সবাই তাকে এক নামে চিনে আজাদ খান।
আর মায়ের নাম আয়েশা খান।
আকাশের মেঝো চাচার নাম রফিক খান। ওনার দুই ছেলে। বড়টার নাম আরিফ খান আর ছোটটার নাম আরিয়ান খান।
আর আকাশের ছোট আন্টির নাম সুমি খান। আর আঙ্কেলের নাম মনির খান। ওনার ২ মেয়ে, বড় মেয়ের নাম ফারিহা খান দিবা আর ছোট মেয়ের নাম সামিয়া খান নিলা।
প্রায় ২৪ ঘন্টা জার্নি শেষে শেহরাজ নিজ মাতৃভূমিতে পা রাখতে পারলো। হয়রত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাহিরে হাজার হাজার লোক এসেছে। তাদের ভবিষ্যত নেতাকে একটিবার স্বচোখে দেখার জন্য।
আজাদ খান গেইটের বাহিরে ছেলের জন্য অপেক্ষা করছে।
সাথে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও উপস্থিত হয়েছে।
বিশাল জনসমাগম সামাল দিতে পুলিশ, সেনাবাহিনী, RAB, সহ বেশ কয়েকটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাঠে নামানো হয়েছে।
মেয়েরা বাহিরে দাড়িয়ে অধীর আগ্রহে গেইটের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে, কখন আসবে তাদের স্বপ্নের রাজকুমার।
কিছুক্ষণ পর কাঁধে একটি ছোট ব্যাগ নিয়ে বের হচ্ছে এক সুদর্শন যুবক। বুকের দিকে শার্ট কিছুটা খুলা এতে সাদা লোমহীন বুক ভেসে উঠছে মেয়েদের নয়নে।
১৫ বছর পূর্বের আকাশের সাথে বর্তমান আকাশের আকাশ পাতাল পার্থক্য। দেখেও যেনো চেনার উপায় নেই। ৬ ফুট লম্বা ছেলেটা গায়ের রঙ ফর্সা, গাল ভর্তি ছাপ দাঁড়ি, চুলের স্টাইল কোনো নায়কের থেকে কম না তার ফ্যাশন আর লুকে যেকোনো মেয়ে এক দেখাতেই প্রেমে পরতে বাধ্য।
শেহরাজ খান আকাশ প্রথমেই তার বাবাকে কে জড়িয়ে ধরলেন। আজাদ খানও নিজের কলিজার টুকরা নয়নমণিকে এতোদিন পর বুকে নিতে পেরে খুবই আনন্দিত। খুশিতে তার চোখে জল চলে আসছে।
এদিকে উপস্থিত জনতা বাপ ছেলের এমন মুহুর্ত দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে যায়। সবার চোখের কোনেই কিছুটা জল জমে গেছে নিজের অজান্তে।
আকাশ তার বাবাকে জিজ্ঞেস করলো, বাবা বাসার অন্য কাউকে তো দেখছি না তারা কোথায়? নাকি ছেলেকে ভুলে গেছে?
আজাদ খান, বাবা তুমি তো জানো দেশে আমাদের কত শত্রু। কখন কোন বিপদ আসে তাতো বলা যায় না। তাই আমিই তাদেরকে আসতে নিষেধ করেছি। ওরা বাড়িতে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
আকাশ কিছুই বললো। আনমনে কি যেনো ভেবে বললো, চলো বাসায় যাই। খুব ট্রায়ার্ড লাগছে।
আজাদ খান তখন পাশে থাকা তাদের দলের এক লোককে ইশারায় মিডিয়ার সাথে কথা বলে তাদেরকে সরিয়ে ফেলতে বলে ছেলেকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
বাসায় পৌছাতে প্রায় ৪ টা বেজে যায়। আকাশ বাড়ির ভেতর ঢুকে। আকাশকে দেখে সবার মধ্যে হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে। আকাশের আম্মু দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরলেন ছেলেকে। আবেগাপ্লুত হয়ে মাকে জরিয়ে ধরলো আকাশ।
মমতাময়ী মাকে সেই ১৫ বছর আগে ছুঁয়েছিল আজ এত বছর পর মায়ের ছোঁয়া পেলো আকাশ। মা চাচিদের সালাম করলো।
সোফায় বসিয়ে ছেলেকে একের পর এক শরবত নাস্তা দিতে ব্যস্ত সবাই। কিছুক্ষণ পর রুম থেকে বেরিলে এলো আরিফ ৷ সে আকাশের ভাই কম বন্ধু বেশি। ১৫ বছরে বাসায় কখন কি হয়েছে সব খবরই আকাশ জিসানের কাছ থেকে নিতো।
বয়সে আকাশের ১ বছরের ছোট আরিফ।
এতো বছর পর ভাইকে দেখে জড়িয়ে ধরলো আরিফ। আকাশও কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে তারপর জিজ্ঞেস করে, কিরে কেমন আছিস? পড়াশোনা কেমন চলে?
আরিফ, জি ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আর পড়াশোনাও মুটামুটি ভালো।
আকাশ, মুটামুটি কেন?
আরিফ, বড় চাচ্চুর সাথে মাঝে মাঝে রাজনৈতিক প্রোগামে যেতাম তাই পড়াশোনায় তেমন সময় দিতে পারিনি।
আকাশ, বাহ এটাতো ভালো কথা কিন্তু পড়াশোনা না করলে কোথাও দাম নাই এটাও মাথায় রাখিস।
আরিফ মাথা নাড়ালো। আকাশ জিজ্ঞেস করলো আরিয়ান কোথায়?
আরিফ, ঘুমাচ্ছে। তোমার জন্য এতোক্ষণ জেগে ছিলো কিন্তু একটু আগেই ঘুমিয়ে গেছে।
এভাবেই দুই ভাই গল্প করছিলো তখন রান্না ঘর থেকে সুমি খান বের হয়ে আসলেন তাদের কাছে।
সুমি খান, খাবার যেমন দিয়ে গেছি তেমনই আছে। খাওনি কেন আকাশ।
আকাশ, ফুপি আমার খিদে নেই তাই খাবো না। এগুলো নিয়ে যাও।
সুমি খান, খিদে নেই মানে কি? ২৪ ঘন্টা জার্নি করে আসছো। তারাতাড়ি খেয়ে নেও।
আকাশ, বিমানে হালকা পাতলা খেয়েছি ফুপি আর খাওয়া সম্ভব না।
সুমি খান আর কিছু বললো না। খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে আকাশের পাশে বসে খাবার মাখাতে লাগলো। আকাশ কিছুই বুঝছে না কি হচ্ছে এখানে।
সুমি খান, কোনো কথা না বাড়িয়ে হা করো।
আকাশ কিছু বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু সুমি খান চোখ রাঙ্গিয়ে ওর দিকে তাকানোয় বাধ্য ছেলের মতো হা করে খেতে থাকে।
এদিকে এসব দেখে আরিফ এমন এক কথা বলে উঠে যা শুনে আমি পুরাই হার্ট অ্যাটাক করার মতো হয়ে গেছি
চলবে,,,,,
গল্পের পরবর্তী পার্ট পড়তে আমাদের পে*জটি ফ*লো করুন
তুই_আমার_বা_পাঁজর
আকাশ_খান
সূচনা_পর্ব
পর্ব_১