ঘেঁষে দাঁড়িয়েও মনে হলো তারা দু'জন আজকাল দুই মেরুর প্রাণী। অপরিচিত দু’টো আলাদা রাস্তার পথিক ওরা। অথচ একসময় কতই না নৈকট্য ছিলো তাদের! একসময় একশো কিলোমিটার দূরে থাকলেও মনে হতো দু'জনে কতটা কাছাকাছি, পাশাপাশি আছে। আর আজ?
নিরু গোপনেই লুকিয়ে ফেললো হতাশার শ্বাসটা। মেঘমন্দ্র স্বরে বলল, “আচ্ছা, আমি যাই তাহলে।”
“ঠিক আছে।” ব্যস্ এতটুকু বলেই তুহিন নিরুকে রিকশা ঠিক করে দিলো। নিরু ব্যথিত নয়নে সবটাই অবলোকন করল। আজকাল তার অভিমানী গলার স্বর, তার দুঃখী চোখ কি চিনতে পারছে না তুহিন? আজকাল তুহিন কি আর তার মনের খবর রাখছে না?
নিরু রিকশায় চেপে বসলো। তবুও শেষবার সম্পর্কটাকে আগের মতন করার প্রচেষ্টায় বলে উঠল, “তুমি যাবে সাথে?”
তুহিন চোখে চোখ রাখলো না। কী এক অন্য ধ্যানে যেন তার মন, মস্তিষ্ক ব্যস্ত। কেবল আনমনে বলল, “না, তুমি যাও।”
নিরু হাসলো। হাতের মুঠোয় থাকা তুহিনের সবচেয়ে পছন্দের কাঠগোলাপটা আর এগিয়ে দিলো না তুহিনের দিকে। বরং রিকশা ছাড়ার আগ মুহূর্তে বলে উঠল,
“লোক বলে, অতি প্রেম একসময় ফুরিয়ে আসে। তখন প্রেম আর মুগ্ধতা তৈরি করতে পারে না। আমি তখন খুব রেগে যেতাম এই কথা শুনে। প্রেম আবার ফুরিয়ে যাওয়ার জিনিস না-কি! অনুভূতি কখনো ফুরায় নাকি? এমন হাজার খানেক প্রশ্নই আমায় রাগিয়ে দিতো। আজ বুঝলাম, সত্যিই প্রেম ফুরিয়ে যায়। সত্যিই প্রেম একসময় পুরোনো, আটপৌরে হয়ে পড়ে থাকে পৃথিবীর এক কোণায়। প্রেম যতটাই অতিরঞ্জিত ততটাই ব্যথাময়। তবে দুঃখ কি জানো? সম্পর্কে থাকা দু'জনের কাছে আসলে প্রেম পুরোনো হয় না। পুরোনো হয় একজনের কাছে। তাই সে ছুঁড়ে ফেলতে পারে নির্দ্বিধায়। কিন্তু ঐ যে দ্বিতীয় পক্ষ, যে প্রেমকে তখনও মুগ্ধতা ভাবে, কষ্টটা মূলত তার হয়। সে কেবল এই একটা জিনিস ভেবেই জীবন পার করবে যে, এত প্রেম কীভাবে কীভাবে ফুরিয়ে যায়!”
নিরু কথা শেষ করেই তাড়া দেখালো রিকশাচালককে। তুহিন তখনও কাঠের পুতুলটার মতন দাঁড়িয়ে আছে। নিরুর কথার পরিবর্তে তার বলা বাকি ছিলো কত কিছুই কিন্তু মুখ ফুটে বলার ইচ্ছে হলো না আর। নিরুর অভিমান আয়েস করে ভাঙাতেও গেলো না। কেবল তাকিয়ে রইলো নিরুর যাওয়ার পানে।
সবার জীবনেই এমন অনেক সময় আসে যখন বসন্ত কেবল হৃদয় তোলপাড় করা ব্যথা হয়ে থাকে। প্রেমের ফুল নেতিয়ে যায়৷ গোলাপের ডালের কাঁটাটাই হয় প্রেমের সারাংশ। তুহিনের হয়তো এমন সময়টাই চলছে!
চিত্রার রিকশা তখন কেবল শাহবাগ ছেড়েছে। এর মাঝেই তুমুল বৃষ্টির তোপে সে ভিজে জড়োসড়ো হয়ে গেছে ঠান্ডায়। নিউ মার্কেটের রোডটায় জল উঠেছে হাঁটু সমান। কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই যেন ঢাকা ডুবে যাচ্ছে অবস্থা। জলের জন্য রিকশা এগিয়ে যাচ্ছে না। রিকশাচালক বেশ ক্লান্ত হয়ে অতঃপর থামিয়ে দিলেন রিকশাটি। ঘাড় ঘুরিয়ে চিত্রার দিকে তাকিয়ে যুদ্ধে হেরে যাওয়া অপরাধীর ন্যায় বললেন,
“আম্মা, রিকশা তো আর আগায় না।”
রিকশা চালকের চেয়েও বেশি অসহায় স্বরে চিত্রা শুধালো, “আর কি একটুও যাওয়া যাবে না, মামা?”
“না, আম্মা। কষ্ট কইরা আপনে পেছনের গলি দিয়া হাঁইট্টা চইল্যা যান। মেইন রোডে তো অনেক পানি। ঐ গলিতে এত পানি উডে নাই।”
আ
Read More