#ব্যক্তি হচ্ছে এই বাড়ির বড় মেয়ে স্নিগ্ধা। দুপুরের পর থেকে সে তার রুমে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।
কেটে যায় আরো প্রায় ৩০ মিনিট। এতক্ষণে রান্নাবান্না সব শেষ। সিকদার বাড়ির তিন গিন্নি ডাইনিং রুমে খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখছেন। এরমধ্যেই আধঘুমে ঢুলতে ঢুলতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে স্নিগ্ধা। দেখে মনে হচ্ছে তার ঘুমের রেশ স এখনো কাটেনি। স্নিগ্ধার মা অর্থাৎ সালমা বেগম মেয়ের দিকে তাকায় মেয়েটা কে কেমন উশকো খুশকো লাগছে চোখগুলো ফোলা ফোলা। নিশ্চয়ই মেয়েটা এতক্ষণ কেঁদেছে। কাঁদবে নাইবা কেন দুপুর দিকে যা হল তা তো আর বলার মত না। সে মনে মনে ভাবল। "ছেলেটা যে, এমন কেন করলো।"
~আম্মু ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে আমাকে একটু খাবার দাও প্লিজ।
মেয়ের কথায় ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসে সালমা বেগম। এতক্ষণে স্নিগ্ধা এবং বাড়ির সকলেই ডাইনিং টেবিলে এসে বসেছে। সালমা বেগম আবার মেয়ের দিকে তাকায় তারপর কি যেন একটা মনে করে বলে।
~স্নিগ্ধা একটু পরে বসো মা।
~কেনো আম্মু?
~সবাই তো এখানে আছে কিন্তু যার জন্য এত কিছু রান্না সে তো এখনো আসলো না তুমি উপরে যাও ঋষিকে বলো নিচে ডাকছে।
~কোন ঋষি?
স্নিগ্ধার কথায় সবাই বিষ্ময়নে স্নিগ্ধার দিকে তাকায়। সবার রিঅ্যাকশন দেখে স্নিগ্ধা খানিকটা ঘাবড়ে যায়।
~আরে আরে আমি কি করলাম এভাবে তাকানোর কি আছে বললেই তো হল কে এসেছে।
~কেন তুমি জানো না? রিমি ঐশী ওরা তোমাকে কিছু বলেনি?
~না তো।
স্নিগ্ধার ছোট চাচার স্ত্রী সাহিদা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে।
~তোমার বড় ভাই ঋষি। সে ফিরে এসেছে আমরা ভেবেছি তোমাকে হয়তো ওরা সবটাই বলেছে তাই তোমাকে কিছু জানানো হয়নি। আর এমনি তেও যা যা হল ভেবেছি তুমি ডিপ্রেশনে আছো তাই তোমাকে আর কেউ বিরক্ত করেনি।
সাহিদা বেগমের কথা শুনে ঐশী এবং রিমি মুখ টিপে হাসে। আর অন্যদিকে স্নিগ্ধা টেবিল ছেড়ে এক লাফে দাঁড়িয়ে পড়ে। তারপর চিৎকার করে বলে।
~কি ঋষি ভাই ও মাই গড। তোমরা আমাকে বল নাই কেন যে ঋষি ভাই এসেছে। সেই ছোটবেলায় দেখেছি চেহারাটা পর্যন্ত মনে নেই আর এত বছর পর আমার ভাইটা দেশে ফিরেছে আর তোমরা আমাকে কিছু জানালেও না? আমি সত্যি হতাশ।
শেষের কথাটা স্নিগ্ধা ঠোঁটটা পাউট করেই বলে। স্নিগ্ধার অভিনয় দেখে সবাই হেসে ফেলে, কিন্তু আরাফাত শিকদার এবং আমিন শিকদার ও জাফর শিকদারের মুখে নেই কোন হাঁসি বা কোন উজ্জলতা।
~আচ্ছা বাবা সরি এখন যাও তো ঋষি কে ডেকে নিয়ে আসো।
~নাহ,,,,
হঠাৎ আরাফাত সিকদারের চিৎকারে সবাই চমকে তাকায় তার দিকে। আরাফাত সিকদার সবার এরকম চাহনি দেখে আমতা আমতা করে বলে।
~মানে বলতে চাইছি স্নিগ্ধার যাওয়ার কি দরকার ঐশী আছে তো ঐশীকে পাঠাও। দুপুরের ঘটনায় স্নিগ্ধার মন এমনিতেই ভালো নেই। তাই বলছিলাম আরকি।
~আরে আব্বু তুমিও না। আমি কি বলেছি আমার মন ভালো নেই আমি তো এখন ফুল ফ্রেশ আছি। আচ্ছা তোমরা অপেক্ষা করো আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।
কথাটা বলেই ওপরে উঠে চলে যায় স্নিগ্ধা। আরাফাত সিকদার করুণ চোখে তাকায় তার ছোট ভাই আমিন শিকদারের দিকে। আমিন সিকদার চোখের ইশারায় তাকে আশ্বস্ত করে। স্নিগ্ধা নাচতে নাচতে উপরে চলে যায় যেতে যেতে থেমে ঋষির দরজার সামনে। এতক্ষণ লাফালাফি করলেও দরজার সামনে আসতেই স্নিগ্ধার কেমন যেন লাগছে। বুক ধরফর ধরফর করেছে হাত পা কাঁপছে। এত বছর পর নিজের ভাইকে দেখবে স্নিগ্ধ ভাবছে ঋষি কি খুব বেশি রাগী? আচ্ছা ঋষিকে সে কি বলে ডাকবে আপনি নাকি তুমি? এইসব আজেবাজে কথা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিল স্নিগ্ধ। কিন্তু তখনই বিকট শব্দে ঋষির রুমের দরজাটা খুলে যায় স্নিগ্ধা চমকে তাকায় সামনের দিকে। সামনের দিকে তাকাতেই স্নিগ্ধ হা হয়ে যায়। কারণ তার সামনে অতি নিকটে দাঁড়িয়ে আছে একজন বলিষ্টবান সুপুরুষ। বর্তমানে স্নিগ্ধার মাথা ঠেকে আছে লোকটির বুকে। স্নিগ্ধা তার নাকে ডার্ক সুগন্ধির একটি স্মেল পায়। স্নিগ্ধা বড় করে নিঃশ্বাস নেয়।
~হোয়াট দা হেল ইডিয়েট।
ঋষির হঠাৎ ধমকে স্নিগ্ধা কিছুটা কেঁপে ওঠে। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে এবার তাকায় ঋষির চেহারার দিকে। রেশমের মতো এক গুচ্ছ সিল্কি চুল, ফর্সা গায়ের রং, গোলাপি অধর, ধূসর রঙের চোখ, আর সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় তার গলায় থাকা অ্যাডাম অ্যাপেল। স্নিগ্ধা তার চোখ সরাতে পারছে না। স্নিগ্ধা কে এরকম হাবলার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে ঋষি বলে।
~কি সমস্যা তোর? এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস, চোখ দিয়েই গিলে খাবি নাকি?
~হ্যাঁ
~ছি ছি! লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছিস নাকি। তা তোর বাপ কি জানে তোর এই অবনতির কথা।
এতক্ষণে মনে হয় স্নিগ্ধার ধ্যান ভাঙল। ধ্যান ভাঙতেই লজ্জায় মরি মরি অবস্থা তার। ছি ছি এটা নিশ্চয়ই তার বড় ভাই আর বড় ভাইয়ের সামনে সে এসব বলল তাও আবার তাকে নিয়ে। না এই মুখ আর কাউকে দেখানো সম্ভব না। স্নিগ্ধা এক দৌড়ে তার রুমের দিকে চলে যায়। ঋষি তার সামনে থাকা চুলগুলো হাতের সাহায্যে পিছনের দিকে পিছনের দিকে ঠেলে দেয়ি বাঁকা হাসে।
তারপর নেমে আসে ডাইনিং রুমে। ডাইনিং রুমে আসতেই ঋষির মা সালমা বেগম ঋষিকে ডাকে।
~এতক্ষণে তোর আসার সময় হল আচ্ছা? আচ্ছা এবার দ্রুত আয় খাবার শেষ কর।
~এম সরি আম্মু। আমি এই খাবার খেতে পারছি না। কারণ এই বাড়ির খাবার নয় বছর আগেই আমার রুচি থেকে মুছে গিয়েছে।
ঋষির কথা শুনে আরাফাত সিকদার তাচ্ছিল্যর হাসি হাসে। তারপর বলে।
~সালমা তুমি ওকে জোর করো না। বিদেশের মানুষ হয়তো এসব খাবার তার হজম হবে না।
~তা যা বলেছেন। না মানে ভেবে দেখলাম আর কি, যে খাবার মিস্টার আরাফাত শিকদার খাচ্ছে সেই খাবার আমি কি করে খাই।
বেশ শান্ত মুখোশ্রি নিয়ে আরাফাত সি