#ঠল শীর্ষ। হুংকার তুলে বলল,
“আওয়াজ নিচে।”
সাকিব কেঁপে উঠল। থেমে গেল তার কণ্ঠনালী। শীর্ষ ফের বাঁকা হাসল। ঘাড় বাঁকিয়ে রবি এবং আলভির দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই আবর্জনাটাকে চ্যাংদোলা করে ক্লাবের বাইরে ফেলে দিয়ে আয়। এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।”
রবি
সাকিব চলে গেল। সাথে তার দলে যারা যারা ছিল তারাও চলে গেল। শীর্ষ একে একে দৃষ্টি বুলালো বাকি থাকা আঘাতপ্রাপ্ত প্রতিটি ছেলের ওপরে। অতঃপর গম্ভীর স্বরে বলল,
“এগুলোকে হাসপাতালে নিয়ে যা।”
রবি একবার সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই গাড়ি এনেছিস? আমি আর আলভি বাইকে এসেছি। এতগুলো ছেলেকে তো আর বাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।”
“গাড়ি এনেছি আমি। আমার গাড়িতে নিয়ে যা।”
[ নয় ]
ত্রয়ী গাড়ির জানালা গলিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে দেখছিল চারপাশ। এত বড়ো শহর, এত মানুষ, এত যানবাহন, এত বড়ো বড়ো ভবন-ইমারত আগে কখনো দেখেনি সে। এ শহরে না এলে হয়তো দেখাও হতো না। আচ্ছা, এ শহরের মানুষগুলো এতো কোলাহলের মধ্যে বসবাস করে কিভাবে? এদের মাথা ধরে না? সে তো এই একটু সময় বসে রয়েছে এতেই চারদিকের মানুষ আর যানবাহনের প্যা পো শব্দে মনে হচ্ছে মাথার ভিতরে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। ত্রয়ী এদিক ওদিক দেখতে দেখতে হঠাৎ তার নজর পড়ল হাওয়াই মিঠাইয়ের দিকে। একজন তরুণ রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে হাওয়াই মিঠাই নিয়ে। এগুলো ত্রয়ী দেখেছিল তাদের গ্রামের মেলায়। আর মাঝে মাঝে একজন মধ্যবয়স্ক লোক স্কুলের কাছে নিয়ে আসতো। ত্রয়ী বেশ কয়েকবার কিনে খেয়েছিল হাওয়াই মিঠাই। কেমন মুখে দিলেই উবে যায়। আজও তার ভীষণ ইচ্ছা হলো হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার। কিন্তু শীর্ষ তো তাকে গাড়ি থেকে নামতে বারণ করেছে। এখানেই বসে থাকতে বলেছে। ত্রয়ী আশেপাশে চোখ বুলালো একবার। শীর্ষ আসেনি এখনো। কখন আসবে তারও ঠিক নেই। এর মধ্যে সে দৌড়ে গিয়ে হাওয়াই মিঠাই নিয়ে আসতে পারবে। লোকটা তো কাছেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। ত্রয়ী জামাকাপড়ের ব্যাগ ঘেটে তার সেই চেইন ছিঁড়ে যাওয়া জামাটার ওড়না বের করল। ওড়নাটার এক ধারে গিট দেওয়া। ত্রয়ী সে গিট খুলতেই কিছু টাকা বেরিয়ে এলো। গ্রামে থাকতে দাদীর কাছ থেকে নিয়ে নিয়ে এই টাকাগুলো সে জমিয়েছিল। আজ যখন সকালে আব্দুর রহমান খান তাকে নিয়ে শপিং এর উদ্দেশ্যে বের হলো তখন সে এ টাকাগুলো নিজের সাথে নিয়ে এসেছিল। ভাগ্যিস টাকা গুলো এনেছিল নয়তো এখন হাওয়াই মিঠাই কিনতো কিভাবে? ত্রয়ী গাড়ি থেকে নামল। লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে গেল হাওয়াই মিঠাইয়ের দিকে।
আলভি, রবি এবং বাকি ছেলেদের নিয়ে শীর্ষ এলো গাড়ির নিকটে। গাড়ির দরজাটা খুলতেই অবাক হলো সে। ত্রয়ী কোথায়? ব্যাগ গুলো তো এখানেই আছে। তাহলে মেয়েটা গেল কোথায়? শীর্ষের ভাবনার মধ্যেই তার কাঁধে হাত রাখলো রবি। ভ্রু কুঁচকে শুধাল,
“কি ভাবছিস?”
শীর্ষ জামা কাপড়ের ব্যাগ গুলো হাতে নিল। সেগুলো পিছনে গাড়ির ডিকিতে রাখতে রাখতে বলল,
“কিছু না। তোরা হাসপাতালে যা।”
রবি এবং আলভি বাকিদের নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দিলো। শীর্ষের মস্তিষ্ক জুড়ে নিগূঢ় চিন্তারা হানা দিল। ত্রয়ীকে তো সে এখানেই রেখে গিয়েছিল। গাড়ি থেকে নামতেও বারণ করে গিয়েছিল। তাহলে সে কোথায় গেল? এমনি মেয়েটা এখানকার কিছুই চিনে না। তার উপর বোকাসোকা, ভীত স্বভাবের। মেয়েটা কি তার আদেশকে উপেক্ষা করে একা একাই বাইরে বেরিয়েছে? নাকি কেউ ডেকে নিয়ে গেছে? যা বোকাসোকা মেয়ে তাতে কেউ ডাকলে চলে যেতেও পারে। আর যদি নিজে একা একা বের হয় তাতেও যে ব্যস্ত সড়ক। এখানে তার মতো একটা বোকা, ভীত মেয়ে নামলে দূর্ঘটনা ঘটতে বেশি সময় নিবে না। শীর্ষ হঠাৎ খেয়াল করল তার ঐ ত্রয়ীর জন্য ভয় হচ্ছে। মেয়েটার বিপদের কথা চিন্তা করে মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে, হৃদয়ে ঝড় উঠছে। ভয়ে, চিন্তায় শীর্ষের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের দেখা মিলল। হাত উঁচিয়ে গলার কাছের একটা বোতাম খুলে দিল সে। এখন এই মেয়েটাকে কোথায় খুঁজবে সে? কোথায় পাবে ত্রয়ীকে? শীর্ষ উদগ্রীব নয়নে তাকাল আশেপাশে। ঠিক তখনই হাতে দুটো হাওয়াই মিঠাই নিয়ে তার দিকে ছুটে এলো ত্রয়ী। চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,
“একি আপনার গাড়ি কোথায়?”
এতক্ষণে যেন প্রাণে প্রাণ ফিরে পেল শীর্ষ। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে। তবে পরক্ষণেই আবার চোয়াল জোড়া শক্ত হয়ে এলো তার। কপালের রগগুলো ফুলে ফেপে নীলচে বর্ণ ধারণ করল মুহূর্তেই। মস্তিষ্ক জুড়ে হানা দিলো ক্রোধেরা। এমনিই ক্লাবের ঘটনা নিয়ে মেজাজ খারাপ ছিল শীর্ষের। তার মধ্যে আবার এই মেয়ের হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া। শীর্ষ তেড়ে এলো ত্রয়ীর দিকে। হঠাৎ হাত বাড়িয়ে গাল চেপে ধরল মেয়েটার। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“তোর সাহস হলো কি করে আমাকে চিন্তায় ফেলার? তোকে আমি গাড়ি থেকে নামতে বারণ করেছিলাম না তারপরও গাড়ি থেকে নেমেছিলি কেন?”
ত্রয়ী ভরকাল। গালের ব্যথার দিশেহারা হয়ে উঠল মেয়েটা। শীর্ষ এমনভাবে গাল দুটো চেপে ধরেছে মনে হচ্ছে যেন মাংস ভেদ করে গালের ভিতরে দাঁত ঢুকে যাবে। ফুঁপিয়ে উঠল ত্রয়ী। চোখ ফেটে গড়িয়ে নামল অশ্রুধারা। শীর্ষ তবুও ছাড়ল না তাকে। ত্রয়ী দিশেহারা হলো। কোনো রকমে কণ্ঠে ধ্বনি তুলে বলল,
“ছাড়ুন আমাকে, ভীষণ লাগছে।”
শীর্ষ কটমট করল। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“লাগার জন্যই তো ধরেছি। আমি তোকে গাড়ি থেকে নামতে বারণ করে গিয়েছিলাম না? তারপর নেমেছিলি কেন?”
“হাওয়াই মিঠাই কিনতে।”
এবার যেন শীর