""রগা বিবাদ। আমেনা আলাদা হতে চাইলে রিদির দাদি বাধা দেয় নি।সবাইকে যার যার ভাগ বুঝিয়ে আলাদা করে দিয়েছে।তবে মিজা বাড়িতে এখন তার বড়ো চাচা থাকে। রিদির বড় চাচা মানুষটা একজন স্কুল শিক্ষক।দুই ছেলে মেয়ে।বড় মেয়ে রিয়া ।মেয়ের বিয়ে হয়েছে সে এখন শশুর বাড়িতে থাকে।আর ছেলে রাদিফ বর্তমান পড়াশুনার সুবাদে শহরে থাকে।
বড় চাচা একজন শিক্ষক।সেই সুবিধার্থে ই রিদি এস এস সি পর্যন্ত দিয়েছে। পড়াশোনায় বেশ ভালো হলেও আমেনা তাকে সব সময় কাজের ওপর রাখে ।তবুও নিজের চেষ্টায় আর চাচার সহযোগিতায় অনেক ভালো পরিক্ষা দিয়েছে। রেজাল্ট ও দিয়েছে। মোটামুটি ভালোই করেছে। কিন্তু আমেনা তাকে আর পড়াবে না বলে দিয়েছে।
সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার,
হাতের রান্না শেষ করে বেড-এ বসতেই হুরমুর করে রুমে ঢুকে আলিশা।
এই রিদি শুনেছিস!!!
কি আপু!!!
কাল আমাকে পাএপক্ষ দেখতে আসবে তাও শহর থেকে।শুনেছি বিশাল বিশাল বড়োলোক!!
রিদি ক্লান্তিতে মুচকি হাসল,
তাহলে তো অনেক সুখে থাকবে।
আলিশা তার কালার করা চুলগুলো নাড়তে নাড়তে বলল,
সে আর বলতে!! আমার মতো সেরা সুন্দরী বৌ পেয়ে সে তো ধন্য হয়ে যাবে।
রিদি বিরবির করে বলল,
ওহহ আচ্ছা!!
কি রে কিছু বললি??
না!!নাতে আপু!!
শোন মা বলল তোর এই কালোকুটি মুখ নিয়ে কাল মেহমানদের সামনে না আসতে।
রিদি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
আচ্ছা!!এসব শুনে শুনে সে অভ্যস্ত!!
,
,
,
পরের দিন বেশ আয়োজন চলছে আমেনার।তবে ভালো রিদিকে এসব করতে হয়নি। উঁচু মেহমান তাই উঁচু শেফ আনিয়েছে আমেনা।কি সব ডিশ ফিস করছে আল্লাহ মালুম। শুনেছে ছেলের বাবা মা আর ছেলে আসবে।এদিকে রিদি যখন আজ সুযোগ পেয়েছে তখন আজ সে লম্বা একটা ঘুম দিবে।তাই যেই ভাবা সেই কাজ। তাছাড়া আজ রিদিকে ভুলেও ডাকবে না আমেনা। কালো ছায়া পড়ে যাবে এই ভয়ে।রিদি ভাবনা বাদ দিয়ে ঘুম দিল!! গভীর এক ঘুম।আজ তার এতো ঘুম পাচ্ছে কেন?রিদি বিছনায় শুতেই যেন গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।
রিদির ঘুম ভাঙ্গল ভয়ংকর কোন আওয়াজ শুনে।চারদিকে তখন সন্ধ্যা প্রায়।রিদি ঘুম ঘুম চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝল আমেনা তাকে ডাকছে।তবে আমেনার ডাকার আওয়াজ এর চাইতেও বেশি ভয়ংকর শোনাল কোন কিছু ভাঙ্গার আওয়াজ।সেই আওয়াজ এ যেন প্রতিটি দেওয়াল কেঁপে কেঁপে উঠছে।রিদির ঘুম তখনো ছাড়ছে না মনে হচ্ছে কেউ চোখের পাতা চেপে ধরে রাখছে।রিদি ধরফর করে উঠে দরজা খুলতেই থ হয়ে যায়।আমেনার ফর্সা গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বিদ্যামান।রিদি কি হয়েছে কিছু বুঝার আগেই আমেনা রিদির হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো বাইরে।চারদিকে তখন সন্ধ্যা নেমেছে খোলা উঠানে তখন অবছা আলো। কিন্তু রিদি দাঁড়িয়ে আছে একদম আলোর কাছে।তাই আলোর ছটা চোখে লাগতেই রিদি ঘুমন্ত চোখ জোড়া বন্ধ করে নিতেই শোনা গেল আমেনার ভয়ার্ত কন্ঠে বলা কথা,
এ !!এই যে !রিদিতা!দিয়া র মে য়ে!!
কথাটা শুনেই যেন ভাঙচুর এর আওয়াজ থেমে গেল।রিদি কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছু না বুঝে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।চোখ তার এখনো বন্ধ।বন্ধ বলতে লাইটের প্রখর আলো রিদির চোখে লাগছে। তাছাড়া আজ তার ঘুম যেন এতো কিছুর পরেও পিছু সরছে না। মাথা হ্যাং হয়ে আছে।তবুও রিদি বহু কষ্টে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই নজরে এলো রুপেশ এর রক্তাক্ত দেহ।চোখ মুখ দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে।রিদি হতবাক হয়ে দৌড়ে বাবার কাছে যেতেই কোথাথেকে ছুটে এলো এক শক্ত পোক্ত হাত!রিদির হাত ধরে টেনে দাড় করিয়ে ঠাসসস করে দুগালে দুইটা চর বসালো। হঠাৎ পুরুষালী হাতের থাপ্পর এ রিদির মাথা ভো ভো করে উঠল।কি হচ্ছে কিছু বুঝার আগেই ভেসে এলো পুরুষালী গম্ভীর ভয়ংকর কন্ঠস্বর,
"তোকে কবুল বলে বিয়ে করছি।তার মানে এটা ভাবিস না তোকে বৌ হিসেবে আমি মানছি।তোর মতো মেয়ে আমার জুতা পরিস্কার করার ও যোগ্যতা রাখে না।"
হুট করেই এতো কিছু হচ্ছে তার সাথে এতে রিদির সব কথা কানে আসলেও মস্তিষ্ক ধরল না।তার তো এখনো মাথা ভো ভো করছে!
এরপর কি হলো রিদি কিছুই বুঝল না।রিদিকে একটি চেয়ারে বসিয়ে মিনিটের মধ্যে কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করল।রিদিকে কবুল বলতে বললেও রিদির থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে হুট করে আবারো গালে ঠাস করে একটা চড় পড়তেই রিদি মাথা তুলতে চাইলে কেউ ভয়ংকর আওয়াজ এ বলল,
কবুল বল!!!!!!!!!!!!!!
রিদি আর চোখ তুলে দেখল না ভয়ের কারনে কবুল বলতেই লোকটি তাকে টেনে বাইরে নিয়ে যেতে লাগল।রিদির এতোক্ষণে যেন হুস হলো।গরুর মতো রিদিকে টেনে নিতেই রিদি ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো।যেন সে মানুষ না কোন পশু।
রিদির ভেতর পুরো কাঁপছে।মুখ দিয়ে টু শব্দও বের হলো না। শুধু যেতে যেতে দেখল বাড়ির ভয়ংকর অবস্থা। সবকি