#
তন্নি হাফ ছাড়লো। এই মেয়েকে বোঝাতে আসলে সে নিজেই ধৈর্য হারা পাগলের দলে নাম লেখায়। তন্নি ফের বলল, "সবকিছু চাইলেই ছিনিয়ে নিতে হয়না। এটা প্রকৃতির নিয়মর বাইরে আপু। ঘৃণা আর ভালোবাসা কোনোটাই জোরপূর্বক হয়না, এই দু'টোই আসে মন থেকে। "
____
মারুফকে নিয়ে ভোর ভোর থাকতেই রওনা করে নাতাশা। দুপুরের মধ্যে দিনাজপুর পৌঁছে প্রথমেই সাইড ভিজিটে যেতে হবে। মারুফের কাছে কল করে হামজা ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে " তারা কতদূর?..
মারুফই ড্রাইভ করছে। যেদিক দিয়ে তারাতারি যাওয়া যায় সেদিক দিয়েই যাচ্ছে, কিন্তু আজ ভাগ্যও তাদের সায় দেইনি৷ যমুনা সেতু পার হতে না হতেই জ্যামের হিড়িক পড়ে যায়। সামনে নাকি গুরুতর এক্সিডেন্ট হয়েছে। গাড়ি সেই কখন থেকে একই জায়গায় থেমে আছে, সামান্যতম নড়াচড়ার তারতম্য হচ্ছে না। এদিকে বেলা গড়িয়ে দুপুর হইলো বলে।
নাতাশা চিন্তামগ্ন দৃষ্টিতে জানালা ভেদ করে আসে পাশে তাকালো। কোনো শর্টকাট রাস্তা তো অবশ্যই আছে, ঠিক সেই মুহুর্তে একটি রাস্তা নজর কাড়লো। রাস্তাটা সরু আর বেশ ভাঙাচূড়ো। তবে জ্যাম থেকে বাঁচতে বেশ কিছু যানবাহন আজ সে পথ ধরেই এগিয়ে চলছে..
নাতাশা মারুফকে উদ্দেশ্য করে বললো "মারুফ পাশের ওই রাস্তা দিয়ে চলো। "
-" ম্যাম রাস্তার যে অবস্থা, আর এই রাস্তা দিয়ে যেতে অনেকটা সময় লাগবে!
-" হামজা সাহেবের সঙ্গে আমি কথা বলে নিবো। তুমি ওই রাস্তা দিয়েই চলো। অন্তত এই জ্যাম বসে থাকার চেয়ে সেটা ঢের ভালো। চলো দ্রুত...
মারুফ আর প্রতিত্তোর করলো নাহ। রাস্তাটা কিছুটা নিচু হাইওয়ের তুলনায়। আধ ভাঙা রাস্তায় গাড়ি এগোচ্ছে, নাতাশা হামজা সাহেবের সঙ্গে কথা বলে ম্যানেজ করেছে, এখন দেরি হলেও সমস্যা হবে নাহ।
দেখতে দেখতেই বিকের গড়ালো। সূর্য মুখ ফিরিয়ে পালালো, সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার নামলো চারপাশে। গাড়ির হেডলাইটে যতটুকু দেখা যাচ্ছে শুধু সেটুকুই দৃশ্যমান আপাতত। গাড়ি চলাচল একেবারেই কমে গেছে, হয়তো জ্যাম ছেড়েছে তাই এ পথে আর কেউ আসেনি।
যতদিকে চোখ যায় পুরোটাই বিস্তৃত মাঠাঞ্চল। নিকাশ কালো আধার ধরণী ঝাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। রাস্তার দু'ধার ঘেষে বেড়ে উঠেছে অসংখ্য নাম না জানা গাছ-গাছালি লতাপাতা। নাতাশা আনমনে সেসবের দিক চেয়ে আছে আর রুদ্রর কথা ভাবছে। পরক্ষণেই তন্নির বলার কথাগুলো মনে পড়ে যায়, তখন বিবেক বারংবার তাকে হামলা করে বসে, আসলেই কি সে শুধু শুধু রুদ্রর জীবনে থেকে ওর জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে?
প্রশ্ন অহরহ তবে একটারও সঠিক জবাব নেই। নাতাশা মাথা এলালো সিটের সঙ্গে, মাঝে মাঝে মনের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে মেয়েটা ভীষণভাবে ক্লান্ত হয়ে পরে। তন্নি ঠিক বলেছিলো,
" আমি হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে গেছি। ভালো-মন্দ বোঝার বোধ হারিয়েছি আমি।
এমন সময় গাড়ির প্লেলিস্টে বাজতে শুরু করে একটি গান। মারুফ গুনগুম করছিলো, নাতাশা এবার আনমনে দুলাইন তাল মেলায় গানের সঙ্গে....
আমি পাপী, অধম দয়াল
তোমার দুনিয়ায়
তোমার কাছে যাবার মতো
নেক জীবনে নাই.....
আচমকা এক বিকট আওয়াজে নিস্তব্ধ হয়ে গেলো সব। থেম গেল নাতাশার আনমনে গেয়ে ওঠা গান, মারুফের কর গুনগুন আওয়াজ। মালবাহী একটি ট্রাকের ধাক্কায় ৩/৪ বার ডিগবাজি খেয়ে গাড়িটা পড়লো পাশর বিস্তর মাঠের উপর। নিমিষেই পরিবেশটা কেমন হয়ে গেলো।
মারুফ ছিটকে গিয়ে গাড়ি থেকে কিছুটা দূরে পড়ল। কিছু বোঝার কিংবা দেখায় চোখদুটো সায় দিলো না। মারুফ জ্ঞান হারালো। নাতাশা গ্লাস ভেঙে অর্ধেকটা গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে। ভয়ংকর অবস্থা, পুরো মুখ লাল র *ক্তে মাখামাখি। নিভু নিভু চোখে তাকালো নাতাশা।
চোখ ঘুরিয়ে থেমে থাকা ট্রাকটির দিকে তাকালো। হেডলাইনের আলোয় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কেউ একজন খুব হাসছে সঙ্গে নখ দিয়ে বোঝাচ্ছে " সি ইজ ডেথ নাও " ; নাতাশা আর কিছু থাওর করতে পারলো নাহ!! শরীল অসার হয়ে আসলো। চোখ বুজে নেওয়ার আগে অস্পষ্ট স্বরে "রুদ্র" নামটুকু নিয়েই চোখ বন্ধ করে নিলো। জ্ঞান হারালো নাকি শেষ নিশ্বাস ছাড়লো তা বোঝা গেলো