#
জিয়ান নয়নার হাত ধরে বলল, “এই প্রথম কেউ পাইলট রেজা চৌধুরীর হেয়ার টাচ করার সাহস করেছে।”
“আহা, মিস্টার প্লেন ড্রাইভার, এটা তৃতীয়বার আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়েছি। বলতে পারো, এটা আমার ফেবারিট কাজ।”
“তো মিসেস চৌধুরী, তুমি কেন আমার সাথে রিসোর্টে যেতে রাজি হচ্ছ না?”
“আমার ইচ্ছে করছে তোমাকে বাসায় নিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমোতে। ইচ্ছে করছে তোমার বাহুতে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে।”
জিয়ান নয়নার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল, “বুঝেছি, মিসেস চৌধুরীর আদর-আদর ফিল হচ্ছে। ইশ, বাসায় ঢুকে সোজা কোলে তুলে বেডরুমে নিয়ে যাব।”
নয়না লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিল।জিয়ান নয়নার চোখের ওপর ফুঁ দিয়ে বলল, “লজ্জায় রাঙা বউ আমার।”
গাড়ি এসে থামল চৌধুরী ম্যানশনের সামনে।নিজের রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে ছিল জাহিন। হাত বাড়িয়ে ম্যারিনোকে ধরে কোলে তুলে নিল। ম্যারিনোর কথা মনে পড়ায় মন মলিন হয়ে গেল জাহিনের। ম্যারিনো মারা গেছে তার একটা ছোট ভুলে। এই যে ম্যারিনোর মতো দেখতে বেড়ালটা তার কাছে আছে, তাকে কেন এতটা আপন লাগে না? আচ্ছা, মানুষ তবে কেন বলে, চেহারা দেখে ভালোবাসা হয়? এই যে একই চেহারা, তবুও মন পোড়ে সেই পুরনো ম্যারিনোর জন্য।
জাহিন হঠাৎ খেয়াল করল, জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে নিয়েছে। জিয়ানের হাত নয়নার কোমরে। শাড়ি কিছুটা সরে গিয়ে কোমরের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। জাহিন হঠাৎ বেড়ালটাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। দ্বিতীয় তলা থেকে বেড়ালটা পড়ে ম্যাও ম্যাও করে উঠল। নয়না ভয়ে চিৎকার দিয়ে জিয়ানের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। জিয়ান নয়নাকে কোল থেকে নামিয়ে ম্যারিনো ভেবে নতুন বেড়ালটাকে কোলে তুলে নিল। কিন্তু বেড়ালটা কেমন অপরিচিত লাগছে! নয়না জিয়ানের শার্ট খামচে ধরে বলল, “আমি বেড়াল ভয় পাই, ছাড়ুন ওকে।”
“ওর নাম ম্যারিনো। জাহিনের আত্মা।”
“সে যাই হোক, নামান।”
জিয়ান একজন সার্ভেন্ট ডেকে ম্যারিনোকে তার কাছে দিয়ে বলল, “ম্যারিনোকে ওর সঙ্গীর কাছে দিয়ে আসুন।”
জাহিন রুমে এসে একসঙ্গে দুটো সিগারেট ধরাল। সিগারেটের ধোঁয়ার সঙ্গে উড়িয়ে দিল তার উদ্ভট সব ভাবনা-চিন্তা। সে জানে না তার কী চাই, সে জানে তার জিনিস তার ফিরিয়ে চাই। জাহিন দুটো সিগারেটের ধোঁয়া টেনে বলল, “যা আমার, তা হয়তো আমার থাকবে, নয়তো আর কারো হতে পারবে না।”
জিয়ান বাসায় এসে সোজা মিতা বেগমের রুমে ঢুকল। মিতা বেগম তখন নামাজ শেষ করে সবে তসবিহ নিয়ে বসেছেন।
জিয়ান ডাকল, “আম্মু, আসব?”
মিতা বেগম ঘাড় বাঁকিয়ে বললেন, “অনুমতি নিতে হবে না, আয়।”
জিয়ান এসে মিতা বেগমের কোলে শুয়ে পড়ল।মিতা বেগম জিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “কী রে, খোকা, কিছু বলবি?”
“কিছু না বললে তোমার কাছে আসা যাবে না?”
“মায়ের কাছে আসতে সন্তানের কোনো কারণ লাগে না। তবুও আমি জানি, তুই কিছু বলবি।”
“আম্মু, আমি তো কাল চলে যাব। নয়নাকে দেখে রেখো, ও খুব সেনসিটিভ মেন্টালিটির। বাসায় যেতে চাইলে যেতে দিও, বাবা যেন বাধা না দেয়।”
“তোর বাবা রাগী স্বভাবের, যদিও এটা তোদের বংশগত। তবে মনটা একদম কোমল। সে নয়নাকে খুব স্নেহ করে।”
নয়না দরজায় এসে বলল, “আম্মু, আমাকে আদর দেবে না?”
জিয়ান নয়নার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। নয়নার পরনে তার টি-শার্ট, যদিও গায়ে ওড়না জড়ানো।
“আয়, এদিকে আয়, তোকেই তো আদর বেশি করব। ছেলেটা তো চলেই যাবে, তারপর দুই মা-মেয়ে মিলে সারাক্ষণ একসঙ্গে ঘুরব-ফিরব।”
জিয়ান চট করে উঠে বলল, “আম্মু, তাহলে এখন রুমে যাই।”
নয়না বলল, “আজ আম্মুর সঙ্গে ঘুমাব।”
জিয়ান চোখ রাঙিয়ে নয়নার দিকে তাকাল।মিতা বেগম নয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “নিশ্চিত অভিমান হয়েছে আমার ছেলেটার ওপর? আজ অভিমান ছেড়ে দে, ফিরে যখন আসবে, তখন করিস। যা, তোর বউকে নিয়ে যা।”
জিয়ান নয়নার হাত ধরে রুম থেকে বের করে সঙ্গে সঙ্গে কোলে তুলে নিয়ে বলল, “লজ্জা করে না, বরের আদর না চেয়ে শাশুড়ির আদর চাও? শুধু শুধু হাঁটুর বয়সী বলি?”
“ছিহ, কীসব কথা! থাকব না আপনার সঙ্গে, চরম অসভ্য আপনি।”
“একবার রুমে চলো, তারপর দেখাচ্ছি অসভ্যতা কাকে বলে।”
মেহনুর মুখে হাত দিয়ে দেয়াল ঘেঁষে বসে পড়ল, চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগল নোনা জল। তার কপালে কেন ভালোবাসা নেই? আচ্ছা, নয়নার জায়গায় সে থাকলে তার জীবনটা নিশ্চিত রঙিন হতো।জিয়ান রুমে এসে নয়নাকে বিছানায় চেপে ধরে বলল, “এবার বলো, আদর দাও জান।”
“ইশ, শখ কত, জীবনেও বলব না।”
“না বললে কিন্তু খবর আছে।”
“বলব না, না, না।”