#
"আমাকে এত অপছন্দ করেন কেন? আমি তো এখনো অবদি ছুঁয়ে দেখিনি আপনাকে। এতো কাছে থেকে নেশা লাগলেও নেশা নিবারণ করার চেষ্টা করিনি। একবারও জোরজবরদস্তি করিনি আপনার সাথে।"
নন্দিতা এক ঝটকায় ধূসরের হাত নিজের হাত থেকে ছাড়িয়ে আঙুল উঁচিয়ে রাগী কণ্ঠে বলে,
"আপনার এই অসংলগ্ন আচরণের জন্য পরিবারের লোকজনের উচিৎ ছিল থাপ্পড় মারা। আমাকে বাধ্য করবেন না এই কাজ করতে।"
ধূসর হাসে। দুই ঠোঁট আলগা করে বেশ রয়ে সয়ে হাসে সে। হাসতে হাসতে বলে,
"আপনার চোখে রাগটাই আমার সবচেয়ে প্রিয়। একদম শেষ করে দেয় আমাকে। আমি জানি একদিন এটাই আমাকে নিঃশেষ করে দেবে। তবু আমি চাই।"
"আপনার এখন যাওয়া উচিত।"
নেশা হলেও নিজেকে সামলানোর ক্ষমতা তার আছে। তাই হালকা হেসে নন্দিতার দিকে তাকিয়ে বললো,
"ভয় পাচ্ছেন? নেশার ঘোরে যদি উল্টা পাল্টা কিছু করে বসি।"
নন্দিতা উত্তর দিলো না। ফাইলটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে ধূসর আবারও বলে উঠলো,
"আজকাল নেশাও নেশা ধরাতে পারছে না। মনে হচ্ছে নেশার চেয়েও নেশালো কিছুর খোঁজ পেয়েছে শরীর, তাইতো এতো স্ট্রং ওয়াইনের নেশাও কাবু করতে পারছে না আমাকে।"
নন্দিতা কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে তুর্জয়। নিজের ঘরে ধূসরের সাথে নন্দিতার উপস্থিতি দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে খানিকটা সময় তাকিয়ে থাকে নন্দিতার দিকে। নন্দিতা চমকায়। এমন একটা সময়ে তুর্জয়কে কোনোভাবেই আশা করেনি সে। হাত কচলাতে কচলাতে তুর্জয়কে কিছু বলতে যাবে এমন সময় ফিচেল হেসে নন্দিতার দিকে তাকিয়ে কাঠকাঠ কণ্ঠে বলে,
"বড্ডো ভুল সময়ে এসে পড়েছি বোধহয়।"
নন্দিতার হতাশ চোখে তুর্জয়ের দিকে তাকায়। করুণ কণ্ঠে বলে ওঠে,
"আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।"
"স্বামীর অনুপস্থিতিতে, একা বাড়ীতে একজন পুরুষমানুষকে ডেকে এনে ফুর্তিতে মজেছেন, আর ভুলটা শুধু আমিই বুঝছি? ওহ! ওয়াইনের বোতলও তো আনানো হয়েছে, স্বামীকে আজকাল এতো খারাপ লাগছে বুঝি? পরপুরুষের কাছে বেশি মজা?"
নন্দিতার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়লো। এতখানি উচ্চবাক্যে এর আগে কখনো কথা বলেনি তুর্জয় তার সাথে। আর আজ এতো নীচু ভাষায়! কান্নায় বুক ভেঙে আসছে তার। চেয়েও সবটুকু সত্যি বলতে পারছে না তাকে। তাই তুর্জয়ের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ধূসরের দিকে তাকিয়ে কঠোর কণ্ঠে বলে,
"আপনি এখানে এসেছেন জানলে সমস্যা হবে। এখন আসুন। আমাদের বাড়িতে হিডেন ক্যামেরা লাগানো আছে।"
ধূসর টলতে টলতে সোফা ছেড়ে উঠলো। ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে বললো,
"সেসব ক্যামেরা তো কবেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে, জানেন না আপনি? কাজ শেষ, নজরদারিও শেষ।"
তুর্জয় নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তেড়ে গেল ধূসরের দিকে। তার জামার কলার আঁকড়ে দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বললো,
"আমার সবকিছু লুটে নে, শুধু বউটার দিকে চোখ দিস না। সহ্য হবে না আমার। মাটির সাথে পুঁতে ফেলবো সব কয়টাকে।"
ধূসর শব্দ করে হাসলো। অতঃপর তুর্জয়ের থেকে নিজের কলারটা ছাড়িয়ে নিয়ে তার কানের কাছে ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো,
"আমার বাপের কী দরকার না দরকার আমি জানিনা। তবে আমার তো এটাকেই দরকার। কিন্তু তোর বউয়ের কিন্তু আমার প্রতি একটুও ইন্টারেস্ট নেই। তবে আমার শুধু ইন্টারেস্ট না পুরো নেশা ধরে গেছে। তোর বউয়ের নেশার কাছে পৃথিবীর সব নেশা ফেল।"
তুর্জয় আচমকা জোরে একটা ঘুষি বসালো ধূসরের নাক বরাবর। চিৎকার করে নাকে হাত চাপা দিল ধূসর। নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে তার। পাল্টা আক্রমণ করতে চাইলে সামনে রুখে দাঁড়ালো নন্দিতা। ধূসরের হাতে কয়েকটা টিস্যু গুঁজে দিয়ে বেশ সাবলীল কণ্ঠে বলে উঠলো,
"ধন্যবাদ আপনাকে। চলে যাওয়া উচিৎ এখন আপনার।"
রাগে গোটা শরীরে আগুন জ্বলছে তুর্জয়ের। কিছুক্ষণ আগে ধূসরের বলা কথাগুলো কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সে। আর এই সবকিছুর জন্য একমাত্র দায়ী নন্দিতা। তাই সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে এখন তার রাগের সবটুকু উত্তাপ নন্দিতার উপর বর্ষাবে।
রুমে পায়চারি করতে থাকা তুর্জয়কে দেখে শুকনো ঢোক গেলে নন্দিতা। এতটা রেস্টলেস এর আগে কখনো লাগেনি তাকে। ধূসরকে নিয়ে তার ইন্সিকিওরিটির কারণ সে বোঝে। তাই ঠিক করে নিয়েছে, এই মিথ্যা নাটকটা আর কন্টিনিউ করবে না। সোজাসাপটা স্বীকার করে নেবে এসব মিথ্যা একটা নাটক ছিল শুধু। কিন্তু তুর্জয় কী বিশ্বাস করবে?
পিছনে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে তুর্জয় ঘুরে তাকায়। অতঃপর নন্দিতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সরাসরি গলা চেপে ধরে তাকে মিশিয়ে দেয় দেয়ালের সাথে। নন্দিতা কাঁদো কাঁদো চোখে তাকায় তুর্জয়ের দিকে। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তুর্জয় রাশভারী কণ্ঠে বলে ওঠে,
"তোর শরীরের খিদে মেটানোর জন্য তুর্জয় আহসান যে যথেষ্ট, এটাই বোঝাবো আজ। তুর্জয়ের এক অন্যরকম রূপ দেখবি তুই আজ।"
ভয়ে আঁতকে উঠে নন্দিতা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করলে বামহাত দিয়ে নন্দিতার দুইহাত একসাথে করে মাথার উপর দে