“ মেয়ে হয়েছি। মা হওয়ার ক্ষমতা কি আমার নেই যে দত্তক নিব? ”
রোহান হাসে কিঞ্চিৎ। মেয়েটা কি ছোট? বলে,
” মা হওয়ার ক্ষমতা থাকলেই মা হতে পারবে নাকি? ”
রাহা হাসে দাঁত কেলিয়ে। বলে,
“ অবশ্যই পারব। আপনি আছেন না? ”
রোহান এই পর্যায়ে আবারও কেঁশে উঠে। চোখমুখ লাল হয়ে উঠে কেমন। শুধায়
“ কি? ”
রোহা কোমড়ে হাত রেখে বলে,
“ মানুষ কার বাচ্চা গর্ভে ধারণ করে? ”
রোহানও প্রশ্ন ছুড়ে,
“ কার?”
“ বরের। ”
রোহান দাঁতে দাঁত চাপে। শুধায়,
” এটা কি আমি জানি না?”
“ আমার বরটা কে মিঃ রোহান ফারাবী?আপনি নিশ্চয়? ”
“ হু। ”
রাহা আবারও ব্যাখ্যা স্বরূপ বলে,
“ তাহলে আমি আপনার বাচ্চাই তো গর্ভে ধারণ করব তাই না? আর আপনি এটা অস্বীকার করবেন না যে আপনিও নিশ্চয় বাচ্চা চান হুহ?”
রোহান চুপ থাকে। আসলেই যে সে বাচ্চা অপছন্দ করে এমন নয়৷ সেও চায় কার একটা সংসার হোক, ফুটফুটে সন্তান থাক।রোহান উত্তর না দিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টাতে দ্রুত বলে,
“ হুট করে বাচ্চার ভূত মাথায় চাপল কেন নবনী? তোমার প্রাক্তন প্রেমিক কি বাচ্চা নিয়ে কিছু বলেছে নাকি আজ? ”
রাহার সুন্দর আলোচনায়এমন একটা কথা পছন্দ হলো না। দাঁতে দাঁত চেপে শুধাল,
“ আমার কোন প্রাক্তন প্রেমিক নেই। যে ছিল সে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী। আর আপনার কথানুযায়ী সে যদি কিছু বলেও থাকে তবে তার কথামতে নিশ্চয় আমি বাচ্চা নিতে পাগল হবো না? ”
রোহান এই পর্যায়ে আড়ালে হাসে রাহার কথা শুনে। বিড়বিড় করে শুধায়,
“ হু, এখনও কিছুই হয়ে উঠল না, আর উনি একেবারে বাচ্চা নিয়ে নিচ্ছেন। ”
কথাগুলো বিড়বিড় করেই বলল রোহান। রাহা শুনল না। তবে হঠাৎই রাহা প্রশ্ন ছুড়ল,
“ আপুকে খুব ভালোবাসেন তাই না মিঃ রোহান ফারাবী? ”
রোহান ফিরে তাকায়। উত্তর দেয়,
“ এর উত্তরটা তো অজানা নয়। হঠাৎ জিজ্ঞেস করার কারণ কি নবনী? ”
রাহা বেশ মনোযোগী হয়ে আবার বলে,
“ অন্য কাউকে কখনো ভালোবাসতে পারবেন কি? ”
“ হ্ হু?”
রাহা এবার কথা ঘুরাতে বলে,
“ কিছু নয়। এতক্ষন আকাশপানে তাকিয়ে কি ভাবছিলেন? ”
রোহান এবারে হাসে। মেয়েটা যে একটু হলেও তার প্রতি দুর্বল এটুকু সে মাস কয়েকে বুঝতে পেরেছে ঠিকই। তাই তো হেসে বলে,
“ ভাবছি অন্যের বউয়ের পিছনে ঘুরে ঘুরে তাকে জ্বালানোর মাশুল এখন আমিও পাচ্ছি। আমার বউয়ের পিছনেও কেউ ঘুরে এইটা আমি মানতে পারছি না সহজ সরল ভাবে এখনও।”
এই প্রথম এভাবে আমার বউ সম্বোধনটা পেয়ে রাহা মাথা নিচু করে। ফর্সা মুখটা বোধহয় লজ্জ্বায় লাল হয়ে আসল। দৃষ্টি অবনত হলো দ্রুত।
.
সুহার হাতে তখন ধারালো চুরি। একহাত এগিয়ে ধরে সে একাধারে চিন্তা করে যাচ্ছে তার একরত্তি মেয়েটাকে। অতঃপর আকাশপানে চেয়ে হুট করেই কেঁদে উঠে সে। অস্ফুট স্বরে বলে উঠে,
“ আম্মু? তোর ওখানে অনেক কষ্ট হয় না? একা থাকতে পারিস আম্মু? ওখানে তো তোর কেউ নেই আম্মু। আম্মুও তো নেই। তোর খুব কষ্ট হয় তাই না? ”
সুহা নিরবেই কাঁদে। দরজা বন্ধ করতে চেষ্টা করেছিল। তবে পারে না সে। স্বচ্ছ মাস কয়েক হলো দরজার লক হতে ছিটকিনি সব নষ্ট করেছে। সুহাকে সর্বক্ষণ চোখে চোখে রেখেছেে।যত্ন নিয়েছে। মাস কয়েকে মধ্যে সুহা বহুবার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে। বহুবার মরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আবোলতাবোল কান্ডকারখানা চালিয়েছে নিজের উপর। যার ফলস্বরূপ এখনও কিছু কাঁটা দাগ সুহার হাতে ভাসে। এখনও কপালের কোণাটায় কাঁটা দাগ স্পষ্ট যা তার নিজেরই নিজেকে আঘাত করার স্পষ্ট প্রমাণ।অবশ্য এই এক মাসে সুহা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। এই একমাসে স্বচ্ছ অনেকটাই সুহাকে একা ছাড়ে। কিন্তু আজ একমাস পর আবারও সুহার মাথায় একই ভূত চাপবে কে জানত। সুহা নিরবে বসেই বার কয়েক চুরি দিয়ে নিজের হাতে দাগ বসাল। কাঁটা দাগ। যা দিয়ে মুহুর্তেই বেরিয়ে এল লালাভ রক্ত। অতঃপর মুখে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে সে বলল,
“ সোনা? আম্মু তোমার কাছে আসব। খুব আদর করব আম্মু। মিলিয়ে নিও। আম্মু তোমায় খুব ভালোবাসব আম্মু। ”
.
ছুটির নিজের একটা বন্ধুমহল হয়েছে এখানে। সে বন্ধুমহলে সে ব্যাতীত দুইজন যুবতী এবং একজন যুবক। যুবকটির নাম আলভি, এবং বাকি দুইজন যুবতী এলিনা এবং উইলি। আলভির গার্লফ্রেন্ড হলো উইলি। এদের মাঝের কেমিস্ট্রিটা তারা বাকি দুইজন সবসময়ই দেখে, সবসময়ই সম্মুখে অবলোকন করে তাদের প্রেম। সেদিন আলভির গলায় যে লাভবাইটের চিহ্ণ ছিল তাও উইলির দেওয়াই ছিল। ছুটি তো কেবল একটু আবিরকে জ্বালাতে আলভিকে বয়ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। ছুটি কিঞ্চিৎ হাসে আনমনেই। আবার পরক্ষণেই মন খারাপ হয়। সে আবির ভাইকে কষ্ট দিতে চায়নি কোনকালেই। কখনোই চায়নি আবির ভাই কষ্ট পাক। কখনো চায়নি আবির ভাই রাত জেগে নিকোটিনে আসক্ত হোক। কিন্তু আবির ভাই কেন তাকে অবহেলা করল? কেন তার সাথে এতগুলো মাস কথা বলল না?কেন অন