শীতের বিকেল। রুদ্রর হাতটা কাঁপছে। ছেলেটা ডায়েরির পাতায় তাকিয়ে চুপচাপ বসে আছে। প্রতিটি লাইন যেন একটা ইতিহাস।
ছয় বছর আগে এই শহরে এসেছিল রুদ্র, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে। ব্যস্ত নগরী, অচেনা মুখ, আর তার মধ্যেই পরিচয় হয়েছিল নীলার সঙ্গে। ছিমছাম মেয়েটা, হাসিতে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি ছিল। দুজনেই সাহিত্যের ছাত্র, লাইব্রেরির টেবিল শেয়ার করতে করতেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠল।
বন্ধুত্ব গড়াতে বেশি সময় লাগেনি প্রেমে রূপ নিতে। নীলা চুপচাপ, ভীষণ কেয়ারিং। রুদ্র একটু চঞ্চল, আবেগপ্রবণ। তবুও সম্পর্কটা চলছিল ভারসাম্যে। কিন্তু শেষ বর্ষে এসে বদলে যেতে লাগল সব। নীলার পরিবার হঠাৎ তার জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব পছন্দ করে। সে কিছু বলতে পারেনি। রুদ্রও ভেঙে পড়েছিল, কিন্তু চিৎকার করে কিছু বলেনি।
নীলা চলে গেল। বিয়ের খবর এল ফেসবুকে। রুদ্র একা হয়ে গেল, আর ডায়েরির পাতায় শুধু স্মৃতির রঙ ছড়াতে লাগল।
আজ ছয় বছর পর, হঠাৎ ডাকবাক্সে একটি চিঠি পায় সে। খামে লেখা – "রুদ্রর জন্য"।
চিঠিতে লেখা ছিল –
“তুই জানিস, ওই দিন কিছু বললে আমি থেকে যেতাম। আমি অপেক্ষা করছিলাম একটা শব্দের। তুই বললি না, আমি গেলাম। কিন্তু প্রতিদিন তোকে মিস করেছি। স্বামী ভালো মানুষ, কিন্তু তুই ছিলি আমার আত্মার বন্ধু। ভাবিস না, আমি তোর জীবনে ফিরতে চাই। শুধু জানাতে চেয়েছি—ভালোবাসা কোনোদিন শেষ হয় না।”
— নীলা।
রুদ্র চিঠিটা ভাঁজ করে রাখে বুক পকেটে। চোখে জল।
তারপর আবার ডায়েরির পাতায় কলম চালায়—
“নীলা, তুই ঠিক বলেছিস। কিছু ভালোবাসা চিরকাল নিজের মতো থেকে যায়, অপূর্ণতাই যার পরিপূর্ণতা।”