অধ্যায় ২: নিউ ইয়র্কের নিঃশব্দতা
স্থান: ব্রুকলিন, নিউ ইয়র্ক
সময়: ১০ বছর আগে থেকে বর্তমান পর্যন্ত
নিউ ইয়র্ক শহর কখনো ঘুমায় না। আলো, শব্দ, আর অস্থিরতার শহর। তারই এক কোণে, ৮ তলার ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে থাকে নীলাঞ্জনা রায়—নীলু।
সে এখন ৩৫। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, চুলগুলো খোলা, মুখে ক্লান্তির ছাপ। একসময় সে গাইত, ছবি আঁকত, কবিতা লিখত। এখন সে বসে থাকে ল্যাপটপের সামনে, কর্পোরেট মিটিং আর প্রেজেন্টেশনের ফাঁকে ফাঁকে নিঃশব্দে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
নীলুর জীবন এক নিয়মে বাঁধা। সকাল ৭টায় উঠে কফি, তারপর ট্রেন ধরে অফিস, আবার সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা। কেউ নেই যে জিজ্ঞেস করে, “খেলেন ঠিকমতো?” অথবা “আজ দিনটা কেমন গেল?”
তবু তার বুকের গভীরে একটা কষ্ট রয়ে গেছে—একটা গোপন সত্য, যা কাউকে বলেনি।
দশ বছর আগে, মা মারা যাওয়ার পর সে একরকম পালিয়েই চলে এসেছিল বিদেশে। বাবার সঙ্গে যোগাযোগ কমে যায়। প্রথম প্রথম চিঠি লিখত—বাবা প্রতিদিন উত্তর দিত। কিন্তু একদিন সে আর লিখতে পারেনি।
সে দিনটা ছিল ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। নীলু তখন নতুন এক সম্পর্কে জড়িয়েছে। ছেলেটির নাম লিও। তারা ভাবছিল একসঙ্গে থাকবে। বাবাকে জানালে নিশ্চয় রাগ করবেন, ভেবেই কিছু লেখেনি সেদিন। সেদিন থেকে যেন বন্ধ হয়ে যায় সব।
এতগুলো বছর কেটে গেছে। লিও এখন আর নেই, সম্পর্ক টেকেনি। বন্ধুরাও আলাদা হয়ে গেছে। অথচ বাবার হাতে লেখা চিঠিগুলো এখনো রাখা আছে তার স্যুটকেসের নিচে, একটা পুরনো বাক্সে।
প্রতিটি খামে একটাই প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসে—
“তুই ভালো আছিস তো, মা?”
“তোর পিয়ানো বাজানো শুনতে ইচ্ছা করে...”
“একবার চিঠি দে... শুধু একবার।”
সেদিন রাতে, অনেকদিন পর, সে সেই পুরনো চিঠিগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল নিজে নিজে—
“আমি কী নিষ্ঠুর মেয়ে! বাবা এখনও চিঠির উত্তর খুঁজছে... আমি তো হারিয়ে গেছি নিজের মধ্যে।”
সে ঘুমোতে পারল না। সকালে উঠে ঠিক করল—আজই লিখবে চিঠি।
চিঠি শুরু করল—
প্রিয় বাবা,
আমি জানি তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো...
চলবে...
আপনি কি চান আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে হরিদার সেই চিঠি পাওয়ার দৃশ্য বা তার প্রতিক্রিয়া দেখি? নাকি আপনি আগে জানতে চান নীলু ঠিক কী লিখেছে সেই চিঠিতে?