গল্প
#পর্ব_১
★অপয়া,মুখপুড়ি দিলিত সকাল সকাল ক্ষতি করে। এই তুই কি চাস বলতো।সব তো খেয়েছিস, জন্ম নিতেই মাকে খেলি তারপর দাদিকে এখন কি এই সংসার টাও খেয়ে শান্ত হবি?এইভাবে চলতে থাকলে সে সময় দূরে নেই যখন আমাদের ভিক্ষের থালি নিয়ে রাস্তায় বসতে হবে।
তুই তো আর মরবি না। আমাদের ই মরতে হবে তাছাড়া তো আর কোনো উপায় দেখছি না।
এখন কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোর চেহারা আমায় দেখাবি, নাকি এগুলো পরিস্কার করবি।আমার হয়েছে যত জ্বালা। যত্তসব।
ঝাঁঝাল কর্কশ গলায় নূরের সৎ মা রুবিনা বেগম কথাগুলো বলে চলে গেল।
নূর গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ তার সৎ মায়ের কথাগুলো শুনছিলো। গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কারণ, রুবিনা বেগম শুধু মুখের তীর মেরে ক্ষ্যান্ত হননি। সেই সাথে গালে একটা থাপ্পড়ও লাগিয়ে দিয়েছে যেটা সে প্রায়ই করে। মাঝে মাঝে এর চেয়ে বেশিও করে।
রুবিনা বেগম চলে যাওয়ার পর নূর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিচে পড়ে থাকা ভাংগা চায়ের কাপের টুকরোগুলো তুলে পরিস্কার করতে থাকে।
এই কাপটি হাত থেকে পরে ভেঙে গেছে।আর এই সামান্য কারণেই তার সৎ মা তাকে চড় মেরে এতগুলো কথা শুনিয়ে গেলেন।
যদিও এতে নূরের কোনো দোষ ছিলনা। নূর যখন চা নিয়ে যাচ্ছিলো তখন হঠাৎ ওর ছোট ভাই রবি পিছন থেকে এসে ওকে ভাউ বলে।আকস্মিক এমন হওয়ায় নূর তাল সামলাতে না পেরে হাত থেকে গরম চা ভরতি কাপটা নিচে পরে যায়। এতে কিছু চা ওর পায়ের ওপরেও পরে।কিন্তু তাতে কি যায় আসে এবাড়ির কারও।ওটা দেখার কারও টাইম নাই।ওর চেয়েও বেশি মুল্যবান এই কাপ। আর সেকারনেই রুবিনা বেগম তার মহামুল্যবান বানি শুনিয়ে গেলেন।
নূর কাপের টুকরো গুলো উঠিয়ে জায়গাটা পরিস্কার করে ফেললো। টুকরো গুলো ময়লার ঝুরিতে ফেলে পিছনে ফিরতেই দেখলো ওর ছোট ভাই রবি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।চেহারায় অপরাধবোধ।
নূর মাথাটা একটু নিচের দিকে ঝুকিয়ে রবির কাথ ধরে এক হাত দিয়ে রবির থুতনি থরে উচু করে বললো।
..কি হয়েছে ভাই এমন পেচার মত মুখ বানিয়ে রেখছিস কেনো?
আমার জন্য মা তোমাকে মারলো আবার বকলো।তুমি বললে না কেনো যে আমার জন্য সব হয়েছে। আবার আমাকেও বলতে দিলেনা ইশারায় না করলে।বললে তো আর তোমাকে বকা খেতে হতোনা।
নূর একটা ফেক মুচকি হাঁসি দিয়ে বলল।
আরে এসব কিছুনা, এগুলো তো রোজই হয়।এসব আমার সয়ে গেছে। আর তুই মন খারাপ করিস না মা বাবারা যেমন সন্তানদের ভালোবাসে তেমন কোনো ভুল পেলে তাদের শাসন করার অধিকারও আছে বুঝলি। এখন মন খারাপ করিস না কেমন।তুই মন খারাপ করে থাকলে আমার একদম ভালো লাগে না।তুই জানিস না।
যত যাই বলোনা কেনো আপু,ওই ঘষেটি বেগম আমার মা হলেও ওই মহিলাকে আমার একদমই পছন্দ না।
এসব কি কথা রবি উনি তোমার মা। আর গুরুজনদের নিয়ে এসব বলতে নেই।
হুহহ..গুরুজন না ছাই। আমাকে খালি ওই নিনাকে পটিয়ে গার্লফ্রেন্ড বানাতে দেও। তারপর বিয়ে করে এই বাড়িতে আনলেই ব্যাস ঘষেটি বেগমের দিন শেষ। তারপর বুঝবে কত দুধে কত হরলিক্স।😎
রবির কথা শুনে তো নূর থ হয়ে গেছে। ক্লাস ফাইবে পড়া ছেলের মুখে এমন কথা শুনে বিস্ময়ে কাশি উঠে গেছে। কোনো রকমে কাশি থামিয়ে বললো।
এসব কি বলছিস ভাই।
আরে ঠিকই বলছি আপু। তুমি ওই নিনাকে চিনোনা,এক নম্বরের ঝগরাটে। ওকে দেখে ডাইনি কটকটিও ভয় পেয়ে বনবাসে চলে যাবে।তাহলে ভাব এই মহিলার কি অবস্থা করবে।আমার তো ভেবেই সেই মজা লাগছে।
নূর হালকা ধমকের সুরে বললো।
রবি তুমি এখন অনেক ছোট মাত্র এগারো বছর বয়স। এসব কথা বলা একদম ঠিক না। তুমি যাও পড়তে বসো।
রবি আর কিছু না বলে চলে গেল ওখান থেকে।
নূর আবার কিচেনে গিয়ে চুলায় আবার চায়ের পানি তুলে দিল।
নূর ভালো করেই জানে রবি এসব কথা ওকে বলেছে ওর মন ভালো করার জন্য। কিন্তু ওকে কিভাবে বুঝাবে যে,নূরের কাছে এসব এখন ভাতমাছ। এগুলো আর ওর গায়ে লাগেনা। এসবকিছুর অভ্যাস হয়ে গেছে। হবেইবা না কেন এগুলো তো আর নতুন না ছয় বছর বয়স থেকে এসব সয়ে আসছে ও।
নূর ভাবছে ছোট মা তো ঠিকই বলেছে। আমি আসলেই একটা অপয়া। তানা হলে কি আমার সাথে এসব হয়।
জন্ম নিতেই মা আমাকে একলা করো চলে গেল।বাবাও আমাকে দেখতে পারেনা।আর সবার মত সেও মনে করে আমার জন্যেই মা মারা গেছে। আমাকে দেখলেই তার রাগ লাগে। এজন্য আমিও ভয়ে তার সামনে যাইনা।একমাত্র দাদিই ছিল যে আমাকে ভালোবাসতো, আমাকে আদর করতো। আমি তার কাছেই বড় হয়েছি।কিন্তু সেই সুখও আমার কপালে বেশিদিন টিকলো না।ছয় বছর বয়সে দাদিও আমাকে একা করে চলে গেল। আর সেদিন থেকেই শুরু হলো আমার এই দুর্বিষহ জীবন।
শুনেছি মা মারা যাবার তিন মাস পর দাদি আমার কথা ভেবে বাবাকে আবার বিয়ে করান।কিন্তু দাদি কি আর জানতো, যার ভালোর জন্য এটা করছে সবচেয়ে বেশি কষ্ট সেই পাবে।
দাদি যতদিন বেচে ছিল ততদিন সব ঠিকই ছিল।ছোট মা আমাকে আদর স্নেহ করতো, আমিও তাকে নিজের মায়ের মতই ভালোবাসতাম।কারন আমার জন্মের পর তাকেই মায়ের রুপে দেখেছিলাম।বাবা আমাকে দেখতে না পারলেও কখনো বকা দিতনা। শুধু আমাকে তার সামনে যেতে মানা করতো। যদিও বাবা ব্যাবসার কাজে বেশির ভাগ দিন বাইরেই থাকে। তাই আমারও তেমন সমস্যা হত না।কিন্তু যেদিন থেকে দাদি মারা যায় সেদিন থেকেই ছোট মার ব্যাবহারে পরিবর্তন শুরু হয়।
আমাকে আর আগের মত ভালোবাসতো না আদর করতো না।বরং আমি কাছে গেলেই ধমকানো আর মারা শুরু করলো।ধীরে ধীরে আমাকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করানো শুরু করলো।আমি অনেক কান্না করতাম কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না বললেই ছোট মা মারতো।বাবার কাছেও বলার উপায় ছিল না কারন বাবা তো আমাকে এমনিতেই দেখতে পারতো না।
তারউপর ছোট মা আমাকে হুমকি দিতো।বাবাকে যদি কিছু বলি তাহলে আমাকে আরও মারবে।আমিও ভয়ে কিছু বলতাম না। বাবা মাকে তার বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে এসে পালিয়ে বিয়ে করেছিলো।তাই নানা আর মামা মায়ের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন। একারণে নানা বাড়িরো কোনো আশা ছিলোনা।
এভাবেই দিন যেতে থাকে প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হত একা একা কান্না করতাম। ধীরে ধীরে এসব অভ্যাসে পরিণত হয়েযায়।আর আমিও বুঝে যায় যে এটাই আমার জীবন। এভাবেই আমাকে বাচতে হবে।
ARIF2220
تبصرہ حذف کریں۔
کیا آپ واقعی اس تبصرہ کو حذف کرنا چاہتے ہیں؟