শেষ বিকেলের আলো
ছেলেটার নাম ছিল রবিন। শহরের কোলাহল থেকে একটু দূরে, ছোট্ট এক গ্রামে তার বাস। প্রতিদিনের মতো সেই বিকেলেও রবিন মাঠে গরু চরাতে গিয়েছিল। তবে আজকের বিকেলটা অন্যরকম ছিল। আকাশটা একটু বেশি লাল, বাতাসে কেমন একটা বিষণ্ণতা। যেন প্রকৃতিও আজ কাঁদছে চুপিচুপি।
রবিনের মা গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডাক্তার বলে দিয়েছে—"জলদি শহরের বড় হাসপাতালে নিতে হবে।" কিন্তু গরিব কৃষকের ছেলে রবিনের পক্ষে সেটা করা সহজ ছিল না। তার বাবা তিন বছর আগে হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় মারা যান। তারপর থেকে মা-ই ছিল তার পৃথিবী।
রবিন মাঠে বসে গরুগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিল। সে জানে, এই গরুগুলোর একটাকেও বিক্রি না করলে তার মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগানো সম্ভব নয়। কিন্তু এই গরুগুলোই তো তাদের সংসারের ভরসা। বিক্রি করলে তারা খাবে কী?
হঠাৎ তার পাশে এসে দাঁড়াল রফিক কাকু—পাড়ার ধনী লোক। রফিক কাকু জানে রবিনের কষ্টের কথা। তিনি একটা প্রস্তাব দিলেন—"তোর গরুর সবচেয়ে বড়টাকে আমি কিনে নিচ্ছি। দামও ভালোই দিবো। তবে একটা শর্ত—তুই আমার দোকানে সাহায্য করবি মাঝে মাঝে।"
রবিন একটু চুপ করে থাকল। মায়ের মুখটা মনে পড়ল—অসুস্থ, কিন্তু সবসময় হাসিমাখা। সে বলল, "ঠিক আছে কাকু, আমি রাজি। শুধু মা'কে সুস্থ দেখতে চাই।"
পরদিনই গরুটা বিক্রি হলো। সেই টাকায় মাকে শহরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার বলল, "ভালো সময়ে এনেছো, এখনো চিকিৎসা করা সম্ভব।"
দুই সপ্তাহ পর মা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এলেন। গ্রামের মানুষ সবাই রবিনকে বাহবা দিল। সে হাসল—একটা শান্ত, তৃপ্তির হাসি।
বিকেলের রোদ পড়ে আসছিল। সেই রোদের নিচে দাঁড়িয়ে রবিন ভাবছিল, “সব হারিয়ে ফেলার ভয় যদি না থাকত, তাহলে হয়তো এই ভালোবাসার মূল্য আমি কখনো বুঝতা না!