অধ্যায় ৪: আগ্রার অন্ধকার রাত
১৬২৮ সালের জানুয়ারি।
আগ্রা দুর্গ রাতের অন্ধকারে নিমগ্ন, কিন্তু অন্ধকারের মধ্যেই আলোচনার, ষড়যন্ত্রের, আর বিশ্বাসঘাতকতার সুর।
রাজদরবারে কাল সকালে বসবে বিশেষ সভা।
নূরজাহান ঠিক করেছেন—শাহরিয়ারকে সম্রাট ঘোষণা করা হবে। আগেই মহাফাজখানার কাগজ প্রস্তুত, দরবারি কবি গান লিখে রেখেছে, এমনকি সোনার মুদ্রাও ছাপানো শুরু হয়েছে যেখানে লেখা:
“আলমগীর শাহরিয়ার বাদশাহ গাজী।”
কিন্তু সে রাতেই কিছু বদলে যেতে শুরু করে।
🌙 রাত—তিনটা।
গুলনওয়াজ বেগম একদম নিঃশব্দে বেরিয়ে পড়েন তার ঘর থেকে। তার পরনে এক সাধারণ দাসীর কাপড়। কাঁধে গায়ের চাদর। হাতে একটি ছোট খাকি থলে। ভিতরে কী আছে, কেউ জানে না।
তিনি সোজা চলে যান হারেমের পিছনের বাগানে—যেখানে এক বুড়ি দাসী অপেক্ষা করছে।
“চিঠি পৌঁছে গেছে?” গুলনওয়াজ ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলেন।
দাসী মাথা নাড়ল।
“আরো কিছু লোক প্রস্তুত আছে। কাল ভোরের আগেই দরবারে ঢুকবে।”
গুলনওয়াজ কেবল বললেন, “ভালো। ইতিহাসের দরজা খুলতে চলেছে।”
🌑 ভোরের ঠিক আগে।
নূরজাহান রাজসিংহাসনের পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। শাহরিয়ার নতুন পোশাক পরে প্রস্তুত।
সবই সাজানো।
কিন্তু ঠিক তখনই, দরবারের উত্তর দরজা খুলে যায়। ঢুকে পড়ে ঘোড়সওয়ার দল। তাদের নেতৃত্বে এক উজ্জ্বল পোশাকে, মাথায় পাগড়ি বাঁধা, তলোয়ার হাতে একজন পুরুষ।
খুররম।
নূরজাহানের চোখ ছানাবড়া।
“এটা অসম্ভব…” তিনি ফিসফিস করে ওঠেন।
খুররম সোজা এসে সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন,
“আমি দাক্ষিণাত্য ছেড়ে এসেছি শুধু একটি নামের ডাকে।
একটি ছায়ার কাছে আমি ঋণী।
আজ আমি মুঘল সাম্রাজ্যের অধিকার দাবি করছি—নিজের শক্তিতে, আর তার প্রজ্ঞায়।”
চোখে চোখ পড়ে গুলনওয়াজের। তিনি দরবারে নেই, কিন্তু একটি বারান্দা থেকে সব দেখছেন।
নূরজাহান বুঝতে পারেন—সব শেষ।
শাহরিয়ার কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়। আসাফ খানও খুররমের পাশে দাঁড়ান।
রাজদরবারে বাজে শঙ্খ।
ঘোষণা হয় নতুন সম্রাটের নাম:
আবু আল-মুজাফফর শাহাবউদ্দিন মুহাম্মদ শাহজাহান।
🌤 সেই রাতের পরে
গুলনওয়াজ আবার ফিরে যান নিজের ঘরে। দাসীরা এসে মাথায় সোনা মুকুট পরাতে চায়। তিনি থামান।
“আমি সিংহাসনের জন্য কিছু করিনি,” তিনি বলেন।
“আপনি তো সম্রাজ্ঞীর ছায়া,” এক দাসী কাঁদতে কাঁদতে বলে।
গুলনওয়াজ মৃদু হাসেন।
“ছায়ারা কখনও শিরোপা চায় না।
তারা শুধু নিশ্চিত করে যে শিরোপা সঠিক মাথায় পড়েছে।”
📖 [পরবর্তী অধ্যায়: বিজয় ও বিস্মৃতি] – শাহজাহান তার রাজত্ব শুরু করেন, কিন্তু গুলনওয়াজ হারিয়ে যান ইতিহাসের পাতার আড়ালে। কেন? কী হয় তার পর?
লিখে দেবো? ✍️