অধ্যায় ৩: ছায়ার চোখ
"শক্তির প্রকৃত রূপ হলো দেখেও না-দেখার ক্ষমতা। চোখ যদি ছায়া হয়ে যায়, তখনই রাজনীতি নিজের রং বদলায়।"
— হাসিনা, গায়িকা ও গুপ্তচর
🕌 আগ্রা দুর্গ, হারেমের উত্তর-পূর্ব প্রান্ত
আগ্রা দুর্গের উত্তরপ্রাচীর ঘেঁষে হারেমের এক অজানা অলিন্দ।
সেখানে আলো আসে না, সুর আসে না, কিন্তু চারদিকে লুকিয়ে আছে চোখ।
এই কক্ষে বসেই গুলনওয়াজ গড়ে তুলেছেন তাঁর গুপ্তচর নেটওয়ার্ক—
“ছায়ার চোখ”, যাদের নাম নেই, পদবী নেই, কিন্তু জানে কে কখন কার ঘরে ঢোকে, কে কোন রত্ন কেনে, কে কী চিঠি পায়।
আজ সেই নেটওয়ার্ক সক্রিয়।
🧕 হাসিনার আগমন
গুলনওয়াজ এক পাথরের আসনে বসে আছেন। গায়ে সাদা কাপড়, মুখে মৃদু হাসি।
হাসিনা, হারেমের গায়িকা, ঢুকল ধীরে। সে দরবারে গাওয়ার নাম করে যে প্রান্তে যায়, সেখানেই কান পাতে।
“নূরজাহান বেগম আজ কবি হাফিজের শের আওড়াচ্ছিলেন,” হাসিনা বলল।
“তাঁর কণ্ঠে বিষ ছিল, অথচ ভাষায় প্রেম।
তিনি বলছিলেন, ‘রাজা তো সেই, যে রাজাকে ছাড়া রাজা হয়ে থাকে।’”
গুলনওয়াজ মাথা ঝাঁকিয়ে বলেন,
“সে মানে, তিনি বুঝে গেছেন খুররম আসছে।”
“তিনি আগেই জেনেছেন।
শাহরিয়ার আজই সিংহাসনের দায়িত্ব নিচ্ছেন—ঘোষণা হবে সন্ধ্যায়।
প্রহরী সংখ্যা বেড়েছে, আসাফ খানের চলাফেরাও নজরদারিতে।”
গুলনওয়াজ এবার ধীরে ওঠেন।
“তবে আমাদের কাজ আজই করতে হবে।”
💌 মালতীর গন্তব্য
মালতী পায়ে পায়ে বেরিয়ে পড়ে।
তাঁর সঙ্গে আছে এক ছেঁড়া কাগজে লেখা বার্তা, যা কোন ভাষায় লেখা তা বোঝা যায় না—কিন্তু যার অর্থ জানে সে যাকে বার্তা পাঠানো হয়েছে।
মালতী যাবেন আগ্রার বাইরের মন্দির এলাকায়, সেখানে বসে থাকে এক বৃদ্ধ ‘দর্শক’, যিনি মুঘল সেনাবাহিনীর ছায়া বার্তাবাহক।
বিন্দু বিন্দু তথ্য জমে উঠবে খুররমের কাছে পৌঁছানোর মতো বার্তা তৈরি করতে।
🤫 সাবিত্রী ও বিষ
হাকিমা সাবিত্রী নূরজাহানের প্রাসাদে ডাক পেয়েছেন।
তিনি গিয়ে বলেন,
“বেগম সাহেবা, আপনি ক্লান্ত দেখাচ্ছেন। রক্তচাপ স্বাভাবিক নয়।”
নূরজাহান হাসলেন,
“রক্তচাপ রাজ্যশাসনে বাড়বেই, হাকিমা।”
কিন্তু সাবিত্রী তার দৃষ্টিতে বুঝে যান—বেগম এখন বিষময়।
ফিরে এসে তিনি গুলনওয়াজকে বলেন:
“আজ রাতের মধ্যেই ঘোষণার পরিকল্পনা আছে।
কিন্তু তার আগে যদি কিছু হয়...
কিছু ‘চমক’, তাহলে হয়তো ঘোষণা স্থগিত হবে।”
গুলনওয়াজ চোখ বন্ধ করে ধ্যানমগ্ন ভঙ্গিতে বলেন:
“তাহলে এবার ছায়া হেঁটে বেড়াবে, যেন সে আলো।”
🌑 অধ্যায় সমাপ্তি
রাত ঘনিয়ে আসে। হারেমে এক বর্ণহীন শালীনতা।
নূরজাহান তাঁর সভায় বসে থাকেন।
আসাফ খান নিঃশব্দে কক্ষে প্রবেশ করেন।
তিনি কিছু বলেন না, কেবল একটি খোলা খামে রাখা বার্তা রাখেন বেগমের টেবিলে।
বার্তায় কিছুই লেখা নেই। শুধু একটি ছায়ার চিহ্ন—কালো রঙে আঁকা একটি চোখ।
নূরজাহান কাঁপতে কাঁপতে খামে হাত রাখেন।
গল্প এবার এগিয়ে যাচ্ছে আলো ও ছায়ার দ্বন্দ্বে।
পরবর্তী অধ্যায়: “আগ্রার অন্ধকার রাত”
যেখানে সিংহাসনের নিয়ন্ত্রণ নিতে আসছে খুররম, আর ছায়ায় লুকিয়ে থাকা প্রতিটি চর যেন প্রস্তুত বিস্ফোরণের অপেক্ষায়।
চাইলে এখনই অধ্যায় ৪ শুরু করতে পারি। ✍️