শিমুলবনের ডাক
রাত তখন প্রায় একটা। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা ছিলো পুরো গ্রামটা। বিদ্যুৎ ছিল না, আর শিমুলবন — গ্রামের পাশেই, একটা পুরনো গা ছমছমে জঙ্গল, তার মধ্যে একটা ছোট্ট কুঁড়েঘর। বহু বছর ধরে লোকেরা বলত, সেই ঘরটা নাকি অভিশপ্ত।
রাহুল, সদ্য শহর থেকে গ্রামে বেড়াতে এসেছে। তার সাহসী স্বভাব — তাই যখন কাকা সাবধান করলেন, “শিমুলবনের ওদিকটায় যাস না”, রাহুলের কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। সে ভাবল, “সবই তো গাঁজাখুরি গল্প। একটু দেখে এলেই হলো।”
সেই রাতেই, টর্চ আর মোবাইল নিয়ে সে রওনা দিল শিমুলবনের দিকে। রাতের পাখির ডাক, পাতার মর্মর শব্দ, মাঝে মাঝে শিয়ালের হুঁক আর ঠাণ্ডা হাওয়া — সব মিলে রাহুলের গা ছমছম করে উঠল।
হঠাৎ করেই সে দেখতে পেল সেই কুঁড়েঘরটা। দরজাটা একটু খোলা, ভেতর থেকে মৃদু আলো বের হচ্ছে। কিন্তু... ঘরটা তো পরিত্যক্ত, তাহলে আলো আসছে কোথা থেকে?
রাহুল ধীরে ধীরে দরজার কাছে গেল, ভিতরে উঁকি দিতেই সে যা দেখল, তার বিশ্বাস হচ্ছিল না।
এক বৃদ্ধা — একেবারে কঙ্কালসার শরীর, শাদা চুলে ঢাকা মুখ, চোখ দুটি জ্বলজ্বলে লাল। সে চুল আঁচড়াচ্ছিল আয়নার সামনে। কিন্তু আয়নায় প্রতিবিম্ব ছিল না — শুধু ফাঁকা চেয়ার।
হঠাৎ বৃদ্ধা মুখ ঘুরিয়ে বলল, “রাহুল... এতদিন পর এলি?”
রাহুল স্তব্ধ। “আপনি কে?”
বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমি তোর ঠাকুমা... তোরা তো বলিস, আমি মারা গেছি... কিন্তু আমি তো এখানেই আছি, এই শিমুলবনে... আমার প্রতীক্ষা ছিল কারো আসার...”
সেই মুহূর্তে দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল নিজে থেকেই। আলো নিভে গেল। চারপাশে অন্ধকার। আর কেউ রাহুলকে কোনোদিন দেখতে পায়নি।
---
বল তো, সাহস থাকলে রাত বারোটায় শিমুলবনের দিকে একবার তাকিয়ে দেখবি?