চাঁদের হাসিতে আগাম শুভেচ্ছা ও সল্প কিছু কথা:
যখন ঈদের চাঁদ আকাশে ওঠে, তখন অনেকের ঘরে আলো জ্বলে কিন্তু অনেক ঘর তখনও আঁধারেই থাকে। আমরা গরুর ছবি পোস্ট দিচ্ছি, দাম বলে গলা চড়িয়ে গর্ব করি, অথচ পাশের ঘরের এতিম শিশুটি এখনও নতুন জামার স্বপ্ন দেখে চোখ মুছে।
এক বিধবা মা চুপচাপ তাকিয়ে থাকেন, চুলায় আগুন নেই, হৃদয়ে আশা নেই, পাশে কেউ নেই।
আমরা বড় গরু কোরবানি দিচ্ছি, আর সেই দানে অহংকার করি।
তবে জানি কি, আল্লাহর কাছে বড় গরু নয়, বড় হয় হৃদয়ের বিশুদ্ধতা? আপনি কাকে হাসালেন, কাকে আগলে রাখলেন, কাকে ভালোবাসলেন, এই হিসাবই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মূল্যবান।
ঈদের নামাজ শেষে যখন আমরা কুলাকুলি করি, তখন ধনীরা ধনীর সাথেই কুলাকুলি করে।
আর গরিবরা?
তারা দাঁড়িয়ে থাকে দূরে, লজ্জায়, নিঃস্বতায়, সমাজের এই নির্মম ব্যর্থতায়।
ঈদের দিনে একটিবার ভাবুন, যদি আপনার সন্তান নতুন জামা না পায়? যদি সে কোণায় বসে অন্যদের খুশি দেখে কাঁদে? তাহলে আপনার বুকটা কেমন ভেঙে যেত?
এই অনুভব যদি আপনার হৃদয়ে জেগে ওঠে, তবে আপনি বুঝতে পারবেন ঈদের প্রকৃত শিক্ষা কী।
আসুন, এই ঈদে কিছু ভিন্ন করি।
এই ঈদ হোক:-
🧚🏼প্রদর্শনের নয়, প্রেম ও পরস্পরের প্রতি দায়িত্বের প্রতিফলন।
🧚🏻 অহংকারের নয়, আত্মত্যাগ ও সহানুভূতির বার্তা।
🧚🏻বড় গরুর ছবির নয়, ছোট মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর প্রতিযোগিতা।
🧚🏻ঈদের খুশি হোক এমন এক মুহূর্ত, যেখানে দান হয় গোপনে, সম্মান হয় প্রকাশ্যে।
ঈদের নামাজ শেষে আমরা সাধারণত কুলাকুলি করি নিজেদের মতো মানুষদের সঙ্গে, যারা আমাদের মতো পোশাক পরে, আমাদের মতো দেখতে, কিংবা যাদের সামাজিক অবস্থান আমাদের সমান কিংবা বড়।
কিন্তু সেই গরিব মানুষটা?
সে চুপচাপ চলে যায়, কারণ সে জানে, তাকে কেউ জড়িয়ে ধরবে না। কারণ সে বোঝা, সে ক্ষুধার্ত, সে তুচ্ছ এই সমাজের চোখে।
চলো এবার একটু বদলাই।
চলো এই ঈদে এগিয়ে আসি সেই মানুষের দিকে, যাকে সবাই এড়িয়ে চলে।
জড়িয়ে ধরি সেই ভাইকে, যার শরীরে নতুন কাপড় নেই, কিন্তু আছে একটি ভাঙা হৃদয়ের বিশুদ্ধ দোয়া।
কপালে চুমু দিই সেই শিশুটির, যার ঈদ মানেই কান্না।
* কারণ একটা বু*লেট মিস হতে পারে, কিন্তু গরিবের হৃদয়ের দোয়া মিস হয় না।
* কারণ আসল ঈদ হয় সেইখানে, যেখানে কেউ কাউকে কাঁদতে দেয় না।
আর কোরবানির পর…
মাংস শুধু দরিদ্রকে নয়, দিন আপনার আশেপাশের মধ্যবিত্ত পরিবারকে।
তাদের মাঝে অনেকে এমন আছেন, যারা মুখ ফুটে কিছু বলেন না, কিন্তু ভেতরে ভাঙা কষ্ট লুকিয়ে রাখেন।
তারা সমাজের চোখে “ভদ্রলোক” হয়ে থাকেন, কিন্তু বাস্তবে হয়তো তিনদিন মাংসের স্বাদ পান না। তাদের সাহায্য করুন, সম্মানের সঙ্গে, ভালোবাসার সঙ্গে। তারা হয়তো একসময় বিত্তবান ছিল, আজ সময়ের ফেরে কষ্টে আছে।
সাহায্য এমনভাবে দিন, যাতে তারা কখনো অপমানিত না হন।
কারণ তাদেরও দোয়া আছে, শ্রেষ্ঠতম দোয়াগুলোর একটি।
এই ঈদে প্রতিশ্রুতি হোক, আর কোনো শিশু কাঁদবে না, আর কোনো মা খালি চুলায় বসে থাকবেন না।
এই ঈদ হোক সত্যিকারের ঈদ, যেখানে সবাই হাসবে, সবাই পাশে থাকবে, সবাই মানুষ হয়ে উঠবে মানুষের জন্য।
ঈদ মোবারক।
ভালোবাসা হোক হৃদয় থেকে, আর উৎসব হোক সবার জন্য।