"নীলাবরণে প্রণয়পত্র"
আমি নিশ্চিত নহি, কবে হইতে প্রারম্ভ,
হয়তো সেই ক্ষণে, প্রথম দর্শন-মধ্যাহ্ন! শিক্ষাগৃহ-সোপানে হঠাৎ তাহার আগমন,
হৃদয় আমার প্রথম দৃষ্টিতে বিপর্যস্ত-মগন।
তাহার কিছুই জ্ঞান নহে, জানিতে কী প্রয়োজন?
আমার কামনা সে নহে জানুক, যে দৃষ্টি রাখি গোপন!
সে ফলকে অঙ্কে নিমগ্ন, হায়,
আমি খাতার পার্শ্বে চিত্রি তাহার মুখ, নিভৃতে নিরালায়।
যখন সে হাসে, গৃহময় আলোকে ঝলমলায়,
তথাপি শির নত করি—যেন নহে কিছু পরিপাশ্র্বে তায়! অন্তরে চিন্তি, একদিন কহিব নয়নে নয়ন রেখে—
"তব প্রতি প্রীতি মম”—কম্পিত কণ্ঠে, ক্ষণিক দৃষ্টি দেখে।
কিন্তু আমি সক্ষম নহি, হায়—
ভীতি জাগে, যদি সে হাসিয়া তুচ্ছ করে মম ব্যথায়! আমি এমনই—গোপনে ধরি প্রীতির আকাঙ্ক্ষা,
ক্ষুদ্র দৃষ্টিতে গঢ়ি প্রেমের গিরি, নিভৃতে নির্জনতায়।
তাহার নাম জানি, তথাপি কখনও আহ্বান করি নাই, আহ্বানে কি সব বিপর্যয় ঘটিত? হয়তো নহে, হয়তো তথাপি!
তাই নীরবে বসি, শিক্ষাগৃহের গবাক্ষ-পার্শ্বে একাকী,
সে আগমন করে, প্রস্থান করে, মম হৃদয় হাহাকারে হাসে নিরবধি তায়।
একদা দৃষ্টি পড়ে—তাহার নয়ন অন্যত্র নিবিষ্ট, শিক্ষাগৃহের অগ্রসারির কন্যার হাস্যমুখে আকৃষ্ট!
যে আলোক তাহার নয়নে আমি প্রতিদিন অন্বেষিতাম, তা তাহার হাসিতে প্রতিফলিত দেখি, বিনিময়বিহীন তথাপি তাম।
তাহার পার্শ্বে দণ্ডায়মানা কন্যা হাসিয়া কিছু কহে,
আর সে? শ্রবণ করে, শির নত করিয়া সম্মতি প্রকাশে। আমি নীরবে বসি, পুস্তক-পত্রে নয়ন নিবদ্ধ রাখি,
অন্তর কম্পিত, তথাপি বাহ্যে প্রকাশি কেবল নির্লিখিত দুঃখী।
সেদিন উপলব্ধি করিয়াছিলাম—সকল প্রীতি প্রকাশ্য নহে,
কতিপয় প্রণয় কেবল নীরবে অন্তরে সংনাদিত রহে! কিছুই না কহিয়াছি, আরও নহি কহিব,
কারণ সে অন্য কাহোর রূপকথাতে ব্যস্ত, নহে কি তাহা সত্য?
তথাপি, প্রতিদিন যখন সা আগমন করে মম স্মৃতিতে,
মম হৃদয়ে গূঢ় শোক নীরবে ক্রন্দতি একান্তে!
নাহি কিছু কামনা করি এখন, কেবল কামনা এই—
যদি তাহার নয়ন মম নয়নে নিরীক্ষে, ক্ষণিক দৃষ্টি ধরি।