প্রিয় বাবা
একটা ক্লান্ত শখ বয়ে বেড়াচ্ছি সেই কবে থেকেই,
যেদিন হতে শিখেছি—বাবারা বৃদ্ধ হয়-
শৈশবের সব আহ্লাদ আপনাআপনিই দাফন হয়েছে মনে,
শুধু থেকে গেছে বড় হয়ে সংসার কর্তা হওয়ার শখ,
অনিচ্ছাকৃতই।
সদ্য প্রস্ফুটিত কলির মতোই উথলে উঠা যৌবনে,
বাবার জীর্ণ চোখ আমায় জানিয়েছে—
সন্ধ্যা হলেই ভরা যৌবন প্রাপ্ত ফুলও ঝরে পড়ে।
তবে,
আরো আগেই দিনের আলোয় ম্রিয়মাণ হয়ে যায় তার ঘ্রাণ, যদি তাকে কেড়ে নেওয়া হয় গাছ হতে—
বাবার বৃদ্ধ বয়সের ভার যেন সেই কেড়ে নেওয়া,
যা একাধারে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে
আমার নিশ্চিন্ত হৈ-হুল্লোড় পূর্ণ বিকেল আর
রাত আটটায় টিভিতে প্রচারিত আহাদ সিরিয়াল।
ক্রিকেট খেলার বলটাও হারিয়ে পড়ে আছে কোনো এক নর্দমায়।
এখন আর বিকেল হলে বাবার হাত ধরে খেলনার দোকানে যাওয়া হয় না, চকলেটের লোভে রাস্তায় গড়াগড়ি খাওয়া হয় না।
বাবাও আর আগের মতোন পিঠে দু'ঘা লাগিয়ে দেন না।
আমি দেখি—ক্রমশ বাবার শখ্যতা হসপিটালের বেডের সাথে গড়ে উঠছে...
আমার আর তার বুকে ঘুমানো হচ্ছে না।
সেদিন হতেই আমি ক্লান্ত মনে হাঁপিয়ে নিঃশ্বাস ফেলছি বালিশে, আর বয়ে বেড়াচ্ছি বাস্তবতার কর্কশ স্বর,
শুধু একটা আহ্লাদ জিইয়ে—
একদিন সন্ধ্যায় বাবা ফের হাতের আঙ্গুল ধরে ঘুরাবে
খেলনা দোকানে।
“প্রিয় বাবা,
তোমার ছেলে এখনো তোমার কাছে বায়না করে—
অসুস্থতা ঝেড়ে ফেলে একবার ছেলেকে নিয়ে চলো কোনো নদীর পাড়ে।
একবার নাহয় সেই পিঠে জোরে দুটো ঘা বসিয়ে
বুকে জড়িয়ে ধরো।