স্মৃতির প্রহর
এ
আজিজুর রহমান
২৯তম পর্ব হারিকেন রোড, গাজীপুর
শীতের আগাম বার্তা শিশিরের উষ্ণ ছুঁয়ায়, ঘাসের ডগাই লেগে থাকা কুয়াশার বিন্দুর সাথে মনটা সুর সুর আনন্দ অনুভব করছি।
বৈকালিক ভ্রমনে মন্দ লাগেনি। দক্ষিন দ্বারের বায়ু উন্মুক্ত। সূর্য ধীর ধীরে আকাশের গাঁয়ে বিলিনের পথে। গদাধর ডাংগীর পূজা মন্ডবের যতই কাছে আসছি ঢোলের শব্দ ততোই ভারী হচ্ছে।
মনাই দাদা ভাই কার কাছে আসছেন।
হাসান বেশ কিছুক্ষন নিরব থেকে বললো আপনার গাঁয়ে বেড়াতে আসতে নিষেধ আছে নাকি ভাই ?
না নিষেধ থাকবে কেন , তবে জানতে ইচ্ছে করলো তাই !
নবনীতাকে চিনেন ?
চিনি বৈকি ?
অবশ্যই চিনি আমাকে বেশ আদর করে।
নবনীতা দিদি অনেক ভালো মনের মানুষ ?
ওনার কাছে যাচ্ছেন বুঝি।
বিজয় দশমীর বির্জনের দিনে আসতে বলেছে তাই আসতে একটু রাত হয়ে গেলো ।
তবে সন্ধ্যায় কেন ?
গাড়ীর পথ ! কেমন করে সন্ধ্যা লেগে গেলো পথে।
আপনি কি আবার এই ঘাটে রেখে যাবেন আমাকে দয়া করে। এ কেমন কথা বলেন দেখি আসছেন বলে আপনাকে বিপদে রাখবো কেন।
ধূপের গন্ধ আর ঢাকের ধ্বনির নিকট বর্তি হচ্ছি যত,
মনটা ততোই ভালবাসার শিহরণে শরীরটা অবশ হয়ে যাচ্ছে।
মন সব বুজে শুধু অপেক্ষা বুজে না। বাতাসে ভেসে আসছে হাসনা হেনা বেলি ফুলের ঘ্রান। ঝিঝি পোকাড় শব্দ মিলে গেছে কাসা আর ওলু ধ্বনির সাথে।
অপেক্ষার ফিড়িতে বসে মনে মনে হাসান বাবুকে খুজে ফিরছিল নবনীতা। সন্ধ্যা পেরুতে বেশি বাকি নেই। গোধূলী লগ্নের আলো মিশে গেছে সন্ধ্যার আকাশে।
জীবন বড়ই নটোরব বিদায় বির্জনের দিনে আসতে ও বলা ঠিক হয়নি, শুধু শুধু কষ্ট চেয়ে নেওয়ার কি দরকার ছিল ?
মিনময় বৌদি শোন নবনীতা আজিকের আনন্দ আরতীর দিনে হাসান বাবুকে আসতে বলে।
নিজে নিজে কষ্টের মাঝে ঠেলে না দিলেও পারতে।
পথ সীমানায় বাঁধা থাকে মন কি তাহা বুজে।
সূর্য ক্রমশ পশ্চিম দিঘন্তে হারিয়ে যাওয়ার পথে।
চন্দ্র তোমার অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে দূয়ারে।
নবনীতা তবে বৌদি দেখ হাসান বাবু নিশ্চয় আসবে।
আমার বিশ্বাসের কোন'ই মুল্য নেই ঠাকুরের কাছে !
মিনময় ভালবাসা কি ? পোড়া মনের কথা কি বুজে।
ঠাকুরের পায়ে কত যে নয়ন জল ভাসিয়াছি তার
কোন হিসেব নেই বোন ।
ধীরে ধীরে সূর্য অস্তমিত হতে লাগিলো আর নবনীতা
তাহার বিশ্বাস বরফের মত গলে অশ্রু নদীর জলে ভাসিতে লাগিলো।
তাহাকে বাধা দেওয়ার মত সাধ্য কাহারো কেউ নেই,
শান্তনা দেওয়া মানে ? কষ্টো যেন দিগুন হয়ে দাড়ায়।
ততোক্ষনে চন্দ্রের আলো আটকে গেছে বড় বড় গাছের ছায়াতে। সুশীতল দক্ষিনা বাতাস হাতছানি দিয়ে ডাকে প্রিয়মুগ্ধ ভালবাসাকে।
নবনীতার মুখ বন্ধ, কোন কথায় বলছে না। মাত্র দুইজন মানুষ ! এর একজন এমন নিরব থাকলে
সময় যেন নিরবতার কাছে বন্দী হয়ে যায়।
বিষয়টা হাক্লা করার জন্য একা একাই বক বক করে
যাচ্ছে মিনময় দেবি ।
কোন কথা নেই নবনীতার মুখে।
বিশ্বাস বড় অসহায় এক বার ভেঙ্গে গেলে ?
সেখানে হয়তো সামাজিকতা থাকে,
কিন্তু ভালবাসা থাকে না।
এই পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে ? যারা অবলিলায় সংসার করে যাচ্ছে, কিন্তু অন্য কোন মানুষকে ভালবেসে।
ঢাকের শব্দ যতই নিকট বর্তি হচ্ছে বুকের ভিতরে শির শিরানী অনুভূতিটা বেড়ে চলছে।
চাঁদের মৃদু আলোতে দেখা যাচ্ছে নবনীতা আর বৌদিকে।
মনাই ব্যেন আস্তে আস্তে থামিয়ে দিল।
কেমন আছেন বৌদি ? এই সহজ সরল প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে থতোমতো খেয়ে গেলো।
এই তো ভাল ? কি হাসান বাবু ।
হ্যা বৌদি বিশ্বাস হচ্ছে না।
তা-ঠিক না, তোমার তো আর ও আগে আশার কথা।
তা ঠিক বৌদি !
খেয়া ঘাটে বসেছিলাম বেশ কিছুক্ষন !
মাঝি নৌকায় ছিল না। তাই সময় মত আসতে পারি নাই বলে ক্ষমা প্রার্থী।
নবনীতা ও কথা বলে আমাকে কষ্টো দিবে না।
এসেছে বলেই অনেক পূর্নের ব্যাপার।
অসহায় আকাশ শূন্যতা নিয়ে চলতে পারে না।
মেঘের ও শূক্লাথীতি আছে, আছে বিশূন্যতা হাজার মাইল পার হয়ে একদিন ---
ঠিকই ঝরে পরে কোন এক অজানায়।
জীবন মেঘের মত কি ? শুধুই উড়ে বেড়ায় নবনীতা।
সে কথা বলেনি হাসান বাবু।
শুধু অজানা একটা কষ্ট বয়ে বেড়ানোর যন্ত্রনা হল,
অপেক্ষা করা।
আজানের ধ্বনি শেষ হল, চারিদিক পাখির কলরবে
মেতে উঠলো ভুবন। দিনের আলোতে হারিয়ে যাওয়া
তারা গুলো জেগে উঠলো সন্ধ্যার মৃদু আলোতে।
সেই সন্ধ্যা তারা জানিয়ে দিলো তুমি এখনো ফিরোনি ।
মেয়ে হয়ে জন্ম নাওনি তো হাসান বাবু ?
সে তুমি বুজবে না।
একটা অজানা ভয় কাজ করছিল। পথে কোন বিপদ হল না তো, তবে দেরি হচ্ছে কেন ?
আমি অপেক্ষায় থাকি সব সময়। আর যে দিন
বুজেছি আমি তোমাকে ভালবাসি। আকাশ আর সাগরের কত মিল, হাজার হাজার বছর অপেক্ষার
অমিমাংসিত জীবন পার করে, তবুও অভিযোগ তুলে না।
নবনীতা ঠিক আছে হাসান বাবু, তবে যে আকাশ মেঘ বহন করতে যানে না
সে আকাশের রোদ ও উঠে না। হয় না ঝড়ের সৃষ্টি।
তাই সাগরের বুকে আকাশ খুজো না।
তোমার সাথে কথায় পেরে উঠবোনা হাসান, তবে একটা জায়গায় তোমাকে হারিয়ে দিব, সেদিন তুমি
খুজবে নবনীতাকে।
ফুল ফুটে ঝরে যায়, নতুন কুড়ির আসায় থাকে বৃক্ষ।
দিন মাসের ঘতানুগতা পরিবর্বতনে ফিরে আসবে
আজকের এই দিন তারিখ। কিন্তুু পৃথিবী কি থাকবে
এই সীমানায়। কত মানুষ নিখোঁজ থাকবে মনের আয়নায় । কত মুখ খুজে পাওয়া যাবে না এই গধাদর ডাঙ্গীর এই পূজা মন্ডবের আঙিনায়।
----------চলবে---------------
RB Siyam
মন্তব্য মুছুন
আপনি কি এই মন্তব্যটি মুছে ফেলার বিষয়ে নিশ্চিত?