“তুই ফিরবি বলে”
সেদিন ছিল কার্তিকের শেষ সপ্তাহ। হঠাৎ আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল, আর সেই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কাফি দাঁড়িয়ে ছিল রেলস্টেশনে। নয় বছর আগে ঠিক এই জায়গাতেই রওনা দিয়েছিল নীলা। বলেছিল, “তুই থাক, আমি ফিরবো।”
নীলা ছিল কাফির কলেজজীবনের বন্ধু, ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছিল প্রাণ। কিন্তু পরিস্থিতি, পরিবার আর সমাজ—তিনজনেই চায় না তারা একসাথে থাকুক।
নীলা বাধ্য হয়েছিল যেতে। কাফি সেদিন কেঁদেছিল অনেক, কিন্তু কিছু বলতে পারেনি।
প্রতি বছর এই দিনটায় কাফি রেলস্টেশনে যায়। একবারও দেখা হয়নি নীলার সাথে। কিন্তু সে আশা ছাড়েনি। এবারও সে গিয়েছিল, কাঁধে পুরোনো সেই ব্যাগ, আর হাতে লাল গোলাপ।
হঠাৎ পেছন থেকে এক কণ্ঠস্বর, “তুই এখনও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছিস।”
কাফি ফিরে তাকাল—নীলা!
চুলে হালকা পাকা, চোখের নিচে ক্লান্তির ছাপ, কিন্তু ঠোঁটের কোণে পুরনো হাসি।
সে বলল, “তুই জানিস? আমি কখনোই অন্য কারো হতে পারিনি। কিন্তু সাহসও পাইনি ফিরে আসার।”
কাফি বলল, “আমি জানতাম তুই ফিরবি। এজন্যই তো অপেক্ষা করে গেছি।”
তারা বসে পড়ল প্ল্যাটফর্মের এক কোণে। কাফি তার ব্যাগ খুলে দেখাল সেই চিঠিগুলো, যেগুলো সে প্রতি বছর লিখেছে—নীলার উদ্দেশ্যে, পোস্ট না করে জমিয়ে রেখেছে।
নীলা চোখ মুছতে মুছতে বলল, “তুই এখনো সেই কাফিই আছিস, না?”
কাফি বলল, “তুইই তো বলেছিলি, ‘ফিরে এলেই আবার শুরু করব’। আমি তো থামিনি।”
সেই বৃষ্টিভেজা প্ল্যাটফর্মে, কাফি আর নীলা আবার নতুন করে পথচলা শুরু করল।
এইবার আর কেউ তাদের আটকাতে পারবে না।