✨ পর্ব ২: বন্ধুত্বের শুরু
পরদিন ক্লাসে ঢুকেই রাহাতের চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছিল মিমকে। তবে মিম তখনও আসেনি। স্যার পড়াতে শুরু করেছেন, কিন্তু রাহাতের মন পড়ায় নেই। বারবার দরজার দিকে চোখ যায়। অবশেষে ঘণ্টাখানেক পরে মিম এল— হাতে বই, চুল এলোমেলো, হালকা দৌড়ে ক্লাসে ঢুকল।
রাহাত চুপ করে তাকিয়ে থাকল।
মিম তার পাশে নয়, একটু দূরের বেঞ্চে বসল। তবে সেই উপস্থিতি যেন পুরো ক্লাসের মধ্যে আলো জ্বেলে দিল রাহাতের কাছে।
ক্লাস শেষে করিডোরে দেখা হলো। সাহস সঞ্চয় করে রাহাত মিমের দিকে এগিয়ে গেল।
– “তোমার গানটা… মানে গতকাল… অসাধারণ ছিল।”
মিম হেসে বলল, “তোমার নাম?”
– “রাহাত। তোমার?”
– “মিম। কিন্তু তুমি তো জানোই বোধহয়!”
একটা ছোট্ট হেসে যাওয়া, দুজনের মধ্যে এক অদ্ভুত আরাম তৈরি করল। এই প্রথম, রাহাত তার মনের কথা গুছিয়ে বলার সুযোগ পেল।
সেই দিন থেকেই শুরু হলো ছোট ছোট কথাবার্তা। করিডোরে দেখা হলে একসাথে হাঁটা, ক্যান্টিনে দাঁড়িয়ে এক কাপ চা খাওয়া, কখনও বই নিয়ে আলোচনা, কখনও সেমিনার নিয়ে প্ল্যান।
মিম ছিল ভীষণ প্রাণবন্ত। সে হেসে কথা বলত, গল্প করত, মাঝে মাঝে রাহাতকে মজা করে ‘গম্ভীর কবি’ বলে ডাকত।
রাহাত মুগ্ধ হয়ে মিমের চোখে কথা বলার অভ্যাসে ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ছিল।
একদিন লাইব্রেরিতে বসে পড়াশোনা করছিল দুজনেই। হঠাৎ মিম রাহাতকে জিজ্ঞেস করল,
– “তুমি কখনো কাউকে ভালোবেসেছো?”
প্রশ্নটা শুনে রাহাত চমকে উঠল। থমকে গিয়ে বলল,
– “হয়তো… ভালোবাসা এখনো পুরোপুরি বুঝিনি। তবে কারো উপস্থিতি যদি প্রতিদিন মনের ভেতর আলো জ্বালায়, সেটাই কি ভালোবাসা না?”
মিম হেসে বলল, “তুমি তো আসলেই কবি।”
সেই দিন সন্ধ্যায় রাহাত তার ডায়রিতে লিখল:
“তার সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত যেন এক কবিতা। আমি জানি না এই অনুভবের নাম কী, কিন্তু জানি— এটা প্রতিদিন বাড়ছে।”
বন্ধুত্বটা এমনভাবে এগোচ্ছিল যেন তারা পরস্পরের জীবনে রঙ ভরছে অজান্তেই। কেউ কারো কাছে কিছু স্বীকার করছে না, অথচ দুজনেই একে অপরকে ছাড়া দিন কল্পনা করতে পারছে না।
ছুটির দিনে তারা কলেজের পেছনের গাছতলায় বসত, বাতাসে পাতার দোলায় কথা বলত। মাঝে মাঝে মিম চুপ করে থাকত, আর রাহাত তাকিয়ে থাকত তার মুখের দিকে।
একদিন মিম বলল,
– “তুমি কি জানো, তোমার চোখে কিছু আছে… যা চুপচাপ ভালোবাসে।”
রাহাত কেবল মৃদু হেসে বলেছিল, “তোমার চোখে আমি আমার গল্প খুঁজে পাই।”
তাদের বন্ধুত্ব তখনো ভালোবাসা হয়ে ওঠেনি, তবে প্রতিটি হাসি, প্রতিটি নিরবতা— আস্তে আস্তে এক সম্পর্কের গভীর ভিত তৈরি করছিল।
রাহাত জানত না ঠিক কখন, কিন্তু সে বুঝে গিয়েছিল— এই মেয়েটাই তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়ের শুরু।
পর্ব - ৩,,, আসতেছে,,